জুমবাংলা ডেস্ক : সাধারণত শীত এলেই সামনে আসে পিঠাপুলির কথা। সকাল সকাল গাছ থেকে খেজুরের রস নামিয়ে পিঠা বানানোর তোড়জোড়। ভাপ ওঠা চুলার চারদিকে শিশু-কিশোরদের অপেক্ষা—কখন নামবে পিঠার হাঁড়ি, কে কত পিঠা খাবে তার প্রতিযোগিতা।
গ্রামবাংলার চিরাচরিত ওই রীতি এখন আর হয়তো খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে শীতের এই অনুষঙ্গ থেমে নেই মোটেও। শীতের শুরুতেই শহর বা গ্রামের অলিগলিতে জমে ওঠে মৌসুমি পিঠার দোকান। সেখানে মেলে হরেক পদের পিঠা। এই পিঠা কারও বাড়তি আয়ের উৎস, কারওবা জীবিকার প্রধান মাধ্যম।
বগুড়া শহরের খান্দার এলাকায় কারমাইকেল সড়কের শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের ঢোকার গেটের পাশে এমনই একটি পিঠার দোকান বেগুনি বেগমের। খানিকটা বড় পরিসরেই এ পিঠার দোকান। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে এখানে পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। বেগুনী খালা নামেই তিনি সবার কাছে বেশি পরিচিত।
মাটির চুলা। চুলার কয়েকটি জ্বালামুখ। তাতে তৈরি হচ্ছে চিতই, ভাপাসহ নানা পিঠা। এর পাশেই ছোট ছোট বাটিতে থরে থরে সাজানো শর্ষে, মরিচ, চেপা শুঁটকিসহ নানা স্বাদের ভর্তা। সেখানে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ খাচ্ছেন, কেউবা কাগজের ঠোঙায় মুড়িয়ে পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
বেগুনি খালার দোকানে ছয়জন কর্মচারী রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বেগুনি খালার পিঠা মানেই অন্যরকম স্বাদ। একের পর এক লাইন ধরে পিঠা কেনেন ক্রেতারা। দূর-দূরান্ত থেকেও আসছেন অনেকে। বেগুনি খালার পিঠার সুনাম বগুড়াসহ আশেপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। গরম পিঠা খেতে বিকাল থেকে ভিড় লেগে থাকে দোকানে। শহরের বিভিন্ন স্থানে শীতকালীন নানা ধরনের খাবারের দোকান থাকলেও বেগুনি খালার দোকানের পিঠার জনপ্রিয়তা সবার ওপরে।
পিঠার দোকানে বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় পিঠা খাওয়ার ধুম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেগুনি খালার সাতটি মাটির চুলায় পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত তার কর্মচারীরা। যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই তাদের। কোনো চুলায় মিষ্টি কুশলী, কোনো চুলায় ঝাল কুশলী, আবার একটি চুলায় ঝাল পিঠা, অন্যগুলোতে চিতই, তেল পিঠা, চালের ঝাল পিঠাসহ নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা হচ্ছে।
দোকানের কর্মচারী মালেকা বিবি জানান, নারিকেলের মিষ্টি কুশলী প্রতিটি ১০ টাকা, ঝাল কুশলী ১০ টাকা, বুটের কুশলী ৮ টাকা করে, ভাপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই পিঠা ১০ টাকা, তেল পিঠা ২০ টাকা, চালের ঝাল পিঠা ১৫ টাকা, ডিমের ঝাল পিঠা ২৫ টাকা করে বিক্রি হয়।
বেগুনি বেগম জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি পিঠা বিক্রি করে আসছেন। শুরুতে তিনি নিজেই পিঠা তৈরি করতেন। বর্তমানে ক্রেতার চাহিদা বাড়ায় তার দোকানে ৬-৭জন কর্মচারী রেখেছেন। দিন হিসেবে তাদের বেতন দেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেন। শীতের সময় সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হয়। প্রতিদিন সব খরচ মিটিয়ে ১ থেকে ২ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে বলেও জানান তিনি।
কর্মচারী সালমা বেগম ও রহমত আলী বলেন, শীত আসতেই দোকানে কাজের চাপ থাকে অনেক। পিঠা বানানো থেকে সব কিছু করতে হয়। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত থাকতে হয় সবসময়।
বেগুনি বেগম জানান, তার স্বামী ইদ্রিস আলী বেপারী, সহযোগী রাবেয়া বেগম, সিফাত, করিমুল্লাহসহ আরও দুজন প্রত্যেক বছর শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পিঠা-পুলির ব্যবসা করেন। তাদের সবার বাড়ি শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এলাকায়।
তরুণ সহযোগী সিফাত জানান, বেগুনি বেগম ও তার স্বামী ইদ্রিস আলী সম্পর্কে তার দাদা-দাদি। বেগুনি বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে শীতকালীন পিঠা-পুলির ব্যবসা করছি। শীত শেষে অন্য কাজ করি।’
তিনি জানান, বিকাল হলেই পিঠার দোকান দিয়ে বসেন। প্রতিদিন ৪০ কেজি চাল ভাংগান তিনি। সেই চালের গুড়া দিয়ে তৈরি করে থাকেন হরেক রকমের বাহারি পিঠা। পিঠা পুলির দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে খুব ভালো ভাবেই চলে যায় তার সংসার। পিঠা কিনতে আসা মামুন শেখ বলেন, শীতের শুরুতেই জমে উঠে বেগুনি খালার পিঠার দোকানে ভিড়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে পিঠা খেয়ে আবার বাসার জন্য নিয়ে যাই। খুব ভালো লাগে খালার হাতের পিঠা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।