জুমবাংলা ডেস্ক : বুধবার মধ্যরাতে প্রাথমিকের বৃত্তির ফল পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে যে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। নতুনভাবে প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ফল পরিবর্তন হয়েছে। আগে যারা বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়নি তারা এখন নতুন করে বৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
আবার আগে যারা বৃত্তি পেয়েছিল বলে ঘোষণা করা হয় নতুন তালিকায় তারা বাদ পড়েছে। ফল প্রকাশের এমন নাটকীয়তায় শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে ফলাফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কারিগরি ভুলের কারণে মূলত এ ঘটনা ঘটেছে। ফলাফল তৈরির সময় একাধিক উপজেলার কোড (কম্পিউটারের কাজের একটি ব্যবস্থা) একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে।
তাতে দেখা যায়, এমন ঘটনাও ঘটেছে, বৃত্তি পরীক্ষায় অংশই নেয়নি, এমন শিক্ষার্থীও বৃত্তি পেয়েছে। আবার আগের ফলাফলে যারা বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছে পরের ফলাফলে তারা বাদ পড়েছে। ফলাফল প্রকাশে এ ধরনের ভুলের ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। এখন সংশোধিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে অনেকের ফল পরিবর্তন হয়েছে।
কীভাবে ভুলটি হয়েছে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কারিগরি দলের গাফিলতির কারণেই এমন ভুলের ঘটনা ঘটেছে। আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ‘দায়িত্বহীন কর্মকান্ডের’ জন্য এখন হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে না হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের মতো করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল তৈরি করতে গিয়েই সমস্যাটি হয়েছে। ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হতো উপজেলাভিত্তিক। বৃত্তি পরীক্ষার ফল তৈরিতেও উপজেলাভিত্তিক ডেটা নিয়ে কাজ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের কোডের ক্ষেত্রে ভুল করা হয়েছে। এতে একাধিক উপজেলার কোড (কম্পিউটারের কাজের একটি ব্যবস্থা) একই হওয়ায় সমস্যাটি হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হয়তো ঝিনাইদহের একটি উপজেলার শিক্ষার্থীর যে কোড ছিল, তা হয়তো সুনামগঞ্জের কোনো উপজেলায়ও ছিল। কেন্দ্রীয়ভাবে ফল তৈরির জন্য ডেটা নিয়ে যখন কাজ করা হয়, তখন একই কোড হওয়ায় ফলেও ভুল হয়েছে। দুই কোড যখন এক হয়ে গেছে, তখন হয়তো যে শিক্ষার্থীর বৃত্তি পাওয়ার কথা নয়, সেও বৃত্তির তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে, আবার উল্টোটাও ঘটেছে। এমনকি নিবন্ধন করে পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও কেউ কেউ বৃত্তি পেয়ে গেছে।
রাজধানী ঢাকা ও বাইরের কয়েকটি জেলা ও উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে এমন বেশ কিছু অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে। রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ছিল প্রায় আড়াই শ। তাদের মধ্য থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬০ জন শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার প্রথম যখন ফল (ভুলের কারণে স্থগিত) প্রকাশ করা হয়, তখন দেখা যায়, বিদ্যালয়টি থেকে ৫ জন বৃত্তি পায়, সবাই মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল)। একজন শিক্ষক জানালেন, এ নিয়ে তাদের মন খারাপ ছিল।
তবে গত বুধবার রাতে সংশোধিত আকারে ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, এ বিদ্যালয় থেকে মোট ১৭ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ জন মেধা কোটায় বৃত্তি পেয়েছে। আর একজন পেয়েছে সাধারণ কোটায়। ওই শিক্ষক বললেন, এখন তারা খুশি। অন্যদিকে বুধবার রাতে সংশোধিত ফলাফলে দেখা গেছে আগে বৃত্তি পেলেও এখন অনেক বিদ্যালয় থেকেই কেউ বৃত্তি পায়নি। এটি যেমন তাদের জন্য বিব্রতকর, তেমনি ওই শিশুর জন্যও মন খারাপের বিষয়। এমনটি কাম্য ছিল না।
বুধবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফল প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই সঙ্গে আগের ফলে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা। তবে সংশোধিত তালিকায় সারা দেশে কতজন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানাতে পারেননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা।
তবে তারা জানান, প্রথমত যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও ভুলের কারণে বৃত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল তারা যেমন বাদ গেছে, তেমনি যারা বৃত্তি পাওয়ার কথা নয়, এমন অনেকের নাম সংশোধিত ফলাফলে বাদ গেছে। আবার নতুন করেও অনেকে বৃত্তি পেয়েছে।
গত বছর প্রাথমিক বৃত্তির মোট কোটা ৮২ হাজার ৫০০টি। অবশ্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুল) বৃত্তি পেয়েছে ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। এর মধ্যে মেধা কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। এ ছাড়া বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থী বছরে এককালীন ২২৫ টাকা করে পায়।
তৃতীয় শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের কোডিং শেখানো হবে: শিক্ষামন্ত্রী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।