মো. আবদুল গনী শিব্বীর : ইসলাম কালজয়ী আদর্শ ও জীবনব্যবস্থার সমন্বিত নাম। ব্যক্তিগত শুদ্ধাচারের মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ, কল্যাণকর রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশ স্বয়ং ইসলামের। আরবিতে শুদ্ধাচারকে ‘তাজকিয়া’ বলে। বাংলায় শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ বোঝায়, যার দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়।
ব্যক্তিপর্যায়ে শুদ্ধাচারের অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলা হয় জনগণের সেবক। কিন্তু বাস্তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর চিত্র উল্টো হয়। সরকারি সেবা নিতে গেলে অনেক সম্ভ্রান্ত মানুষকেও সরকারি নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীদের অসংলগ্ন আচরণও সহ্য করতে হয়। সাধারণ মানুষকে সেবক নামক প্রভুর হাতে নানাভাবে, নানা সময়ে হয়রানি ও নিষ্পেষণের শিকার হতে হয়। সরকারি কর্মকর্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিদ্যমান ধারণা বদলাতে এবং সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরাসরি জবাবদিহির আওতায় আনার লক্ষ্যেই নেওয়া হয় জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য বাধ্যতামূলক। ২০১২ সালে বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কৌশল প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়। দেশের সব মানুষ যেন সরকারি সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছ থেকে ভালো ব্যবহার ও সময়মতো কাজ বুঝে পায় এবং কোনোভাবেই যেন দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাই এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য।
পবিত্র ইসলাম ধর্মে শুদ্ধাচারের বিষয়ে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদিসে সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামাজ আদায় করে।’ (সুরা : আলা, আয়াত : ১৪-১৫)
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, ‘নিজেকে যে শুদ্ধ করে, সে-ই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।’ (সুরা : আশ-শামস, আয়াত : ৯-১০)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রাচুর্যের লালসা তোমাদের গাফিল রাখে, এমনকি তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও।’ (সুরা : তাকাছুর, আয়াত : ১-২)
এমন অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিশুদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। লোভ-লালসাসহ সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যথাযথভাবে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার আদেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.)-ও সাহাবায়ে কেরামকে সর্বদা সতর্ক করে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। একজন শাসক সে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৭১৩৮)
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোচনায় আমরা শুদ্ধাচারের ইসলামী স্বরূপ বর্ণনায় এ কথা বলতে পারি, ইসলামী নিয়মে শুদ্ধাচার হলো তাকওয়া অবলম্বন করা, সব বিষয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির বিষয়ে সচেতন থাকা, আল্লাহ ও বান্দার হকের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, ন্যায়-নীতির ব্যাপারে অটল থাকা, ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবেগপ্রবণ না হওয়া, সব ধরনের অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকা, আমানতের ব্যাপারে সতর্ক থাকা, অঙ্গীকার পূরণে দৃঢ়তা অবলম্বন করা, দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন না করা। আল্লাহ তাআলা সবাইকে প্রকৃত শুদ্ধাচার অর্জনের তাওফিক দান করুন।
লেখক : প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।