জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২টি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, সরকার অভ্যন্তরীণ খনি থেকে গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করছে। একই সঙ্গে সাগরে ব্যাপকভাবে নতুন করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজ শুরু করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল অয়েলের কাছ থেকে তিতাস, রশিদপুর, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটিকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা নানা কর্মসূচি পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষে পত্রিকাতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। এর বাইরে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে পেট্রোবাংলা।
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এখন কীভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে— জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— অনশোর এবং অফশোরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের পরিকল্পনা, এলএনজি আমদানি, এলএনজি ল্যান্ডবেইজ টার্মিনাল স্থাপন। এছাড়া পুরানো কিছু ক্ষেত্রেও খনন কাজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের ১২ দফা উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—
১. কূপ খনন এবং ওয়ার্কওভার
সাম্প্রতিক সময়ে ৬টি (সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ, ভোলা নর্থ, জকিগঞ্জ এবং ইলিশা) নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্প্রতি শাহবাজপুর ইস্ট, টবগী-১, ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ কূপ খনন কাজ শেষ হয়েছে এবং বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পাওয়া গিয়েছে। ২০০৯ থেকে জুন, ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে ১৩২টি কূপ খনন করা হয়েছে। অনশোরে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের অধীনে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ (অনুসন্ধান, উন্নয়ন/মূল্যায়ন, কূপের ওয়ার্কওভার) খননের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি প্রকল্পের আওতায় ১৬টি কূপ খনন কাজ চলছে। এছাড়া বিয়ানিবাজার-১ ও তিতাস-২৪ কূপের ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্নের পর গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
২. প্রসেস প্লান্ট বা মিনি রিফাইনারি স্থাপন
পেট্রোলকে অকটেনে রূপান্তরের জন্য রশিদপুরে দৈনিক ৩ হাজার ব্যারেল ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাটালাইটিক রিফরমিং ইউনিট স্থাপন প্রকল্প এবং শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএম এসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন প্রকল্প সফলভাবে শেষ হয়েছে।
৩. গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ২১০ কিলোমিটার নতুন গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ১৫৭ কিলোমিটার গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
৪. কম্প্রেসার স্থাপন
খনির উৎপাদন কমে গেলেই কম্প্রেসার স্থাপন করতে হয়। দেশের যেসব কূপের উৎপাদন কমে যাচ্ছে সেখানে সরকার কম্প্রেসার বসিয়ে উৎপাদন ঠিক রাখছে। এজন্য ১৬টি ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ৯টি স্থাপনের কাজ চলছে।
৫. গ্যাস প্রিপেইড মিটার স্থাপন
গ্যাসের চুরি, অপচয় রোধে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪ লাখ গ্যাস প্রিপেইড মিটার স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আরও গ্যাস প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
৬. জরিপ চলছে উৎপাদন বৃদ্ধিতে
ব্যাপকভিত্তিতে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক সাইসমিক জরিপ সম্পাদন করা হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৬৮০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হয়েছিল। চলতি বছর জুন পর্যন্ত আরও ৩০ হাজার ২১০ লাইন কিলোমিটার জরিপ করা হয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৭৬৬ বর্গ কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক জরিপ করা হয়েছিল নতুন করে গত জুন পর্যন্ত আরও ৬ হাজার ১৪৬ বর্গ কিলোমিটার জরিপ করা হয়েছে।
৭. এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ
ইতোমধ্যে সরকার দুটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করেছে। এর বাইরে আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করার জন্য সরকার সামিট গ্রুপকে কাজ দিয়েছে। এছাড়া মহেশখালীর মাতারবাড়িতে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরকার বলছে, রি-গ্যাসিফিকেশন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মহেশখালীতে তৃতীয় ভাসমান টার্মিনাল এবং পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের গভীর সমুদ্রে চতুর্থ ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলছে।
৮. বিদ্যমান টার্মিনালের ক্ষমতা বৃদ্ধি
মহেশখালীতে ইক্সিলারেট এনার্জি কর্তৃক পরিচালিত এলএনজি ভাসমান টার্মিনালের রি-গ্যাসিফিকেশন সক্ষমতা আরও দৈনিক আরও ১০০ এমএমসিএফডি বৃদ্ধির জন্য নেগোসিয়েশন চলছে। টার্মিনালটি এখন ৫০০ ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ করে।
৯. এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি
জিটুজি ভিত্তিতে কাতার ও ওমানের সঙ্গে বিদ্যমান এলএনজি সরবরাহ চুক্তির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে আরও অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
১০. ক্রস বর্ডার এলএনজি আমদানি
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এর বাইরে ভারত থেকে সরকার এলএনজি আমদানি করতে চায়। এজন্য ক্রস বর্ডার পাইপলাইনের মাধ্যমে এলএনজি আমদানির জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে।
১১. কয়লার উৎপাদন বৃদ্ধি
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত ৪.৫ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে।
১২. সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান
গভীর-অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ১২,৯৩২ লাইন কিলোমিটার মাল্টিক্লায়েন্ট টু-ডি সার্ভে শেষ হয়েছে। এছাড়া সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অফশোর বিডিং রাউন্ডের জন্য পিএসসি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই বিডিং রাউন্ড শুরু করার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে পেট্রোবাংলা।য় ফিরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।