জুমবাংলা ডেস্ক : মাত্রই দেশটা স্বাধীন হয়েছে। জাতির রূপকারের তখন দম ফেলার ফুসরত নেই। হাতে নানা কাজ, দেশটা বিনির্মাণ করতে হবে।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তখন রাজনৈতিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ছিল আলাদা নজর। অনেক চলচ্চিত্র তারকা তার প্রেরণাতে যুক্ত হয়েছিলেন সিনে পর্দায়। তেমন একজন আশির্বাদপুষ্ট অভিনেতা ছিলেন কামরুল আলম খান খসরু। তার ‘ওরা ১১ জন’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ে মুগ্ধ দেশবাসী।
দেশ স্বাধীনের আগে খসরু ছিলেন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। মূলত তার কারণেই চলচ্চিত্রে পাওয়া গিয়েছিল নেতা শেখ মুজিবকে।
চাষি নজরুল ইসলাম পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘সংগ্রাম’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে।
১৯৭৩ সালে তখন চাষী নজরুল ইসলাম নায়ক খসরুকে নিয়ে ‘সংগ্রাম’ ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।
সিনেমার শেষ দিকে দেখানো হবে মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্যালুট করছে। এই দৃশ্য কীভাবে ধারণ করা যায় সে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম।
স্নেহ করতেন বলেই একদিন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সোজা বঙ্গবন্ধুর কাছে চলে আসেন খসরু।
সে সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁদের কথোপকথন চাষী নজরুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করেছিলেন এভাবে-
খসরু: আপনার কাছে একটা কাজে আইছি।
বঙ্গবন্ধু: কী কাজ? ক?
খসরু: আমরা আর্মির মার্চ পাস্টের একটা দৃশ্য করব। আপনি স্যালুট নিবেন।
বঙ্গবন্ধু: চুপ, আমি ফিল্মে অ্যাক্টিং করবো না। (ধমকের সুরে)
খসরু: এটা তো অ্যাক্টিং হইল না।
বঙ্গবন্ধু: অ্যাক্টিং হইল না কী? যা, এখান থেকে। (আবারো ধমকের সুরে)
খসরু: না আপনাকে করতেই হবে। আপনি না হলে সিনেমাটা শেষ করতে পারব না।
বঙ্গবন্ধু: মান্নানরে ডাক দেখি। (তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান)
(স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান এসে খসরু ও চাষী নজরুলকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।)
খসরু: বঙ্গবন্ধুরে অ্যাক্টিং করতে হইব।
আবদুল মান্নান: বঙ্গবন্ধু অ্যাক্টিং করব, এ-ও সম্ভব?
খসরু: সম্ভব না হইলে কিন্তু আপনারে অ্যাক্টিং এ দাঁড় করাইয়া দিমু। আপনি বঙ্গবন্ধুরে উল্টাপাল্টা কিছু বইলেন না। শুধু বলবেন, অ্যাক্টিং করা যায়।
(সবাইকে নিয়ে মন্ত্রী আব্দুল মান্নান আবার ফিরে গেলেন বঙ্গবন্ধুর রুমে)
বঙ্গবন্ধু: কী তাইলে?’
আবদুল মান্নান: ওই ঠিকই আছে। তয় করবেন কবে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে বঙ্গবন্ধু রাজি হলেন কাজটি করে দিতে। খসরুকে বললেন, ‘যা, করে দেব।’
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেই শুটিংটি হয়েছিল পিলখানায়। এই একটি সিন করার জন্য টানা কয়েকদিন চলেছে রিহার্সেল। কারণ শট নেওয়া হবে একবারেই আর খুব অল্প সময়ের মধ্যে।
শুটিংয়ের দিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালেন। পেছনে সারিতে জিয়াউর রহমান, কেএম সফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফসহ সেনাবাহিনীর সব শীর্ষ কর্মকর্তারা। মঞ্চের সামনে প্যারেড করে স্যালুট দিয়ে এগিয়ে চলেছে সুসজ্জিত সেনাদল। পরিচালকের কথা মতো স্যালুট গ্রহণের জন্য কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধু। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অধৈর্যের সুরে পরিচালকের সাথে কথোপকথন-
বঙ্গবন্ধু: এই, কতক্ষণ হাত তুইলা রাখব রে।
চাষী নজরুল: আর অল্প কিছুক্ষণ।
বঙ্গবন্ধু: আরে কী করস না করস তোরা।
ঠিক এভাবেই চলচ্চিত্রের অভিনেতা হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। ছবিটি ১৯৭৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।