জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় সোনাগাজী মাদ্রাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত হওয়ায় ভবনটি বিক্রি করে দেয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার। তবে ভবনটি বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে ভবন ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেন।
জানা যায়, ভবনটির মূল্য ১০ লাখ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও ৩৭ হাজার ৭৪১ টাকা ২৫ পয়সা, ভ্যাটসহ ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে নিলাম ডাকের কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কাগজ-কলমে নিলাম দেখিয়ে গোপনে কাজটি করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
জরাজীর্ণ ভবন ক্লাস নেওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় সোনাগাজী মাদ্রাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয় সরকার। উপজেলা শিক্ষা অফিসে নিলাম ডাক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। গোপনে নিলাম ডাকে জনৈক চরচান্দিয়া ইউনিয়নের নিজাম উদ্দিন নামক এক ব্যক্তির কাছে মাত্র ৩৮ হাজার টাকায় ভবনটি বিক্রি করা হয়। নিজাম উদ্দিন এর সাথে সোনাগাজী মাদ্রাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির ও স্কুলের এসএমসির সভাপতির যোগসাজোশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিত্যক্ত ভবন বিক্রি করতে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশে উপজেলা প্রকৌশল দফতরকে মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। উপজেলা প্রকৌশল দফতর প্রাক্কলিত মূল্য ধরে ৩৭ হাজার ৭শ ৪১ টাকা, ভ্যাটসহ ৪২ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, সরকারি পণ্য কেনার সময় যেমন দাম ছয়/সাত গুণ বাড়ানো হয়। একইভাবে বিক্রির সময়ও ছয়/সাত গুণ কমানো হয়। সরকারি কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পকেট ভড়াতে গোপনে নিলাম দেন এবং নেগোসিয়েট চক্রগুলোকে লালন করেন। এজন্যই সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিক্রিত মূল্য দেখে মনে হচ্ছে-দেশের বাজারে শায়েস্তা খাঁর আমল চলছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী লাকী বালা দেবী বলেন, উপজেলা প্রকৌশল অফিসের এস্টিমেট অনুযায়ী ভবন বিক্রি করা হয়েছে। নিয়ম-অনিয়ম সব কিছু শিক্ষা অফিসার ভাল জানেন। আমরা শিক্ষা অফিসারের হুকুম পেয়ে কাজ করি।
সহকারী শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুর রহমান বলেন, সঠিক নিয়ম মেনে নিলাম করা হয়নি। কখন কিভাবে নিলাম হল আমিও বিষয়টি শুনি নাই। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভাল জানেন। সঠিক নিয়মে নিলাম না হওয়ায় ইউএনও সাহেব ভবন ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিতে বলেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ, ছুটিতে আছি। আপনি এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুর রহমানের সাথে কথা বলেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মনির হোসেন খান বলেন, মনগড়া নয়, সরকারি সিডিউল মতেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন দেখে সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাক্কলন তৈরির সময় প্রাপ্ত মালামালের মূল্য এবং মালামাল ভাঙার (অপসারন) খরচ বাবদ টাকা বাদ দিলে সে মোতাবেক নিলাম বিক্রির সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪১ টাকা।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াতুল হক বিটু বলেন, এত টাকার ভবন এত অল্প টাকায় কিভাবে নিলাম হল, কে কিভাবে করল কিছুই আমরা শুনি নাই। শিক্ষা অফিসার নিজে নিজে একাই সব করেছেন। আমরা কিছুই শুনি নাই।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মনজুরুল হক বলেন, নিলামের বিষয়টি আমি শুনি নাই। নিলামে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় কাজটি সোমবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিক্ষা অফিসার ছুটিতে থাকায় পরবর্তীতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।