জুমবাংলা ডেস্ক : মাত্র সাত বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় প্রিয় সন্তান শফিকুল ইসলাম। হারিয়ে যাওয়ার পর বহু দিন সন্তানের খোঁজ করেছেন বাবা-মা। এক সময় সন্তানকে ফিরে পাবার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ধুলিহর গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। তবে ফেইসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ১০ বছর পর বাবা-মা ফিরে ফেলেন তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে!
ফেইসবুকের একটি লাইভ সুযোগ করে দেয় হারিয়ে যাওয়া শফিককে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে।
রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁওয়ের কাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। তারা বুকে টেনে নেন প্রিয় সন্তান শফিককে। ঢাকার রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়ে এতোদিন শফিককে নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করছিলেন শ্রীমঙ্গলের কাবুল মিয়া।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শিশু শফিকের বয়স তখন মাত্র ৭ বছর। ওই সময়ে কোন একদিন বাড়ি থেকে বের হয় শফিক। ঢাকাগামী গাড়িতে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। অচেনা ঢাকা শহরে গিয়ে বিপদে পড়ে শিশুটি। নিজের গ্রামের ঠিকানা এমনকি বাবা-মায়ের নামও বলতে পারতো না সে। এক সময় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে কাঁদতে থাকে। এ অবস্থায় শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী কাবুল মিয়া শিশুটিকে কুড়িয়ে নেন। বাড়িতে নিয়ে নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁও এলাকায় আশ্রয়দাতা কাবুল মিয়ার পরিবারের অন্য ৮ মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে শফিক। তিনি শফিকের বাবা-মায়ের খোঁজ করছিলেন।
গত ২৫ জানুয়ারি মৌলবীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরকান ইউনিয়নের শ্রীগাঁও গ্রামের এলাকার ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শেখ জসিম কুড়িয়ে পাওয়া শফিককে সঙ্গে নিয়ে ফেইসবুকে একটি লাইভ করেন। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরে ছেলেটির প্রকৃত বাবা-মায়ের সন্ধান চান। এ ফেসবুক লাইভ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে এ খবর আসে শফিকের বাবা-মায়ের কাছে। ফেসবুক লাইভ দেখে আর কাহিনী শুনে নিজের সন্তানকে চিনতে ভুল করেননি তারা। যোগাযোগ করেন শ্রীমঙ্গলে। শফিকের বাবা-মা ছুটে যান শ্রীমঙ্গলে। তখনই শফিক জানতে পারে যে, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ধূলিহর গ্রামে।
পালক বাবা কাবুল মিয়া জানান, অসহায় শিশুটিকে রাস্তায় এ অবস্থায় দেখে ফেলে আসতে বিবেকে বেঁধেছিল। তাই তিনি শফিককে বাড়ি নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। খারাপ লাগলেও তাকে প্রকৃত বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি আজ আনন্দিত।
শেখ জসিম বলেন, তার মা-বাবা, চাচা ও বড় ভাই-ভাবি, ভাতিজা রোববার তাকে নিতে এসেছে। সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল চারটার দিকে শফিকের বাবা-মা, বড় ভাই-চাচাসহ অন্য আত্মীয়রা শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের দিকে রওয়ানা হয়েছে। বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।
শফিককে ফিরে পেতে হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন কবির এবং পাশ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার হাসান জিতু সহযোগিতা করেছেন বলে জানান শেখ জসিম।
শফিক জানায়, আমি শুধু গ্রামের নাম ধুরিহর বলতে পারতাম। আর কিছুই জানতাম না। আমি বাবা-মায়ের সন্ধান পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে। কিন্তু পালক বাবার জন্য খারাপ লাগছে। তিনি আমাকে অনেক আদর করতেন।
শফিকের বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন বলেন, আজ নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।