শহীদ শরিফ ওসমান হাদি’র শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনায় ‘ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরাম’-এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তরা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করে বলেন, হাদি চেয়েছেন সমাজ ও রাষ্ট্রে ইনসাফ কায়েম করতে। শহীদ হাদি ছিলেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক আপোষহীন বীর। তার বীরত্বে কাছে হেরে গেছে আধিপত্যবাদ আর আগ্রাসন গোষ্ঠী। তারা হাদিকে হত্যা করে নিজেদের ভয় ও পরাজয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, শহীদ হাদি ছিলেন আধিপত্যবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক আপোষহীন বীর। যারা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে শহীদ করেছে তারা ভুল করেছে। কত বড় ভুল করেছে তারা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা দেখে আশা করি বুঝতে পেরেছে। তাদের নূনত্যম জ্ঞান থাকা দরকার ছিল জুলাই এবং আগস্টের যেই আদর্শিক ভিত্তির উপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে একজন হাদিকে হত্যা করে জুলাইকে পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে না। তারা যদি মনে করে একজন জুলাই যোদ্ধাকে হত্যা করে বাংলাদেশের আগামী দিনের সম্ভবনার ধারাকে পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে তাহলে তারা নিঃসন্দেহ তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। যারা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত তাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখানো যায় না, তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না। জুলাই যোদ্ধা তরুণ বিপ্লবীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না। শহীদ মীর কাসেম আলী, শহীদ কামরুজ্জামান, শহীদ কাদের মোল্লাসহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের শত-শত শাহাদাতের উপরে আজকে লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি জনতা ছাত্রশিবিরের এই শাহাদাতের তামান্নাকে লালন করেছে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আগামী দিনে শহীদ ওসমান হাদির স্বপ্নগুলো আরও অসংখ্য হাদি তৈরি হবে এবং হাদির স্বপ্নের ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগের প্রেক্ষাপট আর পরের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের অনেক সমীকরণ চেঞ্জ করে দিয়েছে। আমরা ৫ আগস্টের আগে ভাবতাম যে এই জনপদে জুলুমের কোনো নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তায়ালা ক্ষমতার পরিবর্তন করেন, রাতকে-দিন করেন। আমরা আল্লাহ তায়ালার সেই ক্ষমতা স্পষ্ট দেখেছি। ফ্যাসিস্টের পতনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুলুমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। নব্য ফ্যাসিবাদের হাত থেকেও আল্লাহ তাওয়ালা এই জাতিকে মুক্ত করবেন। এজন্য আমাদেরকে বিপ্লবী চেতনা লালন করে সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে। তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশি-বিদেশি যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে তরুণ প্রজন্মকে শহীদ শরিফ ওসামন বিন হাদির ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম বলেন, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলেছে তাদের প্রত্যেককে শহীদ হতে হয়েছে। শহীদ কাদের মোল্লা, শহীদ কামরুজ্জামান, শহীদ মীর কাসেম আলীসহ ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যার মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছিল। তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা আধিপত্যবাদের কাছে মাথানত করেনি, আধিপত্যবাদকে স্বাধীন বাংলাদেশে দাদাগিরি করার সুযোগ দেয়নি। সেজন্যই তাদেরকে হত্যার মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে। একইভাবে শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছে। যার ফলে আধিপদত্যবাদের দোসরদের হাতে তাকে শহীদ হতে হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে বিপ্লবীদের পরাজিত করা যায় না। হাদির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসংখ্য হাদির আবির্ভাব ঘটবে। স্বাধীন বাংলাদেশকে তরুণ প্রজন্ম আধিপাত্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করবেই, করবে।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি প্রার্থী দেলাওয়ার হোসেন বলেন, শহীদ ওসমান বিন হাদি একটি নাম, একটি ইতিহাস। আগ্রাসন বিরোধী এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের এক প্রতিবাদী কণ্ঠসরের নাম হলো শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ এবং টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে এক সাহসী সেনা নায়কের নাম হাদি। তিনি ইনসাফের কথা বলতেন। তিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলতেন, তিনি সন্ত্রাসমুক্ত চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন। এবং সেই সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য অনবদ্যভাবে দীর্ঘ একটি বছর ধরে তিনি সংগ্রাম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সংগ্রাম চলবেই, চলবে। সারাদেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁও জেলা চাঁদাবাজদের অবয়ারণে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশের মডেল হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে গড়ে তুলতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, টেন্ডরাবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা ঠাকুরগাঁও কে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ মুক্ত শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামীদিনে আমরাই ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্জিনিয়ারিং কলেজ,কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা, ইপিজেট ও বন্ধ হয়ে যাওয়া বিমান বন্দর চালু করা,বেকারত্বমুক্ত এবং ঠাকুরগাঁওকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ঠাকুরগাঁওয়ে পরিনত করবোই।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি প্রার্থী মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা উত্তর ৫৪ বছরে যারা ঠাকুরগাঁও থেকে এমপি ও মন্ত্রী হয়েছিলেন তারা কেউ ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করেনি। তানাহলে আমাদের এই জেলা এতটা অবহেলিত থাকতোনা। আগামীদিনে আমরাই ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়ন করবো ইনশাআল্লাহ।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি আমাদেরকে দেখিয়েছেন কিভাবে ইনসাফের জন্য লড়াই করতে হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



