জুমবাংলা ডেস্ক : ভোরের আলো ফুটতেই কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর বাসট্যান্ড এলাকায় শত শত শ্রমিক জড়ো হয় ‘মানুষ কেনা-বেচা’র বিচিত্র হাটে! নির্দিষ্ট দামে বিক্রি হন তারা। কাজ পেলে তাদের মুখে হাসি ফুটে, না পেলে মলিন মুখে অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তী দিনের জন্য। শ্রমিকরা কোদাল, কাঁচি, ঝুড়ি ইত্যাদি নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য। কেনা-বেচার মহারণে কাজের সামর্থ্য অনুযায়ী দাম হাঁকানো হয় শ্রমিকদের। কেউ দিনের হিসেবে কেউ চুক্তিমূল্যে একদিনের জন্য মালিকপক্ষের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন।
দিনভর সেই মালিকের কাজ করে সন্ধ্যার আগে নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে আপন নিড়ে ফিরে যান তারা। এসব শ্রমিককে কিনতে আসেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সাধারণত কৃষি জমিতে কাজ করার জন্যই তাদের কেনা হয়ে থাকে বেশি। কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় এখানকার কৃষকদের জমির পরিচর্চার জন্য দক্ষ এবং পরিশ্রমী শ্রমিক প্রয়োজন হয়। ফলে এখান থেকে যাচাই-বাছাই এবং নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রমিক ক্রয় করতে পারেন অনেকে।
বছরজুড়ে শ্রমিকের এই হাট চলমান থাকলেও বর্তমানে চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে তাদের পারিশ্রমিকও। আমন ধান রোপণের পুরোপুরি মৌসুম হওয়াতে ব্যাপক পরিমাণে শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের চড়া মূল্য দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে জমির মালিকদের। বীজতলা হতে চারা উত্তোলন করে জমিতে রোপণ পর্যন্ত একাধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
শ্রমিক কিনতে আসা কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম সেলিম জানান, তার জমিতে আমন ধান রোপণের জন্য ৪ জন শ্রমিকের প্রয়োজন। ৬০০ টাকা মজুর প্রতি মূল্যে তিনি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪ শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তি করেন।
পার্শ্ববর্তী আচমিতা ইউনিয়নের গাংকুলপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম জানান, তার ৬৬ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোপণের জন্য কিছুসংখ্যক শ্রমিক প্রয়োজন। শ্রমিক কেনার জন্য সকাল থেকেই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। দাম-দর সামঞ্জস্য হলে তিনি শ্রমিক নিয়ে তার জমিতে যাবেন
।
নেত্রকোনা দুর্গাপুর থেকে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে আসা শ্রমিক সবুজ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় মজুরি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। কাক্সিক্ষত মজুরি না পাওয়াতে এখনো কোনো মালিক পক্ষের সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হতে পারেননি। তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মালিক পক্ষের সঙ্গে কাক্সিক্ষত মজুরি মিললেই কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন। এ ছাড়াও নেত্রকোনার কলমাকান্দা থেকে আসা শ্রমিক সোহাগ জানান, আমরা এখানে আমন ধান রোপণের মৌসুমে স্থায়ীভাবে কটিয়াদী এলাকায় থেকে কাজ করতে হচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী মজুরি না পাওয়ায় এ এলাকায় এসে কাজ করতে তাদের নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বাজারে শ্রমে বিক্রি হতে আসা এসব শ্রমজীবী মানুষ যেদিন নিজের শ্রম বিক্রি করতে পারে না, সেদিন তাদের রাত কাটে বাজারের কাছাকাছি কোনো মসজিদ-মাদ্রাসা কিংবা স্কুল ঘরের বারান্দায়। কখনো আধপেটা, কখনো বা উপোস করে রাত কেটে যায় তাদের। সকাল হতেই আবার শ্রম বিক্রির আশায় চলে ছোটাছুটি। নিয়োগদাতা গৃহস্থ ভালো মানসিকতার হলে থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হয় না। তবে তাদের অনেকেই কাজের মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করতে চান না বলে কয়েকজন শ্রমজীবী জানান।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন, শ্রমিক কেনা-বেচার হাট সম্পর্কে অবগত আছি। কটিয়াদীতেও এখন ছড়িয়ে গেছে এই হাট। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের উপকার হয়। তাই প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার নেই। তবে অনিয়ম কিংবা অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি অসহায় কোনো শ্রমিক চোখে পড়লে উপজেলা প্রশাসন সহায়তা করে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।