জুমবাংলা ডেস্ক : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ১১ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন পুলিশ লাইন্সে বুধবার (৭ আগস্ট) কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন অধস্তন পুলিশ সদস্যরা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার, ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করতে বাধ্য না করা, বেশি ডিউটি করলে ওভার ডিউটির সুবিধা প্রদান, শুক্রবার-শনিবারসহ সব সরকারি ছুটি ভোগের সুযোগ প্রদান, দেশের স্বার্থে ছুটি কাটাতে না পারলে অতিরিক্ত কর্মদিবস হিসাবে আর্থিক সুবিধা প্রদান, সোর্স মানি প্রদান, ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশদানে সংবিধান ও জনগণের মনের কাঙ্ক্ষিত বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া, পুলিশকে রাজনীতিমুক্ত রেখে নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা, পদোন্নতির পদক্ষেপ গ্রহণ করে বৈষম্য দূর করা, বদলির ক্ষেত্রে নিজ জেলার নিকটবর্তী জেলার প্রাধান্য নিশ্চিত করা, পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়ন করা। কর্মসূচিতে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদের পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বিক্ষোভ : রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পুলিশবাহিনীর সদস্যরা। বুধবার দুপুরের দিকে একাডেমির ভেতরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি একাডেমির ভেতরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা স্লোগান দেন, পুলিশ সদস্য মরল কেন বিচার চাই, বিচার চাই। স্লোগানে স্লোগানে একাডেমি এলাকাসহ আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমরা দেশের জানমালের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনকালে আমাদের নিরীহ সদস্যদের খুন করা হয়েছে। আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছিলাম। তাহলে কেন আমাদের থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের হত্যা করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ একাডেমির একজন উপপরিদর্শক বলেন, আমরা সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের সহকর্মীরা মারা যাবেন আর সিনিয়র অফিসাররা ঘরে বসে থাকবেন, এটা হবে না। তিনি বলেন, রাজশাহীর অনেক সিনিয়র অফিসার পুলিশ একাডেমিতে এসে আÍগোপনে ছিলেন। আমাদের দাবি, তারা একাডেমিতে থাকতে পারবেন না। এ সম্পর্কে পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, আসলে বিক্ষোভ নয়, তারা কিছু কথা বলেছেন।
গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল : গোপালগঞ্জে ১১ দফা দাবিতে প্রথম দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন জেলায় কর্মরত সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। বুধবার সকাল ১০টায় পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ মিছিল করেন পুলিশ লাইন্সে কর্মরত সদস্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা। পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকের সামনে থেকে এসআই, এএসআই ও কনস্টেবলরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি ব্যারাকের সামনে থেকে পুলিশ লাইন্সের মূল ফটকের কাছে এসে শেষ হয়। সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
শেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ : শেরপুরে অধস্তন পুলিশ কর্মচারীদের কর্মবিরতি, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বুধবার দুপুরে শেরপুর পুলিশ লাইন্সে প্রায় সাড়ে ৮০০ এসআই, এএসআই, নায়েক ও কনস্টেবল পুলিশ লাইন্সের ভেতরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চাই’। পুলিশ সংস্কারের ১১ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে ফিরে যাবেন না বলে জানান তারা। তারা বলেন, পুলিশের বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাবে থেকে নিজেরা সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। মরতে হচ্ছে নিরীহ অধস্তন পুলিশ সদস্যদের। নিগৃহীত হতে হচ্ছে সমাজের চোখে। শেরপুর পুলিশ লাইন্সে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক সাব্বির বলেন, পুলিশের ব্রিটিশ আইন রহিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুলিশকে স্বাধীন অর্থাৎ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশকে সত্যিকারের জনগণের বন্ধু হিসাবে রূপান্তরিত করা হোক।
রাজশাহীতে বিক্ষোভ : বুধবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) লাইন্সে বিক্ষোভ করেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তাদের শান্ত করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন শাহ মখদুম জোনের উপকমিশনার (ডিসি) নূরে আলম সিদ্দিকী। পরে সেনা সদস্যরা তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, সরকারের পতন হচ্ছে, তা আগের দিনই টের পেয়েছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তখন ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা নিরাপদ স্থানে চলে যান। অথচ সরকার পতনের দিনও শিক্ষার্থীদের দমন করতে সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মাঠে নামানো হয়। এর ফলে থানায় ঢুকে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের এসব হতাহতের জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে বলে তারা মনে করেন। এজন্য তারা ‘দায়িত্বহীন’ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার চান। বিক্ষোভ থেকে আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারের সমালোচনা করা হয়।
মাদারীপুরে বিক্ষোভ মিছিল : মাদারীপুর পুলিশ লাইন্সে কর্মরত সদস্যরা বুধবার দুপুরে পুলিশ লাইন্সের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা বলেন, পুলিশ সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে। তারা কোনো সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করবে না। পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চায়। পুলিশ কোনো এমপি-মন্ত্রীকে প্রটোকল দেবে না। পুলিশ কোনো সিনিয়র অফিসারকে প্রটোকল দেবে না। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম, নিরব আহমেদসহ অন্য সদস্যরা।
বরিশালে সংবাদ সম্মেলন : বুধবার দুপুর ১টায় বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সদস্যরা বলেন, ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই আমরা দেখেছি, আমাদের অভিভাবকরা কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়াই আত্মগোপনে চলে যান, যা আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেয়। যথাযথ নির্দেশনার অভাবে আমরা অনেক পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছি। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ সময় লিখিত বক্তব্যে দেশবাসীর উদ্দেশে পুলিশ সদস্যরা বলেন, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসাবে এবং সরকারি আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খুবই ক্ষীণ। তথাপিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই পুলিশের অধিকাংশ সদস্য মৌনভাবে একাত্মতা পোষণ করে এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনী একটি চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করে চলে। সে অনুযায়ী পুলিশবাহিনীর অধস্তনরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই পুলিশ বাহিনী আজ ছাত্র-জনতার মুখোমুখি। তারা দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মুক্তিকামী সাধারণ ছাত্র-জনতা কখনোই এসব ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের পক্ষে না। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসাবে আমরা সর্বদা জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে আইন অনুযায়ী বদ্ধপরিকর। আমরা বিভিন্ন পুলিশ লাইন্স, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স এবং যানবাহনে ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানাই।
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ : চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কয়েক শ পুলিশ বুধবার বিকালে বিক্ষোভ করেছেন। এতে কনস্টেবল থেকে ইনস্পেকটর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন পুলিশ সদস্যরা। অধস্তন পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার, থানা, ফাঁড়িসহ কোথাও কোনো পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন না। কনস্টেবল থেকে পুলিশ কমিশনার পর্যন্ত অনেকেই আত্মরক্ষার্থে গা ঢাকা দিয়েছেন। বুধবার বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ সদস্যরা সদ্যবিদায়ি আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিসি হারুন, বিপ্লব কুমার, ওসি মহসীনসহ তাদের যে সিন্ডিকেট পুলিশবাহিনীকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছে এবং বিপদের সময় তাদের ফেলে লুকিয়ে গেছে, তাদের বিচার দাবি করা হয়। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।