সাইফুল ইসলাম : বদলি–সংক্রান্ত জটিলতাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ে চরম অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে বদলি হলেও সার বিভাগের উপসহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান এখনো কার্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, বদলি আদেশ অমান্য করার পাশাপাশি তিনি সহকর্মীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা এবং সার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার মতো গুরুতর কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
বদলি ঠেকাতে নানা কৌশল, কার্যালয়ে তালা
বিএডিসির সার বিভাগের উপসহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর মানিকগঞ্জ কার্যালয়ে যোগদান করেন। চাকরিবিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর বদলি হওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি টানা প্রায় পাঁচ বছর একই কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
চলতি বছরের ১০ অক্টোবর তাকে নিজ জেলা টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়। তবে বদলি আদেশ কার্যকর না করে তা ঠেকাতে তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই দিনে রাজশাহী থেকে মানিকগঞ্জে বদলি হয়ে আসা উপসহকারী পরিচালক আজমিরা খাতুনকে কার্যালয়ে যোগদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে উচ্চপর্যায়ের তদবিরে নিজের বদলি আদেশ বাতিল করান মেহেদী হাসান। নতুন আদেশে দুজনকে স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও আদালতের স্থগিতাদেশ জারির পরও তিনি মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে তালা ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে দাপ্তরিক কাজকর্ম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
সহকর্মীর গায়ে গরম চা নিক্ষেপের অভিযোগ
আজমিরা খাতুন অভিযোগ করেন, মানিকগঞ্জ কার্যালয়ে যোগদান করতে গেলে মেহেদী হাসান তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে তার শরীরে গরম চা ছুঁড়ে মারা হয়। এ ঘটনায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি জানান, দায়িত্ব বুঝে নিতে অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে কক্ষ তালাবদ্ধ রাখা হয়। ফলে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকলেও কোনো দাপ্তরিক কাজ করতে পারছেন না। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি তার।
বিষয়টি গড়িয়েছে উচ্চ আদালতে
বদলি সংক্রান্ত বিরোধ একপর্যায়ে উচ্চ আদালতে গড়ায়। আজমিরা খাতুন বদলি আদেশ বাতিলের বিরুদ্ধে রিট করলে আদালত উভয়ের বদলি সংক্রান্ত আদেশ স্থগিত করে স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে, আদালতের নির্দেশের পরও মেহেদী হাসান তা মানছেন না। তিনি কার্যালয়ের কক্ষ তালাবদ্ধ রেখে প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এতে সরকারি কাজে অচলাবস্থার পাশাপাশি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগ
দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুযোগ নিয়ে মেহেদী হাসান একটি সার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, ডিলারদের কাছ থেকে সার সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হয়। এতে মৌসুমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয় এবং কৃষকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটে তিনি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ফলে বদলি হয়ে অন্যত্র গেলে সেই বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকেই তিনি যেকোনো মূল্যে মানিকগঞ্জে অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে উপসহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, “আমি বর্তমানে গ্রীণরোডে অবস্থিত যুগ্ম পরিচালকের কার্যালয়ে সংযুক্তিতে রয়েছি। একইসঙ্গে আমি এখনো মানিকগঞ্জে কর্মরত। এ কারণেই অফিস কক্ষে তালা দিয়ে রেখেছি।”
আজমিরা খাতুন বলেন, “আমি নিয়মিত অফিসে যাচ্ছি। কিন্তু অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় কোনো কাজ করতে পারছি না।”
সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, “এমনিতেই অফিসে জনবল সংকট রয়েছে। এর মধ্যে বদলিজনিত জটিলতায় চাপ আরও বেড়েছে। আমাকে একাই তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে গুদামঘর তদারকিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



