আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার যে প্রতিশ্রুতি ইসরায়েল দিয়েছে তা যতক্ষণ পর্যন্ত মেনে চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবে বলে শর্ত দিয়েছে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু।
এই শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে হামাস মূলত বোঝাতে চেয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সংঘর্ষে তারা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এবং ইসরায়েল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ মে) রাতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হয়। ওই মন্ত্রিসভা বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ‘মিসরীয় প্রস্তাব’ মেনে নিয়েছে। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার গতরাতের ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি লেবাননের আল-মায়াদিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে বলেছেন, ‘প্রতিরোধ আন্দোলন মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে এই নিশ্চিয়তা পেয়েছে যে, গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ হবে।’
ওসামা হামদান গতরাতে আরো বলেন, ‘বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) শহরের শেখ জাররাহ এলাকা এবং আল-আকসা মসজিদ থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারও আমরা (মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে) নিশ্চয়তা পেয়েছি।’
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার ঘোষণাকে ফিলিস্তিনিদের বিজয় বলেও জানিয়েছেন ওসামা হামদান। তিনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী ইসরাইলের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিজয় হয়েছে।’
গত বুধবার (১৯ মে) দখলদার ইসরায়েলের ছয়টি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা চালানোর দাবি জানায় ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা ইয্যাদ্দিন কাস্সাম ব্রিগেড। দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি হামলার জবাবে বিমানঘাঁটিগুলোকে টার্গেট করা হয় বলে কাস্সাম ব্রিগেডের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। তারা জানায়, হাতসুর, হাতসারিম, নিফাতিম, তেল নুফ, বিলমাখিম ও র্যামন ঘাঁটিতে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
হামাসের এসব হামলার পর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাখাইমার আবুসাদা বলেছেন, এবার (হামাসের) বোমা হামলার মাত্রা অনেক বেশি এবং এই সংঘাতের মধ্যে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ঠিক কী করে ফেলতে পারে, তা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, হামাসের অস্ত্র গবেষণা, সংরক্ষণ ও উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এবার হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামাসের নিক্ষেপ করা আইয়াশ আটকে দিতে পারেনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানায়, ইসরায়েলের দিকে গাজা থেকে প্রায় দেড় হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে। যার বেশির ভাগ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
এদিকে, গত হামাসের সামরিক শাখা ইয্যাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের রামুন বিমানবন্দরে মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আইয়াশ’ এর সাহায্যে হামলা চালানো হয়েছে। গাজা থেকে বিমানবন্দরটির দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার, সেখানে ২৫০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আঘাত হানা হয়েছে। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম এটিকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলের যে কোনো স্থানে হামলা করতে সক্ষম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।