জুমবাংলা ডেস্ক : লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডে ১১ জন মাদারীপুরের বলে জানা গেছে। এদের সবার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। এছাড়া আহত মাদারীপুরের ৪ জন। নিহতদের লাশ আনার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা।
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার রাজন্দী দারাদিয়া এলাকার নিখোঁজ সিদ্দিক আকনের ছেলে আসাদুল আকন। আসাদুল আকনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ বাবা বিছানায় সন্তানের জন্য কাতরাচ্ছেন। মা শুভতারা বেগম বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বড় ভাই, বোন সবাই শোকে পাথর হয়ে আছেন। তাদের একটি দাবি আসাদুল যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে সরকার।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় মাদারীপুর জেলায় নিখোঁজ ১৩ জন ও আহত হয়েছেন ৪ জন। তবে প্রশাসন বলেছেন ১১ জনের তথ্য তাদের কাছে আছে। এদিকে মাদারীপুরে নিখোঁজ ১৩ জন ও আহত ৪ জনের কথা শোনা গেলেও কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যে ঠিকানা পাওয়া গেছে সেখানে গিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও নিখোঁজের পরিবারসহ একাধিক সূত্রে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের লিবিয়ার মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রাখে মানবপাচারকারী চক্র। এ নিয়ে একপর্যায়ে ওই চক্রের সাথে মারামারি হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এতে এক মানবপাচারকারী মারা যায়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যের সহযোগী ও স্বজনরা। ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে নিখোঁজ ও মৃত রয়েছে মাদারীপুরের ১৩ জন এবং আহত হয়েছে ৪ জন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া নিখোঁ’জ ১৩ জনের মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার জাকির হোসেন, সৈয়দুল, শামীম, জুয়েল ও ফিরুজের নাম রয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের পরিচয় নি’শ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের ব্যাপারে খোঁ’জ খবর নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নিখোঁ’জ আছেন রাজৈর উপজেলার বিদ্যানন্দী গ্রামের রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে জুয়েল হাওলাদার (২২), একই গ্রামের শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে মানিক হাওলাদার (২৮), নরারকান্দি গ্রামের আয়নাল মোল্লা ও মনির, ইশবপুরের আড়াই পাড়ার আনজু বেপারীর ছেলে সজীব বেপারী (২৩) ও দক্ষিণ গোয়ালদি কালাম মাতুব্বরের ছেলে শাহীন মাতুব্বর (২৪), বদরপাশার রাজন্দীর দারাদিয়ার সিদ্দিক আকনের ছেলে আসাদুল আকন (১৭), একই গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক খালাশীর ছেলে আব্দুর রহিম খালাশী (২৮)।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মাদারীপুরের ৪ জন। এরা হলেন মাদারীপুর রাজৈরের কদমবাড়ির মহিষমারী গ্রামের মোক্তার আলী শিকদারের ছেলে মোহাম্মদ আলী শিকদার (২২), রাজৈরের ইশবপুরের আড়াইপাড়া গ্রামের খলিল খালাসীর ছেলে মো. সম্রাট খালাসী (২৯), বদরপাশার পাঠানকান্দি গ্রামের নারায়ন চন্দ্র কায়েস্ত এর ছেলে সিতু কায়েস্ত বাপ্পী (২৫) ও সদর উপজেলার তীর বাগদি গ্রামের ফিরোজ বেপারী (২৫)। আহতরা লিবিয়ার ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের পাঠানকান্দি গ্রামের ছমেদ শেখের ছেলে দালাল নূর হোসেন শেখের ভাই আমীর হোসেন শেখ লিবিয়ার ত্রিপোলিতে থাকেন। রাজৈরের বদরপাশার যারা লিবিয়াতে আছেন তাদের সবাইকে তিনিই লিবিয়ায় নিয়েছেন বলে নিখোঁজদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত জাহান বলেন, লিবিয়ায় লোক নেওয়া দালাল রাজৈরের জুলহাস শেখের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা করে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ওই বাড়িতে গেলে জুলহাস বলে আমার করোনা হয়েছে। করোনার কথা শুনে আমরা জুলহাস শেখকে মাদারীপুর সদর হসাপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীদের হত্যার কথা শুনেছি। যার মধ্যে মাদারীপুরের নিখোঁজ ১১ জনের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। যারা মারা গেছে তাদের লাশ সরকারিভাবে দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।