ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ব্যস্ততম এলাকা জামতলা মোড়। বিকেলের ভিড়ভাট্টার মাঝে হঠাৎ করেই রাস্তার পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায় এক নারীকে। পথচারীরা কেউ দাঁড়িয়ে দেখে, কেউবা চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে যায়। একটু কাছে যেতেই বোঝা যায়, তিনি অসুস্থও।
কথা বলে জানা গেল, তার নাম লিলি বেগম। বাড়ি উপজেলার উস্থি গ্রামে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের দুর্গম গ্রাম থেকে তিনি এসেছেন শহরে—কেবল একটু সাহায্যের আশায়।
স্বামী নিখোঁজ, নিজেও অসুস্থ
লিলি বেগমের জীবনে একের পর এক আঘাত।
ছয়-সাত মাস আগে ক্যানসারে আক্রান্ত স্বামী রতন মিয়া নিখোঁজ হয়ে যান। সন্তান হয়নি, তাই স্বামীই ছিল তার সব। আজ তিনি একা। ঘরের দাওয়ায় বসে ভাঙা গলায় শোনালেন জীবনের দীর্ঘ দুঃখগাথা।
লিলির শৈশব কেটেছে টঙ্গীতে। জন্মদাতা পিতা আবুল হোসেন, আরেক সময় পালক পিতা সাক্কু সরদারের ঘর। ছোটবেলা থেকেই ভরণপোষণ অন্যের হাতে। ঝিয়ের কাজ, গার্মেন্টস, এমনকি ওমান ও সৌদি আরবেও কাজ করেছেন তিনি। জীবনে একটুখানি স্বস্তি বা নিরাপত্তা আসেনি।
বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
২০১৩ সালে গফরগাঁওয়ের উস্থি গ্রামের রতন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। কিছুদিনের সংসার শান্তিতেই কেটেছিল। কিন্তু হঠাৎ স্বামীর শরীরে ধরা পড়ে ক্যান্সার। চিকিৎসার জন্য ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ে পরিবার। শেষ পর্যন্ত রতন মিয়া এলাকা ছেড়ে চলে যান। আর ফিরেও আসেননি। এখন অসুস্থ লিলি বেগম বেঁচে আছেন কেবল মানুষের সহানুভূতির ভরসায়। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও নানা অসুখে জর্জরিত তিনি।
উস্থি গ্রামের প্রতিবেশীরা জানান, লিলির জীবনের দুঃখ-কষ্ট দীর্ঘদিনের। তারা বলেন, প্রায়ই তাকে উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে সাহায্য চাইতে দেখা যায়। নিজের কষ্ট নিয়ে তিনি মানুষের সামনে দাঁড়ালেও মুখে তবু বেঁচে থাকার আকুতি।
লিলির দুর্দশার কথা জানতে পেরে তার বাড়িতে যান ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, “লিলি বেগমের জীবনযুদ্ধ আমাদের নাড়া দিয়েছে। আমরা তার পাশে থাকব। দলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।”
এছাড়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকেও তার পাশে থাকার আশ্বাস মিলেছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “আমরা সরকারি নিয়মে লিলি বেগমকে সাহায্য করার উদ্যোগ নেব।
লিলি বেগম বলেন, “জীবনে কাউকে কাছে পাইনি। সবাই ছেড়ে গেছে। এখন শরীরও ভেঙে যাচ্ছে। আমি শুধু চাই সুস্থভাবে বাঁচতে। আরেকটা স্বপ্ন আছে—স্বামী ফিরে আসবে, আমি তার চিকিৎসা করাব।
লিলি বেগমের গল্প আসলে এক জীবনের নয়, প্রজন্মের বঞ্চনার প্রতিচ্ছবি। জন্ম থেকে বারবার হাতবদল হওয়া এই নারী আজ অসুস্থ শরীর নিয়েও বাঁচার লড়াই করে যাচ্ছেন। সমাজের কাছে তার এখন একটাই আবেদন—সামান্য সহায়তা, যাতে তিনি বাকি জীবনটা অন্তত মানবিকভাবে বাঁচতে পারেন।
সুত্র ও ছবি : কালেরকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।