সিপন আহমেদ ও সাইফুল ইসলাম: ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরকে ক্লোজ করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তার সিন্ডিকেট বাহিনীর তিন সদস্য। তারা হলেন- এসআই মাসুদুর রহমান, সুমন চক্রবর্তী ও মুত্তালিব হোসেন। এরা ছিলেন ওসির ঘুস বাণিজ্যের সহযোগী। অথচ ওসি জাহিদুল ইসলামকে ক্লোজ করা হলেও তাদের বদলি করেই দ্বায় সেরেছেন পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত তিন এসআইয়ের মধ্যে সুমন চক্রবর্তীকে শিবালয় থানায়, মুত্তালিব হোসেনকে দৌলতপুর থানায় ও মাসুদুর রহমানকে ঘিওর থানায় বদলি করা হয়েছে। এসআই সুমন চক্রবর্তী ও মুত্তালিব হোসেন শিবালয় ও দৌলতপুর থানায় যোগদান করেছেন। আর এসআই মাসুদুর রহমান এখনো সিংগাইর থানায়ই রয়েছেন।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্য শুরু করে সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম। ওসি ও তার সিন্ডিকেট সদস্যদের ঘুস বাণিজ্যের তথ্য উঠে আসে পুলিশের এক বিশেষ প্রতিবেদনে। ওসি সিন্ডিকেটের ঘুস বাণিজ্য নিয়ে পুলিশ সুপারকে একাধিকবার তথ্য দেন সদ্য বদলি হওয়া সহকারি পুলিশ সুপার নাজমুল হাসানও। এ নিয়ে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ওসি জাহিদুল ইসলামকে ক্লোজ করা হয়।
এসআই সুমন চক্রবর্তীর ঘুস বাণিজ্যের কমপক্ষে দশটি ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। কবে, কিভাবে, কার কাছ থেকে তিনি কত টাকা ঘুস নিয়েছেন তা সংবাদে তুলে ধরা হয়েছে। এসআই সুমন চক্রবর্তী সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক সহকর্মী সিংগাইর থানার আরেক এসআই বলেন, ঘুস বাণিজ্যে সুমন চক্রবর্তী এতোটাই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল যে, আর কিছুদিন থাকলে হয়ত থানাটাই বিক্রি করে দিত।
এসআই মুত্তালিব সম্পর্কে ওই এসআইয়ের মন্তব্য আরও ভয়াবহ। এসআই মুত্তালিবকে তিনি বলেন, ভয়ংকর মুত্তালিব। তার মতে, এসআই মুত্তালিব অভিযানে গেলে কোনো না কোনো ঘাপলা থাকবেই। এজন্য সিংগাইর থানার কেউ তার সঙ্গে অভিযানে যেতে চাইতো না। তবে ওসির নির্দেশে যেতে বাধ্য হতো। কিছুদিন আগে এসআই মুত্তালিব ও ওসি তদন্ত মোশাররফ হোসেন একসঙ্গে অভিযানে যাওয়ার পর প্রশ্নবিদ্ধ হন মোশাররফ হোসেন। পরবর্তীতে ক্লোজড হন সিংগাইর থানার ওসি তদন্ত মোশাররফ হোসেন। বর্তমানে তিনি মানিকগঞ্জ ডিবিতে রয়েছেন।
এসআই সুমন চক্রবর্তী ও এসআই মুত্তালিব মামলার চেয়ে বিচার করতে বেশি পছন্দ করতেন। অধিকাংশ ঘটনা তারা থানার গোল ঘরে বসে বিচারের মাধ্যমে ফয়সালা করে দিতেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন বড় অংকের অর্থ। এসব অপকর্মের তথ্য পুলিশ সুপারকে জানানোর পর তাদের বদলি করা হয়।
এসআই সুমন চক্রবর্তী ও এসআই মুত্তালিব বদলি হয়ে যাওয়ার পর থানার একচ্ছত্র আধিপত্য পান এসআই মাসুদুর রহমান। বদলি হওয়া এসআইদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন তিনি। থানার গোল ঘরের বিচার কার্য পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে তার উপর। এ ছাড়া রাজনৈতিক মামলা তদন্তের দায়িত্বও দেয়া হয় তাকে। ফলে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দু’হাতে কামিয়ে নেন তিনি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে এসআই মাসুদের ঘুস বাণিজ্যের তথ্য। ফলে মাসুদকেও বদলি করা হয় ঘিওর থানায়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন বলেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।