জুমবাংলা ডেস্ক : চার বছর আগে ছিল ধু ধু বালুচর ও কাশবন। চরাঞ্চলের অনুর্বর সেই ধু ধু বালুচর আর কাশবন কেটে পরিষ্কার করে ফসল ফলানোর কথা ভাবেন কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল হায়াত শিপু খালাসী। জায়গাটি উর্বর জমিতে পরিণত করতে তাকে নানা চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে। কিন্তু যখন সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে ঘরে তোলার সময় হলো, তখনই বিপাকে পড়লেন।
প্রায় ৩০০ বিঘা (প্রতি বিঘা ৫২ শতাংশ) চরাঞ্চলের পতিত জমিতে মাসকলাই, কলাই ও শস্য আবাদ করে যখন একটু সফলতার মুখ দেখছেন, তখনই স্থানীয় কয়েকজন নিজেদের জমি দাবি করে ওই ফসলের মাঠ থেকে মাসকলাই তুলে ফেলছেন।
জানা গেছে, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের মাথাভাঙ্গা চরাঞ্চলের প্রায় ৩০০ বিঘা জমি সরকারি খাস খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত। ওই এলাকা ছিল ধু ধু বালুচর আর কাশবন। ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল হায়াত শিপু খালাসী স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে চরের অনুর্বর জমি ফসলি জমিতে পরিণত করতে কাজ শুরু করেন প্রায় চার বছর আগে।
শিপু খালাসী বলেন, ‘মাথাভাঙ্গা চরের প্রায় ৩০০ বিঘা জমি পতিত পড়ে ছিল। সেখানে জঙ্গল হয়ে ছিল। গত চার বছর আগে ওই জমি আমি পরিষ্কার করতে কাজ শুরু করি। জমি যেহেতু সরকারি খাস খতিয়ানের সেকারনে আমি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করে কাজি শুরু করি। এরপর একবছর লেগেছে পরিষ্কার করতে। পরিষ্কারের পর সাধারণত দুই বছর কোনও ফসল হয় না। গত বছর ওই জমিতে মাসকলাই, শস্য বপন করি। ফসল মোটামুটি পাই। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে জমি পরিষ্কার করতে। আমি যখন ফসল ফলাতে পেরেছি, ঠিক তখনই এলাকার একটি মহল দাবি করছে ওইখানে তাদের জমি রয়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবার প্রায় ৫০ বিঘা জমির মাসকলাই উঠিয়ে ফেলেছে স্থানীয় নজরুল সিকদার ও সোহান মৃধা। মাসকলাই উঠিয়ে আবার সেখানে চাষও করেছেন তারা। কয়েকদিন পরই মাসকলাই কাটার কথা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি জমি। ওই জমিতে যে ফসল রয়েছে তা নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ফসল নিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু জমি দাবি করে ফসল নষ্ট যারা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
ওই জমির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন জামাল খান। তিনি বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে খুব কষ্ট হয়েছে ফসল ফলাতে। চরের জমিতে আবাদ করা খুব কঠিন কাজ। অনেক কষ্টের পর যখন আমরা ফসল ফলাতে পেরেছি ঠিক তখনই স্থানীয় একটি মহলের লোভ জাগছে জমির উপর। আগে কিন্তু কেউ ফিরেও তাকায়নি। যখনই জমি আবাদের যোগ্য হয়েছে, তখনই তারা এখন জমি দখলে ব্যস্ত।’
নিজের জমি দাবি করে ফসল তুলে নষ্ট করেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। কী কারণে ফসল নষ্ট করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই জমির মধ্যে আমার ৩০ বিঘা জমি আছে, তাই আমি ফসল তুলে ফেলেছি।’
এতদিন কেন তোলেননি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই জমিতে আমি ভুট্টা রোপণ করবো এ কারণে তুলে ফেলেছি। সরকারি খাস খতিয়ানের জমি নয়, ওই জমি আমার।’
চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউছার বলেন, মাথাভাঙ্গা চরে যে জমি রয়েছে তা বর্তমানে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি। ওই জমি আবাদের যোগ্য করে শিপু খালাসী চাষাবাদ করেন। কিন্তু চরাঞ্চলে নিয়ম আছে, কোনও অনাবাদি জমি পরিষ্কার করে আবাদ করলে তিনি তিন বছর ফসল নিতে পারবেন। এরপর জমির দাবিদারদেরকে জমি বুঝে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা জমি দাবি করছেন তাদের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জমি তাদের কিনা। তবে বর্তমান সময়ে জমি থেকে ফসল তুলে ফেলা অন্যায় হয়েছে। দেশের কথা চিন্তা করা উচিত ছিল, ফসল নষ্ট করা ঠিক হয়নি।
চরভদ্রাসন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) খাইরুল ইসলাম বলেন, মাথাভাঙ্গা চরে যে জমি রয়েছে তা খাস খতিয়ানের জমি। ওই জমিতে চাষাবাদ করে অনেকই জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে জমি থেকে ফসল তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তহশিলদারকে পাঠানো হয়েছিল। জমির যদি কোনও দাবিদার থাকে তাহলে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।