সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ বিভিন্ন সরকারি অফিসের সেবার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকলেও সেবার মানে অনন্য নজির গড়েছে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। কর্তৃপক্ষের সেবাদান নিয়ে খুশি সেবা প্রত্যাশী ও গ্রহীতারা। কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ আর নজরদারিতে গতি পেয়েছে ডিজিটাল সেবাদান কার্যক্রম। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রতিটি স্তরে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট পেতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ আবেদন জমা পড়ছে। অনলাইনে জমা দেয়া এসব আবেদনের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে গড়ে ১৮০ থেকে ১৯০ টি ই-পাসপোর্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই মিলছে পাসপোর্ট। আবেদনকারী চাইলে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে তার আবেদন সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য জেনে নিতে পারছেন।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবেদন জমা পড়েছিল ৫০ হাজার ৬৪৪টি। এরমধ্যে ৪৯ হাজার ৪৩টি পাসপোর্টের আবেদন নিষ্পত্তি করে গ্রহীতা বা সেবা প্রত্যাশীদেরকে ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১ হাজার ৬০১টি আবেদন নানা কারণে পেন্ডিং রয়েছে। পেন্ডিং আবেদনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১২ জুলাই) সরেজমিনে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে গতি পেয়েছে সেবাদান কার্যক্রম। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সেবা পেয়ে খুশি সেবা গ্রহীতারা।
জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা গ্রামের মোহাম্মদ শান্ত বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট প্রয়োজন ছিল। দ্রুত পাসপোর্ট প্রয়োজন শুনে অনেকেই সহযোগিতার নামে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্ত আমি নিজে নিজে আবেদন করে পােসপোর্ট অফিসে এসে দেখি এখানে কোন ঝামেলা ছাড়াই সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার স্যারেরাও যথেষ্ট আন্তরিক। আবেদনের এক মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়েছি। ঈদের বন্ধ না থাকলে মনে হয় আরো আগে পেতাম।’
সিংগাইর উপজেলার জামশা গ্রামের শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার পাসপোর্ট ও এনআইডি কার্ডের মধ্যে জন্ম তারিখ ও নামের বানান গড়মিল ছিল। আমার এলাকার অনেকেই বলেছিল পাসপোর্ট সংশোধন করতে অনেক সময় ও টাকা লাগবে। কিন্ত অনলাইনে আবেদন করার পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়েছি। অতিরিক্ত টাকাও লাগেনি। মানিকগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান অনেক ভালো।
পাসপোর্ট অফিসের সেবার মানে সন্তষ্টি প্রকাশ করে একই উপজেলার বায়রা গ্রামের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য না বুঝে এক দালালকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। পরে পাসপোর্ট অফিসে এসে দেখি দালাল মিথ্যা অজুহাতে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, সে কোন কাজই করেনি। এখানে পাসপোর্ট অফিসের বড় স্যারের সাথে সরাসরি কথা বলা যায়।কোন সমস্যা থাকলে কিভাবে কি করতে হবে উনি নিজে পরামর্শ দেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করার পর অতিরিক্ত টাকা ছাড়া খুব সহজেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। পরে বুঝলাম, মানুষ না বুঝেই শুধু দালালের কাছে যায়, নিজেদের কাজ নিজেরা চেষ্টা করলে সহজেই সমাধান পায়া সম্ভব।’
মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘সেবা প্রত্যাশীদেরে ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদানে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছি এবং অনেক দালালকে জরিমানা করা হয়েছে। অধিকাংশ আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। পুলিশ নেগেটিভ রিপোর্ট, মাল্টিপল একটিভ পাসপোর্ট, ব্যাকেন্ড ভেরিফিকেশনসহ নানা কারণে অল্প কিছু আবেদন পেন্ডিং আছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।’
সাধারণ জনগণকে নতুন পাসপোর্ট বা সংশোনের ক্ষেত্রে দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে অনলাইনে আবেদন করে সরাসরি নিজে এসে সেবা নেয়ার আহবানও জানান ওই কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।