জুমবাংলা ডেস্ক : ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের নতুন আকর্ষণ এখন একঝাঁক ময়ূরছানা। প্রায় দুই ডজন ডিম থেকে ফুটে বেরিয়েছে ২০টি বাচ্চা। তবে ময়ূর একা নয়, ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে সহায়তা করেছে একটি বনমুরগিও। বাচ্চাগুলোকে আপাতত মায়ের আদরে দেখভাল করছে সেই মুরগিটি।
মা ময়ূর বেশ কিছু ডিম পাড়লেও তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে গিয়ে একের পর এক ডিম নষ্ট করেছিল। এ কারণে পার্ক কর্তৃপক্ষ বিকল্প হিসেবে ১০টি ডিম আলাদা করে একটি বনমুরগিকে দিয়ে ফোটানোর ব্যবস্থা করে। তারা এতে সফলও হয়েছে। অবশ্য মা ময়ূরটিও শেষ পর্যন্ত ১০টি বাচ্চা ফুটিয়েছে।
এতে ২০টি বাচ্চা ও প্রাপ্তবয়স্ক ১৯টিসহ এই সাফারি পার্কে ময়ূরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯টিতে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পার্কের বন্য প্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে মুরগিকে দিয়ে ময়ূরের ডিমে তা দেওয়ানো হয়। ডিম ফুটে বেরোনো বাচ্চাগুলোকে প্রায় এক মাস ধরে সেখানেই রাখা হয়েছে।
চিড়িয়াখানার মতো সাফারি পার্কেও দর্শকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু নয়নাভিরাম পাখি ময়ূর।
আদুরে চেহারার বাচ্চাগুলোকে দেখতেও দর্শনার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই। বনমুরগির হেফাজতে থাকা বাচ্চাগুলোকে দেখতে তাদের অনেকে কোয়ারেন্টাইন শেডের বাইরে ভিড় করছে। কেউ শেডের বেশি কাছে ঘেঁষলে বনমুরগি মা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে।
ময়ূরের বাচ্চাগুলোর দেখভালকারী কর্মী আজগর আলী বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়ম করে ময়ূরের বাচ্চাগুলোকে পরিচর্যা করা হয়। নিয়মিত খেতে দেওয়া হয় ভুট্টা, গম, বিভিন্ন রকমের ফল।
এ ছাড়া প্রোটিনের জন্য খাওয়ানো হচ্ছে ডিম।’
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছেন, ময়ূরের বাচ্চাগুলো বেশ সুস্থ রয়েছে।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ময়ূর থেকে পাওয়া প্রায় দুই ডজন ডিম সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এরপর মা ময়ূর ও বনমুরগি তা দিয়ে সেগুলো ফুটিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ময়ূরের বাচ্চাগুলোর বয়স এক মাসের একটু বেশি। আগামী চার মাস পর্যন্ত তারা এ শেডেই বেড়ে উঠবে।
ময়ূরের বাচ্চাগুলোর আকার মোটামুটি মাস তিনেক বয়সের দেশি মুরগির বাচ্চার মতো। তবে গড়ন ও গায়ের রং থেকেই বোঝা যায় এরা মুরগি নয়। সাফারি পার্কের কর্মীরা জানালেন, প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ময়ূরের গড় ওজন তিন থেকে চার কেজি হয়ে থাকে। অন্যদিকে পুরুষ ময়ূরের গড় ওজন হয় চার থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বললেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট চিরহরিৎ বনে প্রতিষ্ঠিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক বন্য প্রাণী প্রদর্শনের পাশাপাশি পশু-পাখির প্রজননের ক্ষেত্রে বড় সফলতা দেখিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ময়ূরের ঘরে এসেছে একঝাঁক নতুন অতিথি।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের কোনো প্রাকৃতিক বনে এই প্রজাতির ময়ূর নেই। একসময় মধুপুরসহ কিছু বনে দেখা মিলত ময়ূরের। প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন স্থানের বনে এখনো অনেক ময়ূর রয়েছে। ধর্মীয় সংযোগ থাকায় সেখানে ময়ূরকে অনেকটা পবিত্র গণ্য করে সংরক্ষণ করা হয়।
চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ময়ূর প্রথম আনা হয় আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের সময়। যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে উদ্ধার করা কিছু ময়ূর এখানেই ঠাঁই পায়। তখন একসঙ্গে তিন জোড়া ময়ূর পার্কে আনা হয়। কয়েক বছর আগে চাঁদপুরে যৌথ অভিযানে উদ্ধার করা ১৩টি ময়ূরও এখানে পাঠানো হয়েছিল। – কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।