চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়ে রীতিমতো কারখানা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পিএইচপি গ্রুপের এমন জবরদস্তি কাণ্ডে এলাকাবাসী একইসঙ্গে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি ভুক্তভোগীরা সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়ের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপ বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বিএস ৭৬১০ দাগের ৭৩ শতাংশ রাস্তার জায়গাটি পুরোপুরি বেআইনিভাবে দখলে নিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, হঠাৎ করেই রাতের আঁধারে এসব জায়গা দখলে নিয়ে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেটের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে নেয়। এমনকি এরপর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাঁচগাছিয়া ছড়ার অংশবিশেষও দখলে নিয়ে নেয় পিএইচপি। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্থ হয়ে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠছে। নির্বিচার এই দখলবাজিতে আশপাশের বিশাল এলাকার হাজারও মানুষের চলাচলের একমাত্র পথটিও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ বহু বছর থেকে ওই পথ ধরে স্থানীয়রা ক্ষেতখামার করার জন্য পাহাড়ে যেতেন।
জানা গেছে, গরু-ছাগল পালনসহ বিভিন্ন কাজে তারা মূলত ওই রাস্তা ব্যবহার করতেন। হঠাৎ করে পিএইচপি গ্রুপ ওই রাস্তাটি নিজেদের দখলে নেওয়ার পর চরম বিপাকে পড়েন স্থানীয়রা। এতে অনেকের রুটি রুজির একমাত্র অবলম্বনটিও বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে। এ নিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন পর্যায়ে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পিএইচপি গ্রুপ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীকে নিজেদের হাতে রেখেছে। এসব প্রভাবশালীকে নানা সুবিধা দিয়ে তারা দিনের পর দিন এলাকার হাজারও মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে যাচ্ছে। দেয়াল পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর সম্প্রতি এসব প্রভাবশালীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্থরা সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন চলাচলের রাস্তা পুনরুদ্ধারের জন্য।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে যে রাস্তা ধরে পাহাড়ে গরু মহিষ ছাগল নিয়ে কিংবা ক্ষেত খামার করার জন্য যেতাম সেই রাস্তা দখল করে নিয়েছে পিএইচপি। কৌশলে প্রাচীন এই রাস্তা দখল করে কারখানার সীমানা অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে নিয়েছে পিএইচপি।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পিএইচপি কর্তৃপক্ষকে বারবার চলাচলের ওই রাস্তা উন্মুক্ত করার জন্য অনরোধ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বরং উল্টো নানাভাবে হুমকি-ধমকির মাধ্যেমে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাই আমরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
একই অভিযোগ পাওয়া গেছে এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছ থেকেও।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগের পর গত ১১ নভেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুনানির জন্য নোটিশ দেন পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন সোহেল এবং অভিযোগকারী শহীদুল ইসলামসহ অন্যান্যদের। পরবর্তীতে ১৬ নভেম্বর শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হয় সার্ভেয়ার নিয়োগের মাধ্যমে সড়কের জায়গা চিহ্নিত করে সেটি উদ্ধার করা হবে। তবে এরপর গত ১৫ দিনেও বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
যোগাযোগ করলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় পিএইচপির বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ করে স্থানীয়দের লিখিত আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকারি রাস্তা দখল করে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের চলাচলের পথ রুদ্ধ করার এখতিয়ার কারও নেই— তিনি যতো বড় ক্ষমতাধর ও বিত্তশালী হোক না কেন।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পিএইচপি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই ধরনের কোনো রাস্তা সেখানে নেই বলে দাবি করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।