ক্ষমতায় গেলে দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জাতীয় সরকার গঠন করবে জামায়াতে ইসলামী—এমন ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি জানান, এককভাবে নিরঙ্কুশ বিজয় পেলেও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ’ গড়তেই তারা জাতীয় সরকার বেছে নেবে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “২০০ আসনে এককভাবে বিজয়ী হলেও দেশের স্বার্থ ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে জামায়াত জাতীয় সরকারই গঠন করবে।”
রোববার রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, নির্বাচনি ইশতেহার এবং নির্বাচন-পরবর্তী ১০০ দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। তাঁদের আশ্বস্ত করে জামায়াত আমির বলেন, ক্ষমতায় এলে তাঁর দল গঠন করবে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সরকার অত্যাবশ্যক। “আমরা কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে বাদ দেব না,” যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশে ভোটারদের সচেতনতা এখনো পর্যাপ্ত নয়; একই দিনে দুটি ভোট নিলে উভয় প্রক্রিয়ার ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। তাই দুটি নির্বাচন আলাদা করার পরামর্শ দেন তিনি।
ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের মতে নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই, ফেব্রুয়ারিতেই হওয়া উচিত।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচন, ক্ষমতায় গেলে সম্ভাব্য সরকার কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা—সবকিছুতেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল জামায়াতে ইসলামী।
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) ভোটব্যবস্থার প্রতি দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থেই এ পদ্ধতির দাবি জানানো হয়েছে এবং ক্ষমতায় গেলেও পিআর বাস্তবায়নে থাকবেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধর্ম তাঁদের চিন্তা ও চেতনার অংশ, ব্যবহার করার উপকরণ নয়। ‘আমরা ধর্মকে কাজে লাগাই না; যারা নির্বাচন এলে টুপি-তসবিহ নিয়ে হাজির হন, তারা ধর্মকে ব্যবহার করেন’, মন্তব্য করেন তিনি।
ইইউ প্রতিনিধিদলে রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোট্জ, ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, ফ্রান্সের উপরাষ্ট্রদূত ফ্রেদেরিক ইনজা, নেদারল্যান্ডসের উপরাষ্ট্রদূত থাইস উডস্ট্রা, ইইউর উপরাষ্ট্রদূত গং. বেইবা জেরিনা, ইইউ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি সেবাস্টিয়ান রাইগার-ব্রাউন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর মোকাররম হোসেন ও জুবায়ের আহমেদ এবং জামায়াত আমিরের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।
এর আগে গতকাল সকালে বসুন্ধরার কার্যালয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রুনাইয়ের হাইকমিশনার হাজি হারিস বিন ওসমান সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি রোজাইমি আবদুল্লাহ।
সাক্ষাৎকালে ২০২৪-এর গণবিপ্লবসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর গঠনমূলক ভূমিকা তুলে ধরা হয়। ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে জামায়াত আমিরের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



