ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন : কাবিননামা একটি আইনি বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিননামা একটি আইনি দলিল। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪ মোতাবেক অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে। উক্ত আইনে বিবাহ নিবন্ধন না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এবার মুসলিম আইন এবং কাবিননামার প্রধান দশটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দেনমোহর
প্রথাগতভাবে বিয়ের সময় মোহরানার (সাধারণত দেনমোহর নামে পরিচিত) অংশ অনেক বেশি অগ্রাধিকার পায় এবং ধর্মীয়ভাবে মোহরানা কনের নিরাপত্তা হিসেবে দেওয়া হয়। পারিবারিক অনুশীলন, বরের আয় ও পরিবারের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সমাজে মোহরানার ভূমিকা যেভাবে দেখা হয়, এর বাইরেও এটি অনেকভাবে মূল্যায়িত হতে পারে।
দেনমোহর কীভাবে প্রদান করা হবে
কাবিননামায় মোহরানার পরিমাণের পাশাপাশি কখন এবং কীভাবে মোহরানা দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে শর্ত নির্ধারণ করা হয়। সবার আগে দেনমোহর কোনো সম্পত্তি বা গয়না হিসেবে দেওয়া হচ্ছে কি না, কতটা বকেয়া আছে এবং বকেয়ার পরিমাণ কিস্তিতে নাকি এককালীন পরিশোধ করা হবে ইত্যাদি বিষয় কাবিননামায় উল্লেখ করতে হয়।
স্ত্রীর বিচ্ছেদের অধিকার
কাবিননামার একটি ধারায় (১৮ নম্বর) স্ত্রীর তালাক দেওয়ার অধিকার থাকতে পারে। একজন স্ত্রী মুসলিম আইন অধ্যাদেশ- ১৯৬১ অনুযায়ী বিয়ে ভেঙে দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তবে এটি শর্তসাপেক্ষ হতে পারে।
স্বামীর বিচ্ছেদের অধিকার সীমিতকরণ
মুসলিম বিয়েতে তালাক দেওয়ার চূড়ান্ত অধিকার স্বামীর। তবে কিছু নিয়মনীতির মাধ্যমে স্বামীর এই অধিকার সীমিত করা যেতে পারে। বিয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে চুক্তিতে শর্ত উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে সব শর্তই দম্পতি কী চায় তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
স্বামী ও স্ত্রীর ‘উকিল’
কাবিননামা দম্পতিকে ‘উকিল বাবা’ বাছাইয়ের অনুমোদন দেয়। তিনি দম্পতির অধিকারের বিষয়ে পরামর্শ দেবেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো বিবাদ দেখা দিলে তা সমাধানে কাজ করবেন।
বিয়ের সাক্ষী
কাবিননামা চুক্তি সইয়ের সময় উভয় পক্ষ থেকে কমপক্ষে ২ জন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে এবং কাবিননামায় সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। কারণ, বিবাদের ক্ষেত্রে সাক্ষীরা যেন ঘটনা যাচাইয়ের জন্য নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারেন।
কাবিননামার ভাষা
বাংলাদেশে কাবিননামা বাংলায় লেখা হয়। দম্পতি প্রয়োজনে অর্থ দিয়ে ও আবেদন সাপেক্ষে পরে এটি যেকোনো ভাষায় অনুবাদ করিয়ে নিতে পারবেন।
পূর্বের বিয়ের বিবরণ
বর বা কনে আগে কোনো বিয়ে করে থাকলে তার বিবরণ কাবিননামায় উল্লেখ করতে হবে। তাকে বিয়ে ভাঙার কারণ যেমন তালাক, মৃত্যু বা অন্যান্য কারণ উল্লেখ করতে হবে।
বহুদিনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলের অনুমতি
মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী একজন পুরুষ সর্বোচ্চ ৪ নারীকে বিয়ে করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বরকে সালিশি পরিষদ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। সালিশি পরিষদ বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যদি দেখে যে স্ত্রী সন্তান জন্মদানে অক্ষম বা মানসিক সমস্যা আছে এবং এরকম আরও কিছু কারণ উপস্থিত থাকলে তখনই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিতে পারে। কাবিননামায় সালিশি পরিষদের কাছ থেকে পাওয়া অনুমতির বিবরণ থাকতে হবে। এ অনুমতি ছাড়া বিয়ে করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কি তালাক দেওয়া যায়?অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কি তালাক দেওয়া যায়?
অন্যান্য শর্ত
কাবিননামার একটি অংশে দম্পতি নিজেদের মতো করে শর্ত যোগ করতে পারে। এই অংশটি দম্পতিকে একে অপরকে দেওয়া অঙ্গীকারকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার সুযোগ দেয়। সুযোগটি ব্যবহার করে তারা জীবনযাত্রা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, একে অপরের প্রতি দায়িত্ব এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে নির্দেশিকা তৈরি করতে পারে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।