রঞ্জু খন্দকার : বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ ফিনল্যান্ডে সিটি কাউন্সিল ইলেকশন হতে যাচ্ছে আসছে এপ্রিলে। এই নির্বাচনে লড়ছেন মিয়াজ নজরুল ইসলাম। ভোটে এস্পো সিটি থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফিনিশ নাগরিক।
মিয়াজ নজরুল জুমবাংলাকে জানান, এস্পোতে ভোটার প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার। এর মধ্যে আনুমানিক ২২ ভাগ অভিবাসী বংশোদ্ভূত। তাঁদের মধ্যে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি। ফিনিশদের মধ্যেও তাঁর ও তাঁর দল সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই এই ভোটে জয়ের আশা করছেন নজরুল।
এসডিপি ফিনল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় দল। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে দেশটিতে এসডিপি ক্ষমতায় ছিল। নজরুল জানান, সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে দলটির জনপ্রিয়তার হার ২৪ ভাগ। ক্ষমতাসীন দল কোকোমুসের জনপ্রিয়তা শতকরা ১৯ ভাগ।
নজরুল ইসলামের দাবি, এসডিপি ফিনল্যান্ডে সবচেয়ে অভিবাসন-বান্ধব দল। বর্তমান সরকার বেশ কিছু অভিবাসীবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আসছে নির্বাচনে জনগণ এসডিপিকেই বিজয়ী করবে।
আগামী ২ থেকে ৮ এপ্রিল সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অগ্রিম ভোট নেওয়া হবে। এই সময়ে আশপাশের যেকোনো বিপণিবিতান বা লাইব্রেরিতে গিয়ে ভোট দেওয়া যাবে। এর মধ্যে যারা ভোট দিতে পারবেন না, তাঁদের ১৩ এপ্রিল নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। ছবিযুক্ত যেকোনো পরিচয়পত্র নিয়ে গিয়ে ফিনল্যান্ডে ভোট দেওয়া যায়। এটি দেশটির স্থানীয় সরকার নির্বাচন হিসেবে পরিচিত।
নজরুল ইসলাম তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে ভোটারদের নানাভাবে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন টেক্সট, ভিডিও প্রচার করছেন।
ফেসবুকে দেওয়া ভিডিওতে নজরুল ইসলাম জানান, ফিনল্যান্ডে ২ বছর ধরে এবং এস্পোতে ৫১ দিন বা গত ২১ ফেব্রুয়ারির আগে থেকে বাস করছেন, এমন যে কেউ এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তিনি সবাইকে ভোট প্রয়োগ করার আহবান জানান। তাঁর ভোটিং নম্বর ৪৬৮।
নজরুল বলেন, ফিনল্যান্ডের সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় রাজনীতির মাধ্যমে। এখানে একটা ডিম কত দামে বিক্রি হবে, তা-ও সরকার ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো বিষয় থেকে অভিবাসনসহ পররাষ্ট্রনীতি কী হবে সবই নিয়ন্ত্রিত হয় রাজনীতির মাধ্যমে। কাজেই অভিবাসী বাংলাদেশিসহ সব ফিনিশদের ভোটাধিকার প্রয়োগসহ রাজনীতিতে এগিয়ে আসা উচিৎ।
প্রায় ১৫ বছর ধরে ফিনল্যান্ডে বাস করছেন নজরুল। ৭ বছর ধরে তিনি সেখানকার রাজনীতিতে সক্রিয়। এবার এসডিপি থেকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পান তিনি।
ফিনল্যান্ডের রাজনীতিতে আগ্রহী হলেন কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, যে কারণে ফিনিশরা এখানে রাজনীতি করেন, একই কারণে তিনিও করেন। কারণ, নিজেরা রাজনীতি না করলে এখানে তাঁদের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্তই নেবেন অন্যরা। যার অনেকগুলোই তাঁদের বিপক্ষে যাবে। কাজেই নিজেদের অধিকারের কথা বলার জন্যই তিনি এখানকার রাজনীতিতে আগ্রহী হয়েছেন।
এসডিপি ফিনল্যান্ডে তুলনামূলক অভিবাসী-বান্ধব বলে দলটিতে যোগ দিয়েছেন নজরুল। তিনি বলেন, তাঁর দল দেশটিতে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর দাবি তুলছে। তাঁদের এ দাবি অধিকাংশ অভিবাসী পছন্দ করছেন। এ ছাড়া বুলিং ঠেকানোও তাঁর দলের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা, যা ফিনিশদেরও দাবি।
কাজেই আসছে নির্বাচনে তিনি ও তাঁর দল ভালো করবে বলে মনে করছেন নজরুল।
ভোটের মাঠে বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের মধ্যে তাঁর ভোট বেশি বলে মনে করেন নজরুল। অন্য অভিবাসীদের মধ্যে সোমালীয়ান, এরাবিয়ান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ঘানার ভোটাররা তাঁকে বেশি পছন্দ করেন বলে জানান।
ভোটের প্রচারণার একটি অভিজ্ঞতা জুমবাংলাকে শোনান নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘এক ভোটার তাঁর সন্তানকে নজরুলের কোলে দিয়ে বলেন, এই শিশুও তাঁর ভোটার।নজরুল উল্টো বলেন, তিনিই ওই শিশুর ভবিষ্যত ভোটার হতে চান। তিনি চান, আগামী প্রজন্মের আরও বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফিনিশরা এখানকার রাজনীতিতে আসুক। বাংলাদেশিরা এখানকার এমপি হোক। তিনি বাংলাদেশিদের জন্য এমন সুযোগ তৈরির জন্য কাজ করে যাবেন। এটাই তাঁর রাজনৈতিক মটো।’
ফেনীর দাগনভূঞাঁ উপজেলার বারাহি গোবিন্দ গ্রামের সন্তান মিয়াজ নজরুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে এস্পোতে থাকেন নজরুল। বর্তমানে রেসটেল নামে একটি চেইন রেস্টুরেন্ট কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
আসছে নির্বাচনে জয় পেতে ভোটারদের ভোটের পাশাপাশি সবার সমর্থন ও দোয়া কামনা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ফিনিশ। ভোটের ফলাফল যাই হোক তার সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা আছে বলে জানালেন নজরুল ইসলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।