জুমবাংলা ডেস্ক : কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একটানা পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টি এবং মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পার্বত্য বান্দরবানের লামা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তিন উপজেলার সাড়ে ৫ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
অন্যদিকে লামা বাজার ৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রান্নাবান্না করতে না পারায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা ঢলের পানিতে লাকড়ি ধরতে গিয়ে তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয় মো. শাহ আলম (৩৫)। সোমবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ির কাছে মাতামুহুরী নদীর লক্ষ্যারচর হাজিপাড়া পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। বিকেলে লক্ষ্যারচরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শাহ আলম ওই এলাকার জাকের হোসাইনের ছেলে।
এছাড়া, সোমবার বিকেলে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মা-মেয়ে পাহাড় চাপা পড়ে মারা গেছে। তারা হলেন, আনোয়ারের স্ত্রী জান্নাত আরা (২৪) ও তার মেয়ে মাহিমা আক্তার (২)।
চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া সদর, রাজাখালী, উজানটিয়া এবং চকরিয়া পৌরসভার সিংহভাগ এলাকা বর্তমানে ৮ থেকে ১০ ফুট বানের পানির নিচে রয়েছে। এসব এলাকার প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পূর্ব ভিলিজার পাড়ায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন—আনোয়ার হোসেনর দুই শিশু। একজনের নাম মোহাম্মদ সাবিত (৫) ও অন্যজন তাবাচ্ছুম (১)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান।
জানা যায়, কোনো কোনো ইউনিয়নে সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দুই উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ভেসে গেছে বিভিন্ন পুকুরের মৎস্য ও তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০ হাজার একর জমির সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় লামা, চকরিয়া ও পেকুয়া এই তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
লামা বাজারের পাশাপাশি লামা পৌরসভার নয়াপাড়া, বাজারপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হাসপাতালপাড়া, নুনারবিল, থানা এলাকা, কলিঙ্গাবিল, লাইনঝিরি, ছাগলখাইয়া, শিলেরতুয়া, রাজবাড়ি, নুনারবিল, মধুঝিরি, চাম্পাতলী, ছোট বমু, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার এলাকা, বনফুল, হারগাজা, রুপসী পাড়া ও লামা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন উঁচু পাহাড় চূড়া কিংবা বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করলেও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে প্রচুর হাঁস-মুরগি।
এ ছাড়া গবাদি পশু নিয়ে বন্যা কবলিত লোকজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, পৌর এলাকার বন্যা কবলিত লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে আনা হচ্ছে। এ সকল আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, পানিবন্দি মানুষ যাতে খাবারের সংকটে না পড়েন সেজন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ওইসব এলাকা গুলোয় দুর্ভোগ বেড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য বলা হচ্ছে। সেখানে তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।