জুমবাংলা ডেস্ক : অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাসহ নানাভাবে ফাঁকি দেওয়া সরকারের ৮২৩ কোটি টাকা ফেরতে মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংককে আলটিমেটাম দিয়েছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বাংলালিংকের শীর্ষ নির্বাহীর কাছে পাঠানো চিঠিতে অবিলম্বে টাকা পরিশোধের জন্য বলেছে; অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানায় বাংলালিংক। বিটিআরসির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বলছে, দেশের বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের (আরজেএসসি) চোখে ধুলা দিয়ে ধারাবাহিকভাবে সরকারি বিভিন্ন মাশুলের টাকা ফাঁকি দিয়ে আসছে। সম্প্রতি বিটিআরসির এক বিশদ নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সিম কার্ড বিক্রির ভ্যাট মেরে দেওয়া, স্পেকট্রাম ভাড়া কম দেওয়াসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা-মাশুলের ৮২৩ কোটি টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে নিজের পকেটে পুরেছে কোম্পানিটি। টাকা আদায়ের তাগাদা দিলেও সাড়া নেই বাংলালিংকের। বিটিআরসির নিয়োগ করা বাংলাদেশের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মাসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে গত ২৩ বছরের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করে ভারতীয় ফার্ম এএনবি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড। ২০২১ সালে বিটিআরসি ফার্ম দুটিকে এ নিরীক্ষার কাজে নিয়োগ করে।
যেসব খাতে বাংলালিংক সরকারকে ফাঁকি দিয়েছে, সেগুলো হলো বার্ষিক লাইসেন্স ফি, লাইসেন্স পুনর্নবায়ন ফি, রয়্যালটি ফি, বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) লাইসেন্সের আন্ডারপেমেন্ট, হ্যান্ডসেট রয়্যালটি ফি, এসএমএস ও এমএমএসের অতিরিক্ত খরচ দেখানোর মতো নানান খাত। এর বাইরেও প্রতিষ্ঠানটি ওরাসকমের কাছে ১০০ শতাংশ শেয়ার ট্রান্সফারের টাকা না দেওয়া এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে সরকারকে বঞ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে সংস্থাটির অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের পরিচালক আফতাব মো. রাশেদুল ওয়াদুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিরীক্ষার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘একটা অডিট করা হয়েছিল। বিষয়টি বাংলালিংককে জানানো হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এখনো সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায়নি।’
এ বিষয়ে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘বাংলালিংক বিটিআরসির অডিট প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে সঠিকভাবে অডিট নিশ্চিত করতে পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে অডিট ফার্মের জমা দেওয়া অডিট রিপোর্ট পেয়েছি এবং এর ওপর আমাদের মতামত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে। মতামতের ভিন্নতা থাকলেও আমরা বিশ্বাস করি, বিটিআরসির সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার ও সহযোগিতার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
বিটিআরসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, অপরিশোধিত টাকার মধ্যে বিটিআরসি ৮১১ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৩ টাকা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৯ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ টাকা এবং যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) পাওনা ২ কোটি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫২ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।