জুমবাংলা ডেস্ক : চিকেন তন্দুরি কিংবা তন্দুরি রুটির নাম অনেকেই শুনেছেন। তবে এই ‘তন্দুরি’ শব্দটির সঙ্গে শুধু চিকেন বা রুটি শব্দটিই যুক্ত হয়নি, যুক্ত হয়েছে চায়ের নামও- তন্দুরি চা। চা-প্রেমীদের জন্য অভিনব এই রেসিপি নিয়ে এসেছে ভিন্ন স্বাদ।
পুরান ঢাকার জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা লক্ষ্মীবাজার। লক্ষ্মীবাজার দিয়ে হেঁটে যেতে চোখ আটকে যাবে এক চায়ের দোকানে, যেখানে সারি সারি সাজানো মাটির কাপ এবং উত্তপ্ত কাপে পুড়ে যাওয়া চায়ের কড়া ঘ্রাণ আকৃষ্ট করবে যে কাউকে। বলছি লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের সামনে ‘জাফরানি তান্দুরি চা’ নামে দোকানটির কথা। এখানেই মিলবে তন্দুরি চা।
দোকানটিতে ৭ প্রকার তন্দুরি চায়ের স্বাদ ভিন্ন মূল্যে নিতে পারবেন আপনি। তন্দুরি মালাই চা, চকলেট চা ও তন্দুরি কফি ৩০ টাকা, পনির চা ৩৫ টাকা, জাফরানি মিল্ক ও জাফরানি চা ৪০ টাকা এবং জাফরানি মালাই চা ৬০ টাকা প্রতি কাপ বিক্রি হয়। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানটি খোলা থাকে।
দোকানের কর্ণধার আজাদ খান হলেও পরিচালনা করেন শহীদ ইসলাম ও কর্মচারী মাসুম। তন্দুরি চা বাংলাদেশে কীভাবে এলো এমন প্রশ্নে শহীদ ইসলাম বলেন, তন্দুরি চা মূলত ভারতের। তবে আমরা প্রায় তিন বছর ধরে এই চা বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় তন্দুরি চা পাওয়া গেলেও পুরান ঢাকায় আমরাই প্রথম এই চা বিক্রি শুরু করি।
তিনি আরও জানান, দৈনিক প্রায় ৩০০ কাপ তন্দুরি চা বিক্রি হয়। তবে শুক্রবার ও বিভিন্ন ছুটির দিনে চা বিক্রি বেড়ে যায়। দোকানটিতে তন্দুরি চা পান করতে আসা তাসনিম আক্তার বলেন, মাটির পোড়া কাপ চায়ের স্বাদে ভিন্নতা আনে। এ কারণে সুযোগ পেলেই চলে আসি এই দোকানে।
মাটির কাপে চা-পান শরীরের জন্যেও স্বাস্থ্যকর বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদেরা। এ নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র পুষ্টিবিদ জাহানারা আক্তার সুমির সঙ্গে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় শরীরের জন্য প্লাস্টিক, স্টেইনলেসের চেয়ে মাটির পাত্র অনেক বেশি উপকারী এবং নিরাপদ। মাটির তৈরি পাত্র বা কাপ পরিবেশ বান্ধব। যা ব্যবহারের পর সহজেই ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিশে যায়। পরিবেশের ক্ষতি করে না। কিন্তু প্লাস্টিক বা স্টেইনলেস-এর পাত্র ব্যবহারের পর সহজে ধ্বংস হয় না। পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও জানান, প্লাস্টিকের মগে গরম চা ঢাললে কেমিক্যাল রিয়াকশন ঘটে। ফলে শরীরে হরমোনাল সমস্যা, হজমজনিত সমস্যা ও ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে। সেদিক দিয়েও মাটির পাত্র নিরাপদ। কারণ মাটির পাত্র ক্ষারীয়। শরীরে অ্যাসিডিক রিয়াকশন কম ঘটে। এ কারণে যাদের হজমজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের মাটির তৈরি পাত্রে রান্না করে খাবার খেতে বলা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্লাস্টিক বা স্টেইনলেস স্টিলের কাপ পরিষ্কার করা ও জীবাণুমুক্ত করা কঠিন। তখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
যেভাবে তৈরি হচ্ছে এই চা
দোকানের একটি চুলায় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে মসলামিশ্রিত দুধ। মসলার মধ্যে আদা, এলাচ, বাদাম ও দারুচিনি অন্যতম। আরেক কেটলিতে হচ্ছে পানি, চা পাতা ও চিনি মিশ্রিত চা। দোকানের নিচে আরেকটি চুলায় পোড়ানো হচ্ছে মাটির তৈরি ছোট কাপ। প্রথমেই চা ও দুধ মিশিয়ে তৈরি করা হয় দুধ চা। তন্দুরির স্বাদ আনার জন্য একটি বড় পাত্রে নেওয়া হয় দুধ চা। সেই চায়ের মধ্যে চিমটা দিয়ে নিয়ে আসা হয় আগুনে পোড়া লাল রক্তবর্ণের মাটির কাপ। কাপটি চায়ের সংস্পর্শে আসতেই চা টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। এ সময় উড়তে থাকে ধোঁয়া। ধোঁয়া ওঠা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মাটির পাত্রটি ধরে রাখা হয়। এরপর সেই চা মাটির কাপে পরিবেশন করা হয়।
কীভাবে এলো তন্দুরি চা
‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৮ সালের দিকে ভারতের পুনেতে ২৯ বছর বয়সী অমোল দিলিপ রাজদেও নামে এক ব্যক্তি তন্দুরি চা তৈরি করেন। অমোল জানান, ২০১৭ সালের কোনো এক শীতের সন্ধ্যায় যখন আমি সর্দি এবং ঠান্ডায় ভুগছিলাম তখন আমার ঠাকুমা গরম দুধ দিয়েছিলেন, এটি পুনরায় গরম করার জন্য কয়লার আগুনের এক কোণে রাখা হয়। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তন্দুরি চা বানানো শুরু করেন। যা এখন স্থান করে নিয়েছে পুনের বিখ্যাত খাবারের তালিকায়।
তন্দুরি চা বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং চা-প্রেমীদের মনে জায়গা করে নেয়। সূত্র : রাইজিংবিডি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।