নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: প্রায় ৬০ বছর ধরে তালের বড়া বিক্রি করে সংসার চালান ৭৬ বয়সী ফজলুল হক। মুখরোচক এই তালের বড়া বিক্রি করেই সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি।
১৯৬০ এর দশকে তার এ পথ চলা শুরু। তখন তালের বড়া দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন। সময়ের পরিক্রমায় আজ তা ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। এ ব্যবসার লাভের টাকা থেকেই তিনি প্রায় পাঁচ বিঘা জমি কিনেছেন। তিন ছেলে এবং তিন মেয়েকে বড় করেছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরা বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করছেন। বর্তমানে সুখের সংসার তার।
ফজলুল হক গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের প্রয়াত জহর আলীর ছেলে। অভাবের সংসারেই বড় হয়েছেন। পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে এক বিঘা জমি পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি ছয় বিঘা জমির মালিক। তালের রস দিয়ে প্রক্রিয়া করে ময়দা, চিনি ও লবণের সমন্বয়ে বিশেষ এক ধরনের সুমিষ্ট বড়া তৈরি করেন। আর সেটা বিক্রিতেই তার এ সফলতা। সপ্তাহে দু’দিন- রোববার এবং বৃহস্পতিবার গোসিংগা বাজারে এটা বিক্রি করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ঘেঁষে গোসিংগা বাজারের একেবারে পূর্বপ্রান্তে নিজের দোকানে বসে ফজলুল হক তালের বড়া তৈরি করছেন। দীর্ঘক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, চারটা বারোমাসি তাল গাছ আছে তার। গাছগুলোতে সবসময় তাল থাকে। এরপরেও তিনি অধিক চাহিদার কারণে অন্য মানুষের গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করেন। সিজনের সময় তাল থেকে রস বের করে বিশেষভাবে ফ্রিজে রেখে দেন। যাতে পরে যেকোনো সময় এটা দিয়ে বড়া তৈরি করতে পারেন। দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর যাবত তিনি এ কাজ করে আসছেন। প্রথমে মিষ্টির ব্যবসা করলেও পরবর্তীতে তিনি তালের বড়া তৈরি শুরু করেন। বিকেল ৪টায় শুরু করেন চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। ধীরে ধীরে তা মানুষের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠে।
ফজলুল হক জানান, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তার কাছে আসেন এ বড়া খাওয়ার জন্য। পার্শ্ববর্তী জেলা ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতি মাসেই লোকজন আসেন তালের বড়া খেতে। অনেকেই ফোন করে আসেন। আবার কেউ কেউ মেহমান বাড়ি বেড়াতে গেলে মিষ্টির পরিবর্তে এই বড়া নিয়ে যান। দেশের কেউ কেউ বাইরে পাঠিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, প্রতি বাজারে চার থেকে পাঁচ কেজি ময়দার বড়া তৈরি করেন। আগে আরো বেশি করতেন। প্রতি কেজি ময়দার সঙ্গে প্রায় চার কেজি চিনি মেশাতে হয়। অবশ্য কেউ চিনি কম খেতে চাইলে সেভাবে তাকে আগে অর্ডার দিতে হয়।
কার কাছে এমন সুন্দর বড়া তৈরি শিখেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বাড়ির কাছে একজন মাঝে মাঝে এই বড়া বানাতেন। আমি তাকে বারবার বললেও তিনি শিখিয়ে দেননি আমি ছোট মানুষ বলে। পরে আমিই বারবার চেষ্টা করে সফল হয়েছি। তবে প্রথম প্রথম গরম তেলের ছিটায় হাত পুড়ে যেত। তবুও হাল ছাড়িনি। সেই যে শুরু হলো এখনো চলছে। সন্তানরা নিষেধ করেছে, এরপরও মানুষের চাহিদার কারণে এটা ছাড়তে পারছি না।
গোসিংগা বাজারের ফার্মেসি মালিক মো. শামীম হোসেন বলেন, আমার বয়স ৪৬ বছর। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এই চাচা এখানে তালের বড়া বিক্রি করছেন। আমরা সব সময় খাই। এমনকি কোথাও বেড়াতে গেলেও মিষ্টির পরিবর্তে মাঝে মধ্যে এটা নিয়ে যাই।
শাকিল নামে এক ক্রেতা বলেন, ছোটকাল থেকেই ঐ ব্যক্তিকে তালের বড়া বানাতে দেখছি। তার বানানো তালের বড়া খুব স্বাদের।
গোসিংগা বাজার কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন মোড়ল জানান, বহু বছর ধরে ফজলুল হক ভাই এই বড়া বিক্রি করে আসছেন। তালের বড়া বিক্রি করেই তিনি সংসার চালান। এটা করেই আজ তিনি সফল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।