জুমবাংলা ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন আজ রোববার সকাল থেকে আগের মতোই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা দেখা যায়। তবে সবার চোখে-মুখে ছিল অদ্ভুত এক শূন্যতা। তারা যে কেউ ভুলতে পারছেন না আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা। তাই দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে ফেরা সবার আলোচনা ছিল এক আবু সাঈদকে ঘিরেই।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বুধবার খুলে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেন। আজ দুপুরে সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের পদচারণা আছে, তবে নেই আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য। সারাক্ষণ আড্ডা, আনন্দে মেতে থাকা ক্যাম্পাস অনেকটাই যেন সুনসান। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা এখনও আবু সাঈদের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ ছিলেন ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পার্কের মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের বন্দুকের সামনে দুই হাত উঁচিয়ে বুক পেতে দাঁড়ান আবু সাঈদ। অকুতোভয় সেই বুকেই গুলি চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ যায় আবু সাঈদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাঈদকে গুলি করার সেই ভিডিও দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। এরপর থেকেই আন্দোলন পায় অন্য গতি।
আজ ক্যাম্পাসের সব স্থানেই ছিল আন্দোলন ও আবু সাঈদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। আবু সাঈদের কাছের বন্ধু ইংরেজি বিভাগেরই শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন বুলেট বলেন, ‘আমরা কেউই ভালো নেই। আবু সাঈদকে ছাড়া সবাই কেমন জানি আনমনা হয়ে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে আমি বন্ধু রিপনের জন্য সালামের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আর আবু সাঈদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করত পার্কের মোড়ে। এরপর তিনজন একসঙ্গে ক্লাসে যেতাম। ফিরতামও একসঙ্গে। ফেরার পথে আবু সাঈদ বলত, বুলেট আজকে তুই খাওয়াবি। ক্যাম্পাসে ঢুকেই যেন ওর কণ্ঠটা শুধু কানে আসছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৬ জুলাই আমরা কী অপরাধ করেছিলাম যে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাওয়ার কারণে আমার বন্ধু সাঈদের প্রাণ নিয়ে নিল। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতিহুল ইসলাম শোভন বলেন, দেশের মানুষের স্বাধীনতা ফেরানোর পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আবু সাঈদ। তিন মাস পর ক্লাস শুরু হলো, অথচ সেই ক্লাসে নেই আবু সাঈদ। তাঁর শূন্যতা আমাদের সবাইকে পোড়াচ্ছে। আবু সাঈদের সহপাঠী আবদুস সাফি ও শামসুর রহমান সুমন জানান, আবু সাঈদ ছাড়া ক্লাসে তাদের মন বসছে না। বারবার শুধু তাঁর কথাই মনে পড়ছে।
আবু সাঈদের শিক্ষক কাশফিয়া ইয়াসিন বলেন, ‘যে ছেলেটা দাবি আদায়ের জন্য জীবন দিয়ে গেল, তাকে কী ভোলা যায়! তার যে শূন্যতা তা পূরণ করার নয়।’
আবু সাঈদ থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নম্বর গেটের সামনে পপি ছাত্রাবাসে। তাঁর কক্ষটি এখনও ফাঁকা রয়েছে। অগোছালো কক্ষটিতে গিয়ে দেখা যায়, টেবিলে পড়ে আছে বিপ্লবী স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। পাশের কক্ষে থাকা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আবু সাঈদ বৈষম্যের বিষয়ে ছিল আপসহীন। তাঁর এই মানসিকতা আমাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় অহেতুক সময় নষ্ট না করে সে টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাড়িতেও টাকা পাঠাত। অথচ শেষ দিন পর্যন্ত ছাত্রাবাসে তাঁর এক টাকাও বকেয়া ছিল না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।