আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুুল্লাহিয়ানসহ নয় আরোহীই নিহত হয়েছেন। খারাপ আবহাওয়ার কথা বলা হলেও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যায়নি। ইরান-ইসরায়েল টানটান উত্তেজনার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্যের জাল।
প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত আছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এ দুর্ঘটনার পরিণতিতে আঞ্চলিক রাজনীতি ও সামরিক ক্ষেত্রে কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয় কি না তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পশ্চিমা মহল বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
গত রবিবারের এ দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে বৈরী ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে এর নেপথ্যে আরও কিছু কারণ নিয়েও চলছে আলোচনা।রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের কারণ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইএএসএ) বলছে, উঁচু পার্বত্য এলাকা ও গভীর উপত্যকার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পাইলট বিভ্রান্ত হতে পারেন।
ইএএসএ বলছে, গভীর উপত্যকায় বাতাসের গতি ও দিক আচমকা অপ্রত্যাশিতভাবে পাল্টে যেতে পারে। এ কারণে বাতাসের গতি উল্লেখ করার মতো ওঠানামা করতে পারে। এতে করে অনেক সময় হেলিকপ্টারের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন পাইলট। এ ছাড়া এসব জায়গা দিয়ে চলাচলের সময় কুয়াশা অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি বিষয়।
তবে কাইল বেইলি নামের একজন বেসামরিক বিমান পরিবহনবিশেষজ্ঞ বলেন, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলটরা সহায়তা চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। ফলে কোনো সন্দেহ নেই যে যান্ত্রিক ক্রটির কারণেই হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন তারা।
কাইল বেইলি আরও বলেন, আকাশে থাকতে যান্ত্রিক সমস্যার মুখে পড়লে পাইলটের প্রথম কাজ হেলিকপ্টার আকাশে ভাসিয়ে রাখা। এরপরে সহায়তার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা। তবে তার আগেই হয়তো হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। অবশ্য বৈরী আবহাওয়ার কারণেও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারটি ছিল বেল-২১২ মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে কিনেছিল তেহরান। সে হিসাবে এটি বেশ পুরোনো। এর আগেও একবার ইরানে এই মডেলের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। হেলিকপ্টারটি অনেক পুরনো মডেলের হওয়াকেও অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে অসংখ্য বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব বিমানের প্রায় সবই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক ব্যুরো অব এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট আর্কাইভসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইরানের ২৫৩টি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩৩৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
এদিকে, রবিবারের এই দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত আছে কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এ দুর্ঘটনার পরিণতিতে আঞ্চলিক রাজনীতি ও সামরিক ক্ষেত্রে কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয় কি না তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পশ্চিমা মহল বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এবং ইসরায়েলের চিরবৈরী সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েল জড়িত থাকতে পারে বলে কিছু ইরানি সন্দেহ করছেন। দামেস্কে ইসরায়েল কর্তৃক একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা ও পরবর্তীতে ইসরায়েলে ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনার কারণেই এই তত্ত্বটি অনেকের মনোযোগ কেড়েছে। ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা এবং নিখুঁত অভিযান চালানোর জন্য ইসরায়েলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ব্যাপক পরিচিতি আছে। যদিও ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা কখনোই কোনো রাষ্ট্রের প্রধানকে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি।
ইকোনমিস্ট বলছে, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করার জোড়ালো কারণ রয়েছে। তাছাড়া ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের এ ঘটনা এমন এক সময় ঘটেছে; যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলার মতো অনেক বিষয় রয়েছে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। বিশেষ করে ইসরায়েল এবং হামাসের চলমান যুদ্ধের মাঝে আঞ্চলিক এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এক প্রান্তে পৌঁছেছে। ইরানের নেতৃত্ব নিয়ে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তা এসব গোষ্ঠীকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
রিলিজ হল রোমান্সে ভরপুর নতুন ওয়েব সিরিজ, ভুলেও কারও সামনে দেখবেন না
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তার দাবি, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নিহত হওয়ার সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি, ‘আমরা জড়িত নই’। রবিবার রাতে প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ ইরানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রটতে থাকে, এই ঘটনার সঙ্গে মোসাদ জড়িত। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইসরায়েলের ওই কর্মকর্তা এমন দাবি করেন।
সূত্র : আল-জাজিরা ও দ্য ইকোনমিস্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।