সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মা ইলিশ রক্ষায় সারাদেশে ইলিশ ধরার ওপরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর-শিবালয়-দৌলতপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারে মেতে উঠেছেন জেলেরা। পেশাদার জেলেদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মৌসুমি জেলেরা। হাট-বাজারে ইলিশ বিক্রি করতে না পেরে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী হাট বসিয়েছেন তারা। ভ্রাম্যমাণ এসব হাটে ইলিশ বেচা-কেনার উৎসব করছেন জেলে ও ক্রেতারা।
পদ্মা-যমুনায় অবাধে ইলিশ শিকার হলেও স্থানীয় প্রশাসন নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানান স্থানীয়রা। মাঝে মাঝে অভিযান চললেও ইলিশ শিকার চলে রাতদিন ২৪ ঘন্টাই। পদ্মা-যমুনায় মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। ফলে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞার কোন সুফল দেখা যাচ্ছেনা বলেও জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে রবিবার দুপুরে হরিরামপুর উপজেলার সুতালড়ি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রাম চর, ভগবান চর, নটাখোলা চরসহ আজিমনগরের হাতিঘাটা এলাকায় পদ্মা নদীতে জেলেদের ইলিশ মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। সোমবার সকালে দৌলতপুরের বাচামারা, বাঘুটিয়া ও চরকাটারী এলাকায় এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া চর, তেওতা, দক্ষিণ তেওতা, গান্ধাইল, সাতুইরে ও জাফরগঞ্জ এলাকার যমুনা নদীতে জেলেদের অবাধে মা ইলিশ শিকার করতে দেখা যায়। এছাড়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় অস্থায়ী হাট বসিয়ে অবাধে ইলিশ বিক্রির দৃশ্যও চোখে পড়ে। দাম কমের আশায় দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারাও এসে ভীড় করছেন এসব অস্থায়ী হাটে।
শিবালয়ের তেওতা এলাকায় ইলিশ মাছ শিকারি ইসরাফিল হোসেন বলেন, গতকাল (রবিবার) সারাদিনে আধামণের মত মাছ মেরেছিলাম। আজকেও আধামণের কাছাকাছি ইলিশ ধরেছি। তবে আজকেরগুলো সাইজে একটু ছোট। ছোটগুলো ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি এবং এক কেজি সাইজের গুলো এক হাজার থেকে এগারো শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।
একই এলাকার রুবেল নামের আরেক ইলিশ শিকারি বলেন, এই বছর প্রশাসনের অভিযান তুলনামূলক অনেক কম, তাই এই বছর অনেকটা আরামেই ইলিশ মাছ ধরি। তবে পুলিশ এসে মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করে। পুলিশ এসে মাছ পেলে সব মাছ নিয়ে যায় আর লোক ধরলে কিছু টাকা দিলেই আবার ছেড়ে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ইলিশ শিকারি বলেন, পুলিশ প্রতিদিনই অন্তত একবার আসে । এসে যত ইলিশ মাছ পায় সব নিয়ে নেয়। পরে ওই ইলিশের অধিকাংশই তারা নিজেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর ক্রেতা সেজে দক্ষিণ তেওতা এলাকায় মাছের খোঁজ করলে স্থানীয় জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাড়িতে ১০-১২ কেজি মাছ আছে, লাগলে নিতে পারেন। পরে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ঘরের ভেতরে গেলে নদী থেকে কিছুক্ষণ আগে শিকার করা ইলিশ মাছ দেখান তিনি। এসময় দাামে পোষায় না বলে মাছ কিনতে না চাইলে আশপাশের আরো কয়েকজন এগিয়ে এসে তাদের বাড়িতেও মাছ আছে বলে জানান।
হরিরামপুর উপজেলার হরিনাঘাট এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, বর্তমানে পদ্মায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ভালো দাম পাওয়ায় আশায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু জেলেরা মাছ ধরে। এদিকে প্রশাসনের অভিযান ও তৎপরতা কম থাকায় জেলেরা অবাধে ইলিশ মাছ শিকার করছে।
শিবালয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নুরুল ইকরাম বলেন, হরিনাঘাট থেকে আজকেও ৩০ হাজার মিটার জাল এবং ৩০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছি। জব্দ করা মাছগুলো এতিমখানায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। ইলিশ শিকারের সাথে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা মা ইলিশ রক্ষায় তৎপর রয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে পাটুরিয়া ঘাট নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই, তাই জেলেরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে। গতকাল ১৮ জনকে আট করেছি, আজও দুই জনকে আটক করেছি। আর যেসব মাছ জব্দ করি সেগুলো এতিমখানায় দিয়ে দেয়া হয়।
মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের গাফলতি নেই উল্লেখ করে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুর রহমান বলেন, আমার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি, সকলে মিলে সফলভাবে ইলিশ নিধন বন্ধ করেছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।