ধর্ম ডেস্ক : আল-হাশর কোরআনের ৫৯ নম্বর সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর মোট আয়াত ২৪টি। আলোচ্য সুরার দ্বিতীয় আয়াতের হাশর শব্দ থেকে সুরাটির নামকরণ হয়েছে।
এর অন্য নাম সুরা বনু নাজির।
সাঈদ ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বললাম, এটি হাশর। তিনি বললেন- একে বনু নাজির বলো, কেননা এ সুরায় মদিনা থেকে বনু নাজির গোত্রের বহিষ্কারের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৪৫২১)
বর্ণিত সুরায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার গুণাবলি, মুসলমান কর্তৃক বিজিত অঞ্চলে সম্পদ বণ্টন, মুনাফিকদের আচার-আচরণ ও তাওহিদের আলোচনা স্থান পেয়েছে।
সুরা হাশরের শানেনুজুল
এই সুরাটি নাজিল হয় চতুর্থ হিজরিতে বনু নাজিরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বনু নাজির ছিল একটি ইহুদি গোত্র। রাসুলুল্লাহ (সা.) রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে তাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেন। কিন্তু তারাই প্রথম চুক্তি ভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ণ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এ রকম—
আমর ইবনে উমাইয়া (রা.) কর্তৃক ভুলবশত জনৈক ব্যক্তির হত্যার মুক্তিপণের চাঁদা আদায়ের জন্য রাসুল (সা.) ও বিখ্যাত সাহাবায়ে কিরামের একটি দল তাদের কাছে যান। তারা প্রকাশ্য চাঁদা আদায়ের সম্মতি জানিয়ে গোপনে রাসুল (সা.)-কে ছাদের ওপর থেকে পাথর ফেলে হত্যার পরিকল্পনা করে। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের কুকীর্তির কথা রাসুলে কারিম (সা.)-কে জানিয়ে দেন। মদিনায় ফিরে এসে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
এই সুযোগে তাদের মদিনা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন। কিন্তু মুনাফিকদের আস্ফালন ও সাহায্য পাওয়ার আশায় কেউ বের হলো না। উল্টো তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে চ্যালেঞ্জ করে বসে। শেষমেশ তিনি ১৫ দিন অবরোধ শেষে তাদের ওপর হামলা করার নির্দেশ দেন। বনু নাজিরের ঘটনা চতুর্থ হিজরি সনে ওহুদ যুদ্ধের পরে ও খন্দক যুদ্ধের আগে সংঘটিত হয়। (তাফসিরে জালালাইন : ৬/৪৩৭; সীরাতুল মুস্তফা : ২/২৩১)
ফজিলত ও আমল
হাদিস ও তাফসির গ্রন্থে সুরা হাশরের বেশ কিছু ফজিলত ও আমল উল্লেখ করা হয়েছে। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে মুসাব্বিহাত সুরা পাঠ করতেন। এগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে, যে আয়াতটি এক হাজার আয়াত অপেক্ষা উত্তম। (মুসাব্বিহাতের মধ্যে সুরা হাশর অন্তর্ভুক্ত) (তিরমিজি, হাদিস : ২৯২১)
দৈনিক ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরে গুরুত্বের সঙ্গে সুরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পাঠ করতে হয়। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার পাঠ করবে ‘আউযু বিল্লাহিস সামিউল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম’, এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন, যাঁরা বিকেল পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। এই দিন যদি সে মারা যায় তাহলে তার শহীদি মৃত্যু হয়। আর যদি বিকেলে পাঠ করে, তবু ওই ফজিলতই হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯২২)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।