ইসতিয়াক আহমেদ : দ্বিতীয় বারের মতো কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বরল এলাকায় মেঘনা কোল্ডস্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করে হিমাগারে অবৈধভাবে মজুত রাখা ৪ লাখ ২৭ হাজার ডিম জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দুপুরে লালমাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজানা আক্তারে নেতৃত্বে মেঘনা কোল্ডস্টোরেজে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় অবৈধ মজুতদারীর দায়ে কোল্ডস্টোরেজকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
একই দিনে তাৎক্ষণিক সন্ধ্যার পর নিলামের মাধ্যমে ৪ লাখ ২৭ হাজার ডিম ২৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বিক্রি করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ডিম বিক্রির ২৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে অবৈধ মজুত আছে কিনা জানতে- অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৪ জুন সন্ধ্যায় লালমাই উপজেলার বরল এলাকার মেঘনা কোল্ডস্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল সংখ্যক ডিমের মজুত সন্ধান পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজানা আক্তার তাৎক্ষণিকভাবে অবৈধভাবে মজুতকৃত ডিম নিলামে বিক্রি করেন এবং অবৈধ মজুতদারীর দায়ে কোল্ডস্টোরেজকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, ডিমের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ দিন মজুত রাখা যায়। এখানে গিয়ে দেখা গেছে, মাসের পর মাস ধরে মজুত করা হয়েছে। তার মানে এসব অবৈধ মজুত। এর আগেও এই কোল্ডস্টোরেজ থেকে ২১ লাখ ডিমের বিশাল অবৈধ মজুত জব্দ করে বাজারে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’
নিলামের বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারজানা আক্তার বলেন, ‘অবৈধভাবে মজুত করা ডিম আমরা তাৎক্ষণিকভাবে নিলাম করেছি। যাদের ডিম ছিল, তাদের না পেয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফাহমিদা আক্তারের মাধ্যমে আশপাশের ডিমের আড়তদারদের খবর দেয়া হয়। নিলামে ৫ জন ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। সেখানে লালমাই বাজারের লোকমান হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে ডিম কিনে নিয়ে যায়।
সকালে মেঘনা কোল্ডস্টোরেজে গিয়ে দেখা যায়, নির্দেশনামতো বিক্রয়কৃত ডিম নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ৪ লাখ ২৭ হাজার ডিম ২৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যে নিলামে বিক্রি করা হয়। হিসেব মতে, প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে।
ডিম সংরক্ষণকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ডিম নিলামের আগে বিক্রেতাদের জানানো হয়নি। যেহেতু আমরা ডিমগুলো হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি, আমাদের আগে জানানো উচিত ছিল। আমরা জানতাম না ওই হিমাগারের ডিম রাখার ছাড়পত্র নেই। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের আগে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু তারা সেই কাজটা করেনি। নিজেদের মতো করে নিলাম করে ডিম বিক্রি করে দিয়েছে। আমাদের ক্ষতি কে দেবে? আমরা ছোট ব্যবসায়ী। এই ক্ষতি কীভাবে আমরা পূরণ করব?’
নোয়াখালী জেলার মাইজদী বড় বাজারের ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, ‘আগে জানালে আমরা ডিমগুলো সরিয়ে নিতাম। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত এসেই ডিম জব্দ করে নিলাম করে দেওয়ায় এখন আমরা পথে বসার মতো অবস্থায়। গরমের কারণে কোল্ডস্টোরেজে ডিম বেশি মজুত হয়। শীতকালে এত পরিমাণ ডিম মজুত হয় না।’
মো. মাইনুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার ৫২ হাজার ৮০ পিস ডিম ছিল। আমাকে না ডেকেই এসব ডিম নিলাম করা হলো। আমি ধারে টাকা এনে এসব ডিম কিনে সংরক্ষণ করছিলাম। আমাদের পথে বসিয়ে দিল।’
প্রকাশ্য নিলামে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ প্রায় ৬ টাকা পিস দরে ৪ লাখ ২৭ হাজার পিস ডিম কিনে নেন লালমাই উপজেলার ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রকাশ্য নিলামে ডিম বিক্রি করেন। আমি ৪ লাখ ২৭ হাজার ডিমের টাকা জমা দিয়ে নিলাম থেকে ডিম কিনেছি।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে মেঘনা কোল্ডস্টোরেজ থেকে ২১ লাখ ডিমের অবৈধ মজুত জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেসময় এই কোল্ডস্টোরেজটিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জব্দকৃত ডিম বাজারজাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।