স্থানীয় পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে স্কুল বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
রোববার মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক জাতীয় স্কুল হকি প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন এবং ১৪ মার্চ আরো দু’জন রোগী পাওয়া যায়। প্রথম তিনজনের মধ্যে দু’জন বিদেশ থেকে আসায় তৃতীয় আরেক জনের শরীরে করোনা ছড়ায়। আর সবশেষ দু’জনের একজন ইতালি ও অপরজন জার্মানি থেকে দেশে ফিরেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সংক্রমণই নেই। বিদেশ থেকে সংক্রমণ বয়ে নিয়ে আসা, সেটি আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। সব জায়গায় খুব ভালো ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সব স্থলবন্দরও বন্ধ আছে। আর বিমানবন্দরগুলোতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা আসছেন তাদেরও কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
‘কিন্তু যদি কখনো এমন অবস্থা দেখা যায় যে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে সে ক্ষেত্রে তখন প্রয়োজন হলে স্কুল বন্ধ করবো। প্রয়োজন হলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ করার মতো কোনো ধরনের কারণ ঘটেনি।’
করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাবো আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্ক ছড়াবেন না।
‘আসুন আমরা সবাই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সতর্ক হই যেন এই করোনা ভাইরাস এখানে না আসে এবং কোনোভাবে ছড়িয়ে না পড়ে। যেন না আসে না ছড়ায়। আমরা যদি সর্তকতা অবলম্বন করি তাহলে পুরোটা ঠেকাতে পারবো। এ ব্যাপারে আমাদের সবার সচেষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ, আতঙ্ক নয় সতর্ক হোন।’
এর আগে, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। ওই রিটে দেশের স্থল ও নৌবন্দর বন্ধের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অধিকাংশ দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। পাশের পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করায় অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অনেক অভিভাবক ইতিমধ্যে নিজ উদ্যোগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ না করে সরকার এখন কী দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ার পর বন্ধ করা হবে?
তারা বলছেন, কোনো স্কুলে যদি করোনা আক্রান্ত একজনকেও পাওয়া যায় তাহলে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে স্কুলের প্রায় সবাইকে। ছোটো ছোটো শিশুদের কীভাবে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হবে। তারা কী বাবা-মা ছাড়া একা থাকতে রাজি হবে। হোম কোয়ারেন্টাইনও কি শিশুদের দিয়ে সম্ভব হবে?
সরকার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে স্কুল বন্ধ না করে অ্যাসেম্বলি মাঠে না করে শ্রেণিকক্ষে আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। এমন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও।
অভিভাবকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের রোগ প্রতিরোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে স্কুলের চেয়ে জনসমাগম আর কোথায় বেশি হয়। স্কুলে প্রবেশ এবং ছুটি হবার সময় বের হতে গিয়ে স্কুলের ছোটো গেট দিয়ে একে অপরের সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি আসে। ছোট্ট একটি ক্লাসরুমে ৭০ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থী চার-পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে একটি বেঞ্চে চার-পাঁচ বা ছয় জন পর্যন্ত গাদাগাদি করে বসে। ফলে কোনো শিক্ষার্থী ভাইরাসের সংক্রমণ হলে তা অন্য শিক্ষার্থীর মধ্যে ছড়নোর আশঙ্কা থাকে।
স্কুল ছাড়াও আতঙ্কে রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। তারা গণপরিবহনে চড়ে আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা পালন করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আবাসিক হলে প্রতিটি কক্ষে চার-পাঁচ জন করে থাকে । গণরুমে থাকে ৩০ থেকে ৪০ জন। ফলে একজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও অন্য সবার অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
স্কুল-কলেজ বন্ধের বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধের একটা দাবি এসেছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে চিন্তাভাবনা নেই, এমনটা নয়। আমাদের এখানে বিষয়টা সেই পর্যায়ে আসেনি, নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাইনি। আমাদের এখানে বিষয়টি যদি খারাপভাবে মোড় নেয় বা স্কুল-কলেজ বন্ধ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা করা হবে।
গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। তবে তারা সুস্থ হয়ে গেছেন বলে দাবি সরকারের আইইডিসিআরের। শনিবার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, দেশে আরো দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি রূপ নিলেও বাংলাদেশ সরকার বলছে, দেশে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
অনেকে বলছেন, করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা দরকার। এরই মধ্যে ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট করলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।