জুমবাংলা ডেস্ক : ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘বরিশালের বস’। ওজন, আকৃতি ও স্বভাবে বসসুলভ আচরণে নামকরণের প্রমাণ মেলে। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় বেড়ে ওঠা ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ওজন ২ হাজার ২০০ কেজি বা ৫৫ মণ।
কাঁঠাল খেতে ভালোবাসে বরিশালের বস। অনায়াসেই একসঙ্গে চার-পাঁচটি কাঁঠাল সাবাড় করে দিতে পারে। এ জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে ষাঁড়টির খাদ্যতালিকায় খামারি প্রতিদিন কাঁঠাল রাখেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড়বাশাইল গ্রামের শামীম সিকদারের খামারে তিন বছর ধরে বেড়ে উঠেছে ষাঁড়টি।
নামকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে খামারি শামীম বলেন, তাঁর জানা মতে, বরিশাল জেলায় এমনকি বিভাগে এত বড় গরু দ্বিতীয়টি নেই। তাই নাম রেখেছেন ‘বরিশালের বস’।
বাবার গরুর ব্যবসা থেকেই ছোটবেলা থেকেই শামীমের গরু পালন শুরু। ২০১২ সালে ২০টি দেশি গরু দিয়ে তিনি খামার শুরু করেন। এখন তাঁর খামারে ৯৭টি গরু আছে। এর মধ্যে দুটি গাভি। প্রতিদিন একেকটি গাভি ১৮ থেকে ২২ কেজি করে দুধ দেয়।
শামীম বলেন, বিশালদেহী ষাঁড়টি মূলত অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের। তিন বছর আগে খুলনার শাহাপুর এলাকা থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুরটি কিনেছিলেন। তখন বয়স ছিল এক বছর। এরপর তাঁর খামারে নিয়ে এসে লালনপালন করেন। যত্নআত্তিতে ষাঁড়টি ওজনে-আকারে ‘বস’–এ পরিণত হয়েছে।
শামীম সিকদার জানান, তিন বছরে ষাঁড়টির খাবারের পেছনে খরচ হয়েছে ছয় লাখ টাকার বেশি। এর বাইরে আনুষঙ্গিক আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৫৫ মণ। উচ্চতা সাড়ে ৬ ফুট, লম্বায় সাড়ে ১০ ফুট। প্রতিদিন ষাঁড়টির পেছনে খাবার বাবদ খরচ হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ভুসি, চিটাগুড়, খৈল, ছোলা, খুদের জাউ, ঘাস ইত্যাদি খেয়ে বড় হয়েছে ‘বরিশালের বস’।
শামীম বলেন, ষাঁড়টি কাঁঠাল খেতে খুব পছন্দ করে। এ জন্য খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন কাঁঠাল রাখেন। চার-পাঁচটি কাঁঠাল অনায়াসে সাবাড় করে ফেলতে পারে। পেট ফাঁপার কারণে এর বেশি খাওয়ান না। শামীমের দাবি, মোটাতাজাকরণে ষাঁড়টিকে কোনো ধরনের ওষুধ বা অন্য কোনো কৃত্রিমপন্থা অবলম্বন করেননি।
শামীমের খামারে ‘বরিশালের বস’ ছাড়াও ছোট–বড় ৯৮টি গরু আছে। এর মধ্যে ষাঁড়টির আচরণ কিছুটা আলাদা। এমনিতে সব সময় শান্ত থাকে। তবে রেগে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
গত সপ্তাহে ‘বরিশালের বস’কে ট্রাকে চড়িয়ে বরিশাল নগর ও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর শহরে প্রদর্শন করা হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য লোক ষাঁড়টি দেখতে আসছেন। নির্জনতাপ্রিয় ‘বরিশালের বস’ এতে কিছুটা বিরক্ত। রুচিও কমে গেছে।
ক্রেতাদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে শামীম বলেন, প্রতিদিনই ষাঁড়টি দেখতে খামারে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। ঈদ এগিয়ে এলেও এখনো সেভাবে ক্রেতা আসছেন না। বড় গরুর হাট বা অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য। তাই বাজারে না তুলে খামারে বিক্রি করতে চান। প্রয়োজনে দামে কিছুটা ছাড় দিতে রাজি তিনি।
এখন পর্যন্ত কত দাম উঠেছে—প্রশ্ন করলে শামীম বলেন, কয়েকজন গরুটি দেখতে এসেছেন। কিন্তু তাঁরা বরিশালের বাইরের। দামে পরতা না হওয়ায় রাজি হননি। একজন ক্রেতা ২২ লাখ টাকা দাম বলেছেন। ব্যয় ও লাভ মিলে পরতা না হওয়ায় রাজি হননি। ৩০ লাখ টাকার বেশি দাম হলে বিবেচনা করবেন।
শামীম আরও বলেন, ‘বরিশালের বসকে বিক্রি করার তেমন আগ্রহ নেই আমার। কারণ, আমি দেখতে চাই, গরুটি কত বড় হয়। ন্যায্য দাম পেলে বিক্রি করব, না হলে খামারে রেখে লালনপালন করব।’
আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, খামারি শামীম সিকদারের ষাঁড়টি উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু। তা ছাড়া আশপাশের উপজেলায় এত বড় গরু আর একটিও নেই। তিনি বলেন, বিশালদেহী এই ষাঁড়টির ক্রেতা বরিশাল অঞ্চলে পাওয়া কঠিন হবে। এ জন্য তাঁরা খামারিকে ঢাকা বা চট্টগ্রামের বড় হাটে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।