ট্রাভেল ডেস্ক : রাজশাহী থেকে কাশ্মীরের ওয়াঘা সীমান্ত। মোট ৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ। মোট ৫৭ দিনে এই পথ পাড়ি দিয়ে মা’দকবিরোধী বার্তা দিলেন রাজশাহী কলেজের ছাত্র রবিউল ইসলাম রবিন। দীর্ঘ এই ভ্রমণে মা’দকবিরোধী বার্তার পাশাপাশি গাছ লাগানো ও পরিবেশ বাঁচানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
গত ১৭ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনে থেকে ‘মিশন কাশ্মীর সাইকেল এক্সপেডিশন’ শীর্ষক ভ্রমণযাত্রা শুরু করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র রবিন। ‘মা’দককে না বলুন, সাইকেল চালান, সুস্থ থাকুন’ শীর্ষক স্লোগানে তার এই ক্যাম্পেইনটি পরিপূর্ণতা পায় গত ১৫ আগস্ট ভারতের কাশ্মীরের ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছানোর মধ্যদিয়ে। বর্তমানে সাইকেল চালিয়ে কলকাতার বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই বাংলাদেশি যুবক।
গতকাল বুধবার রাতে ভাইবারের মাধ্যমে দেশের প্রথম শ্রেণীর এক পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন রবিন। তিনি বলেন, ‘যখন কৈশরে পদার্পণ করলাম, হাইস্কুলে উঠলাম তখন থেকেই সাইকেল আমার সঙ্গী। ছাত্র মানুষ, হাতে টাকা-পয়সার একটা ব্যাপার ছিল। সবকিছু মিলেই দেখলাল, সাইকেল একটা চমৎকার ভ্রমণ সঙ্গী। ছোটবেলা থেকেই আমার “মিশন” ও “ভিশন” ছিল বিনাখরচে চালিত এই সাইকেল চালিয়েই পুরো বিশ্ব ভ্রমণের। সঙ্গে এমন বিশেষ কিছু বার্তা থাকবে, যার মাধ্যমে পথ হারানো যুবসমাজ খুঁজে পাবে আলোর দিশা। সেই স্বপ্নকে সামনে নিয়ে আসতেই রাজশাহী থেকে কাশ্মীর আমার এই সাইকেল ক্যাম্পেইন।’
বাংলাদেশি এই সাইক্লিস্ট আরও বলেন, ‘রাজশাহী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত আমার এই সাইকেল অভিযাত্রায় বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মা’দকবিরোধী ক্যাম্পেইন করেছি। নতুন নতুন জায়গায় বৃক্ষরোপন করে গ্লোবাল ওয়ার্র্মিং এর ওপর ‘অ্যাওয়ার’ করাই আমার এই ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল। পথে পথে আমি “সেফ দ্য চিলড্রেন”র ওপরও কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার ৪০টিতে সাইকেলে ঘুরেছেন রবিউল। তবে এবার আর নিজের দেশে নয়। এপার-ওপার মিলিয়ে দিলেন এই দুই চাকাতেই। ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন পুরোবিশ্ব সাইকেলে ভ্রমণের।
রবিউল বলেন, ‘আসলে স্বপ্ন লালন করছি, পুরো পৃথিবীটা এই সাইকেলযোগে ঘুরার। কেননা একটিমাত্র জীবন। সেই জীবনটাকে প্রত্যেক দেশের, প্রত্যেক শ্রেণি এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতিগুলো নিচ চোখে দেখে তাদের জীবনের ধারা ও প্রবাহগুলো বুঝতে চাই। পরবর্তী স্বপ্ন কখনো সুযোগ হলে পুরো বিশ্বকে জয় করতে চাই।’
এ সড়ক পথ পাড়ি দিতে গিয়ে রবিউলের চোখ ঢেকেছে কুয়াশায়। আবার কখনো হিমাঙ্কের নিচে নেমেছে তাপমাত্রা, পেরুতে হয়েছে পাহাড়ি ঢালু ভাঙ্গা পথ। তবে রবিউলের দুই পা থামেনি, হয়তো কখনো থামবেও না। তার মতে পৃথিবী একটাই, যে পৃথিবীতে সাইকেলে অনায়াসে চক্কর কেটে আসা যায়। কাটাতারকে বুড়ো আঙ্গুলি দেখিয়ে রাজশাহী কলেজছাত্র রবিন সাইকেলযোগেই তাই দুই বাংলাকে করে দিলেন একাকার। এ যেন রক্তে একনিষ্ঠ নেশা আর চোখে হার না মানার স্বপ্ন। আর পরিবেশের প্রতি উজাড় করে দেয়া তার এ প্রেম, যেই প্রেম মিলিয়ে দিতে পারে এপার-ওপার একাকার। যে নেশা সব ব্যবধান ভেঙে এক করে ফেলেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন সকালে রবিউলের এ সাইকেল যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রবিউলের এ সাইকেল অভিযাত্রায় সঙ্গী রয়েছেন সিলেটের ছেলে তার বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম। রবিউলকে আরএফএল গ্রুপ তাদের ‘দূরন্ত’ বাইসাইকেল এ যাত্রায় স্পন্সর হিসেবে দিয়েছে। তারা রাজশাহী থেকে কলকাতা হয়ে পর্যায়ক্রমে বর্ধমান-আসানসোল-ধানবাদ-আওরাঙ্গাবাদ-বেনারাস-ফতেপুর-কানপুর-আগ্রা-আলীগড়-দিল্লী-চন্ডীগড়- শিমলা-মানলী-লেহ হয়ে খারদুংলা ভ্রমণ করেছেন। সবশেষে কাশ্মীরের ওয়াঘা সীমান্তে গিয়ে তাদের এ যাত্রা শেষ হয়। প্রতিভাবান এই সাইকেলিস্ট রবিউল ইসলাম রবিন গাজিপুর শহরের সালমা মহল্লার খোরশেদ আলমের ছেলে। সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।