Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফ হ্যাকস লাইফস্টাইল

    কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

    লাইফস্টাইল ডেস্কMynul Islam NadimJuly 11, 202515 Mins Read
    Advertisement

    গত বছর ঢাকার ধানমন্ডির একটি নামকরা স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিন। সবাই উৎসবে মেতেছে। কিন্তু একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া (ছদ্মনাম) সবার অলক্ষ্যে ছাদে উঠে যায়। তার মনে হয়েছিল, সে ক্লাসে ভালো ফল করতে পারছে না, বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না, বন্ধুরাও তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। সে প্রায় ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিল, ভাগ্যক্রমে একজন শিক্ষক তাকে সময়মতো দেখতে পেয়ে বাঁচান। সুমাইয়ার চোখে তখন শুধুই হতাশা, আতঙ্ক আর একা হয়ে যাওয়ার ভয়। তার গল্প একার নয়। রাজধানীর গুলশান, মিরপুর থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, রংপুরের পীরগঞ্জ – গ্রাম-শহর-বন্দর জুড়ে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ কিশোর-কিশোরীর মনে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে। যে যুদ্ধের শব্দ প্রায়ই আমরা শুনতে পাই না, দেখতেও পাই না। যে যুদ্ধের ফলাফল তাদের আজকের স্বপ্ন, আগামীর সম্ভাবনা এবং কখনো কখনো জীবনটাই নির্ধারণ করে দেয়। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য – এই কথাটি শুনলেই অনেকে হয়তো হালকাভাবে নেন, ভাবেন “এই বয়সে আবার মানসিক সমস্যা কী!” অথচ এই অবহেলাই তৈরি করে ভয়াবহ পরিণতির বীজ। এই অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গঠনমূলক সময়টিতে তাদের মানসিক সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া শুধু প্রয়োজন নয়, জাতীয় অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য।

    কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য

    কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য: একটি অদৃশ্য মহামারী ও তার ব্যাপকতা

    আমরা যখন কৈশোরের কথা ভাবি, ভাবি উচ্ছ্বলতা, নতুন অভিজ্ঞতা আর সম্ভাবনার কথা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই বয়সটাই হয়ে উঠেছে নানাবিদ চাপ, দ্বন্দ্ব আর উদ্বেগের এক জটিল মিশ্রণ। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে ১০-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাই অন্যতম প্রধান অসুস্থতা ও অক্ষমতার কারণ। বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (NIMH) গবেষণা এবং বিভিন্ন বেসরকারি জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে দেশের প্রায় ২০-৩০% কিশোর-কিশোরী নানান ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে – বিষণ্নতা, উদ্বেগ, খাদ্যজনিত সমস্যা, আত্মহত্যার প্রবণতা, মনোযোগের ঘাটতি (ADHD), আত্মবিশ্বাসহীনতা থেকে শুরু করে আত্ম-ক্ষতি করার মতো মারাত্মক প্রবণতা পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, শহুরে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া প্রায় ৪০% শিক্ষার্থী পরীক্ষাভীতি ও ফলাফলজনিত চরম উদ্বেগে ভোগে। গ্রামীণ এলাকায়ও ছবিটা খুব ভিন্ন নয়, সেখানে যোগ হয়েছে দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, বাল্যবিবাহের চাপ, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রকট অভাব।

    কিন্তু কেন এই সংকট এত প্রকট? কারণগুলো জটিল ও বহুমুখী:

    • শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ঝড়: কৈশোর মানেই দ্রুত শারীরিক পরিবর্তন, হরমোনের উত্থান-পতন। এই সময়ে নিজের শরীর নিয়ে বিভ্রান্তি, লজ্জা, অস্বস্তি তৈরি হয়। আবেগের ওঠানামা তীব্র হয় – এক মুহূর্তে আনন্দ, পর মুহূর্তে রাগ বা দুঃখ। এই পরিবর্তনগুলোকে সামলাতে অনেক কিশোর-কিশোরীই হিমশিম খায়।
    • অতিরিক্ত একাডেমিক চাপ ও প্রত্যাশার বোঝা: “এ+ পেতেই হবে”, “মেডিকেলে ঢুকতে হবে”, “ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে জীবন ধ্বংস” – এই মন্ত্রে অভিভাবক, শিক্ষক, এমনকি সমাজও কিশোর-কিশোরীদের চাপে রাখে। পরীক্ষার ফলাফলকে জীবনের একমাত্র সাফল্যের মাপকাঠি বানানো হয়। এই চরম চাপ কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, হতাশা ও ব্যর্থতার ভয় গেঁথে যায় মনে। গাজীপুরের এক কলেজছাত্র রাফি (ছদ্মনাম) বলেন, “প্রাইভেট টিউটর, কোচিং, স্কুলের পর বাড়ির পড়া – দিনে ১৪-১৫ ঘন্টা শুধু পড়াশোনা। বাবা-মা আশা করেন আমি ডাক্তার হবো। কিন্তু আমার কি আর কিছু করার, ভাবার, শখ পূরণের সময় আছে? ক্লান্তিতে সব সময় ঘুম পায়, মন খারাপ লাগে।”
    • সামাজিক সম্পর্কের জটিলতা ও পিয়ার প্রেশার: এই বয়সে বন্ধুত্ব, রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এগুলোই অনেক সময় চাপ ও সংঘাতের উৎস। বন্ধুদের চাপে মাদক সেবন, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়িয়ে পড়া, অনলাইন বুলিং, বাস্তব জীবনে গ্যাং কালচার, হেনস্থা – এসব ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। সামাজিক মিডিয়ায় ‘পারফেক্ট’ জীবনের ছবি দেখে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে হওয়া, আত্মবিশ্বাস হারানোও বড় সমস্যা। খুলনার এক মেয়ে আয়েশা (ছদ্মনাম) ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সবার ‘সফলতা’ দেখে নিজেকে খুব অসফল ও অসুন্দর ভাবতে শুরু করে, খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়, যা পরে ইটিং ডিসঅর্ডারে রূপ নেয়।
    • পারিবারিক অস্থিরতা ও যোগাযোগের ঘাটতি: পারিবারিক কলহ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অবহেলা, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা উদাসীনতা – এগুলো কিশোর মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে। অনেক পরিবারেই কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা হয় না। তাদের আবেগ, ভয়, দুঃখ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয় না। “ছেলেমানুষি করিস না”, “মন খারাপের কিছু নেই” – এমন কথা শুনে তারা নিজেদের অনুভূতিকে অবৈধ মনে করে, গুটিয়ে নেয়। সিলেটের এক কিশোরীর অভিজ্ঞতা: “বাবা-মা সারাক্ষণ নিজেদের ঝগড়ায় ব্যস্ত। আমার কথা শোনার কেউ নেই। যখন খুব কষ্ট হয়, নিজের হাত কেটে রক্ত বের করি, তাতেই একটু স্বস্তি মেলে।”
    • ডিজিটাল জগতের প্রভাব ও আসক্তি: স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস কিশোর-কিশোরীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক ভয়াবহ। রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং, অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হওয়া, অশালীন কনটেন্টের সংস্পর্শে আসা, গেমিং আসক্তি – এসব তাদের ঘুমের ব্যাঘাত, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রিয়েল লাইফ সম্পর্কে আগ্রহ হারানোসহ নানা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিচ্ছে।
    • প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা: স্কুল-কলেজে শারীরিক শাস্তি, মানসিকভাবে হেয় করা, শিক্ষক বা সিনিয়রদের দ্বারা হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা এখনও বিরল নয়। এগুলো শিশু-কিশোরের মনে গভীর ভীতি ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে, শিক্ষাঙ্গনকে ভয় ও উদ্বেগের স্থান করে তোলে।
    • মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সেবার অভাব: সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে রোগ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং এর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি না করা। গ্রামাঞ্চলে তো দূরের কথা, শহরেও পর্যাপ্ত শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলর নেই। অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনেকেই এই সমস্যাগুলো চিনতে পারেন না বা লজ্জা ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে সাহায্য নিতে চান না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিশেষায়িত কিশোর সেবার পরিধি সীমিত। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ওয়েবসাইটে কিশোর সেবার তথ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

    এই সমস্ত কারণ মিলে তৈরি করছে এক অদৃশ্য মহামারী, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে দিচ্ছে। এই সমস্যাগুলোকে ‘বয়সের দোষ‘ বা ‘স্বভাব’ বলে উড়িয়ে দিলে চলবে না। এগুলো প্রকৃতপক্ষে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট, যার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, সহানুভূতি এবং যথাযথ হস্তক্ষেপ।

    উপেক্ষার পরিণতি: ব্যক্তিগত ধ্বংস থেকে জাতীয় ক্ষতির মুখোমুখি

    কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে যদি আমরা সময়মতো চিহ্নিত করে চিকিৎসা ও সহায়তা না দেই, তার পরিণতি ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী হতে পারে, শুধু ব্যক্তির জীবনেই নয়, সমাজ ও দেশের জন্যও।

    • শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ধ্বংস: বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ADHD বা অন্যান্য সমস্যা শিক্ষার্থীর মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। ফলাফল খারাপ হয়, স্কুল-কলেজ ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সুমাইয়ার মতো অনেক প্রতিভাবান কিশোর-কিশোরী শুধুমাত্র মানসিক চাপে ভেঙে পড়ে নিজেদের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে ফেলে। তাদের পেশাগত ভবিষ্যৎও ঝুঁকির মুখে পড়ে।
    • আত্ম-ক্ষতি ও আত্মহত্যার মর্মান্তিক পরিণতি: বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মানসিক ব্যথা, হতাশা, একাকিত্ব থেকে মুক্তির শেষ পথ হিসেবে তারা এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকেই আত্মহত্যা না করলেও নিজেদের ক্ষতির মাধ্যমে (কাটাকাটি, পোড়ানো) মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা করে। প্রতিটি আত্মহত্যা বা আত্ম-ক্ষতির ঘটনা শুধু একটি প্রাণই নেয় না, পুরো পরিবার ও বন্ধু মহলকে ভেঙে দেয়।
    • ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ও আসক্তির জাল: মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে বা সহপাঠীদের চাপে অনেক কিশোর-কিশোরী মাদক সেবন, ধূমপান, অনিরাপদ যৌনাচার, অবাধ যৌন সম্পর্ক বা জুয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এসব আচরণ স্বাস্থ্যঝুঁকি (যৌনরোগ, এইচআইভি), অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া এবং দীর্ঘমেয়াদী আসক্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা পুরো জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে।
    • আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ক্ষতি: মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সহপাঠীদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা বা একদম গুটিয়ে নেওয়ার কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই বিচ্ছিন্নতা তাদের সমস্যাকে আরও গভীর করে।
    • দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা: মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা শুধু মনকেই নয়, শরীরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর প্রভাবে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পাচনতন্ত্রের সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং অনাক্রম্যতা দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিশোর বয়সে সৃষ্ট মানসিক সমস্যা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেও স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
    • সামাজিক সমস্যা ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি: অপরিচালিত রাগ, হতাশা, আত্ম-মূল্যবোধের অভাব কিশোর-কিশোরীদের সহিংস আচরণ, ভ্যান্ডালিজম বা অপরাধমূলক কার্যকলাপের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা ও অপরাধের মাত্রা বাড়ায়।
    • জাতীয় উৎপাদনশীলতা হ্রাস: একটি অসুস্থ, হতাশাগ্রস্ত, অনুপ্রাণিতিহীন যুব প্রজন্ম দেশের জন্য মূল্যবান মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারে না। তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত না হলে জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। কিশোর বয়সের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ভবিষ্যৎ কর্মক্ষম জনশক্তির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

    স্পষ্টতই, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা করা শুধু তাদের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা যার দিকে আমাদের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিটি উপেক্ষিত কষ্ট, প্রতিটি নীরবে কাঁদা প্রাণ, প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা আমাদের সমাজের ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেয়।

    আলোর পথ: পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজের ভূমিকা

    এই সংকট মোকাবিলা এবং কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উন্নয়ন কোনো একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়। এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার বিষয়, যেখানে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

    • পরিবার: নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা:
      • খোলামেলা ও অভয়দায়ক যোগাযোগ: বাবা-মায়ের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হল সন্তানের সাথে খোলামেলা, বিচারমুক্ত আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া (“তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি”), সমাধানের পথে সাহায্য করা। অভিযোগ বা তিরস্কারের পরিবর্তে সহানুভূতি ও সমর্থন দেখানো। সিলেটের সুমাইয়ার মা এখন নিয়মিত তার সাথে গল্প করেন, স্কুলের ঘটনা, বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক, তার ভয়-আশা সব শোনেন, সমাধান দিতে না পারলেও শুধু শোনেন – এই সহজ কাজটিই সুমাইয়ার মনে বিশাল পরিবর্তন এনেছে।
      • অতিরিক্ত চাপ কমানো ও বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা: সন্তানকে তার আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করা। প্রত্যেকের সক্ষমতা আলাদা – এই বোধটুকু রাখা। পরীক্ষার ফলাফলকে জীবনের একমাত্র সাফল্যের মাপকাঠি না বানানো। খেলাধুলা, শিল্পচর্চা, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ দেওয়া।
      • সুস্থ রোল মডেল হওয়া: বাবা-মা নিজেরাও যেন মানসিক চাপ মোকাবিলা করেন সুস্থ উপায়ে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা, সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো সন্তানদের শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
      • সতর্ক দৃষ্টি ও প্রাথমিক লক্ষণ চেনা: সন্তানের আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের ধরণ, সামাজিক মেলামেশায় আকস্মিক পরিবর্তন (যেমন: সব সময় বিষণ্ণ থাকা, আগে পছন্দের কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, খাওয়া-ঘুম কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যাওয়া, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, আত্ম-ক্ষতির চিহ্ন) লক্ষ্য করা। এগুলো কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হতে পারে।
      • পেশাদার সাহায্য নেওয়ায় সংকোচ না করা: যদি সমস্যা জটিল মনে হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, অবশ্যই শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। এটা কোনো লজ্জার বা দুর্বলতার বিষয় নয়, বরং দায়িত্বশীলতার পরিচয়।
    • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কেবল জ্ঞানের নয়, মানসিক সুস্থতারও আলোকবর্তিকা:
      • সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং সেবা বাধ্যতামূলক করা: প্রতিটি স্কুল ও কলেজে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর নিয়োগ জরুরি। যিনি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা, একাডেমিক চাপ, সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে গোপনীয়তার সাথে আলোচনা করতে পারবেন। ঢাকার কিছু নামকরা স্কুলে এই ব্যবস্থা থাকলেও দেশের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানে এর বড় অভাব।
      • সহনশীল ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে আরও সংবেদনশীল করে তোলা। শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। শ্রেণিকক্ষে সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা, প্রতিযোগিতার চাপ কমিয়ে আনা। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
      • জীবন দক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম: পাঠ্যক্রমে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা। আবেগ চেনা ও নিয়ন্ত্রণ, চাপ ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আত্ম-সচেতনতা, ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা, অনলাইন নিরাপত্তা – এসব জীবন দক্ষতা শেখানোর ব্যবস্থা করা। বার্ষিক পরিকল্পনায় মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সেমিনার, ওয়ার্কশপের আয়োজন করা।
      • সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীর প্রসার: খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, রোবোটিক্স, স্বেচ্ছাসেবী কাজ – এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শক্তি খুঁজে পেতে, দলগতভাবে কাজ করতে এবং চাপমুক্ত হতে সাহায্য করে। এর জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দিতে হবে।
      • বুলিং ও হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি: বিদ্যালয়ে যেকোনো ধরণের বুলিং (শারীরিক, মানসিক, অনলাইন) বা হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর নীতি ও তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়া থাকা চাই।
    • সরকার ও নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব:
      • জাতীয় কিশোর স্বাস্থ্য কৌশলে মানসিক স্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার: কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবায় মানসিক স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়া। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে (ইউনিয়ন, উপজেলা) প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা।
      • বিশেষায়িত সেবা সম্প্রসারণ: জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে কিশোর-বান্ধব মানসিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক স্থাপন ও সেবার মান উন্নয়ন। প্রশিক্ষিত শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সংখ্যা বাড়ানো।
      • সচেতনতামূলক ব্যাপক প্রচারণা: টেলিভিশন, রেডিও, সোশ্যাল মিডিয়া, স্কুল কার্যক্রমের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করা। মানসিক সমস্যাকে কলঙ্কমুক্ত করা এবং সাহায্য চাওয়াকে উৎসাহিত করা।
      • গবেষণা ও তথ্য ব্যবস্থাপনা: কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় জরিপ পরিচালনা করা এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে নীতিমালা প্রণয়ন করা।
      • শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার: পরীক্ষাভিত্তিক চাপ কমিয়ে আনন্দময় ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার দিকে ঝোঁকা। শিক্ষকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা।
    • সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন:
      • কলঙ্ক দূরীকরণ: মানসিক অসুস্থতাকে ‘পাগলামি’ বা ‘দুর্বলতা’ হিসেবে দেখা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়াকে লজ্জার বিষয় ভাবার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
      • সমর্থনমূলক সম্প্রদায় গঠন: প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান – সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো কিশোর-কিশোরী সমস্যায় পড়লে তাকে সহানুভূতি ও সমর্থন দেওয়া, বিচার না করা। বন্ধুদের মধ্যেও একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ, সমস্যা হলে বড়দের জানানো বা সাহায্য চাওয়ার মনোভাব গড়ে তোলা জরুরি।
      • মিডিয়ার ভূমিকা: গণমাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ইতিবাচক, সচেতনতামূলক ও বাস্তবসম্মত প্রতিবেদন প্রচার করা উচিত। আত্মহত্যার খবর প্রকাশে সংবেদনশীলতা বজায় রাখা এবং সহায়তা লাইনের নম্বর উল্লেখ করা।

    প্রযুক্তি: অভিশাপ নাকি আশীর্বাদ?

    স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি সঠিক ব্যবহারে এগুলো হতে পারে বড় সহায়কও।

    • ঝুঁকি: অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, অনলাইন বুলিং, অপর্যাপ্ত ঘুম, অশালীন কনটেন্ট, ‘ফোমো’ (Fear of Missing Out), বাস্তব জীবনের সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা।
    • সুযোগ: মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া (Kaan Pete Roi, Moner Bondhu সহ বিভিন্ন হেল্পলাইন ও সংস্থার ওয়েবসাইট/অ্যাপ)। অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দেওয়া (তবে সতর্কতার সাথে)। মন ভালো রাখার অ্যাপ (মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস), সৃজনশীলতা প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম (ব্লগিং, আর্ট, মিউজিক)। শিক্ষামূলক কনটেন্ট ও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ।

    পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়: স্ক্রিন টাইম সীমিত করা, অনলাইন নিরাপত্তা শেখানো, গ্যাজেট-ফ্রি সময় (বিশেষ করে খাবার টেবিল ও ঘুমানোর আগে) তৈরি করা, অনলাইনে কী করছে তা নিয়ে আগ্রহ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা, এবং প্রয়োজনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার ব্যবহার করা। পাশাপাশি, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপস বা অনলাইন রিসোর্স সম্পর্কে তাদের অবহিত করা।

    আশার কথা: কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ

    যদিও পথ দীর্ঘ, কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা জাগায়:

    • সরকারি উদ্যোগ: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিশোর স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যদিও বাস্তবায়ন ধীর। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কিশোরদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড বা ক্লিনিকের দাবি জোরালো হচ্ছে।
    • এনজিও ও হেল্পলাইন: কান পেতে রই (সুইসাইড প্রিভেনশন হেল্পলাইন - ০১৭৭৯৫৪৩৮৯১, ০১৭৭৯৫৪৩৮৯২), মনেবন্ধু (০৮০০০০৬৬২৬৩), জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন (০৯৬১১৬৭৭৭৫৫) এর মতো সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও স্কুলে সচেতনতামূলক সেশন চালাচ্ছে।
    • তরুণদের সক্রিয়তা: তরুণরাই এখন সামাজিক মিডিয়ায়, ক্যাম্পাসে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলছে, সচেতনতা ছড়াচ্ছে, পিয়ার সাপোর্ট গ্রুপ গড়ে তুলছে। এই কণ্ঠস্বরগুলোই সবচেয়ে শক্তিশালী।

    জেনে রাখুন (FAQs)

    • কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
      কিশোর-কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে: ক্রমাগত দুঃখ, রাগ বা খিটখিটে মেজাজ; প্রিয় কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা; খাওয়া বা ঘুমের অভ্যাসে বড় পরিবর্তন (খুব কম বা বেশি খাওয়া/ঘুমানো); শক্তি কমে যাওয়া বা ক্লান্তি; মনোযোগ দিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা; নিজেকে মূল্যহীন বা অপরাধবোধে ভোগা; স্কুলে যেতে না চাওয়া বা ফলাফল খারাপ হওয়া; বন্ধু ও পরিবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া; মাথাব্যথা বা পেটব্যথার মতো শারীরিক সমস্যা; নিজের ক্ষতি করার কথা বলা বা করা; মৃত্যু বা আত্মহত্যার কথা বলা। লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে সতর্ক হতে হবে।
    • আমার সন্তান/শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছে বলে সন্দেহ হলে আমি কী করব?
      প্রথমেই গুরুত্ব সহকারে তার কথা শুনুন, বিচার করবেন না বা হালকাভাবে নেবেন না। তাকে বলুন আপনি তার পাশে আছেন এবং তার অনুভূতি বুঝতে চেষ্টা করছেন। অভয় দিন যে সাহায্য পাওয়া যায়। খোলামেলা আলোচনা করতে উৎসাহিত করুন। স্কুল কাউন্সেলর (যদি থাকে) বা শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিন। জরুরি অবস্থায় (যেমন আত্মহত্যার ইঙ্গিত বা প্রচণ্ড আতঙ্ক) অবিলম্বে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন (০৯৬১১৬৭৭৭৫৫), কান পেতে রই (০১৭৭৯৫৪৩৮৯১, ০১৭৭৯৫৪৩৮৯২) বা মনেবন্ধু (০৮০০০০৬৬২৬৩) অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
    • কিশোর বয়সী ছেলে-মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কি একই রকম হয়?
      কিছু সমস্যা উভয়ের মধ্যে সাধারণ, যেমন বিষণ্নতা, উদ্বেগ। তবে প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। মেয়েরা বিষণ্নতায় বেশি দুঃখ প্রকাশ করতে পারে, আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে পারে, আত্ম-ক্ষতির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ছেলেরা বিষণ্নতায় রাগ, খিটখিটেমি, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ (মাদক, মারামারি) বা শারীরিক উপসর্গ (মাথাব্যথা) বেশি দেখাতে পারে। আচরণগত সমস্যা (ADHD, কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার) ছেলেদের মধ্যে কিছুটা বেশি নজরে আসে। তবে এটা একেবারে সুনির্দিষ্ট নয়, ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা আছে।
    • কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে অভিভাবক হিসেবে আমার ভূমিকা কী?
      অভিভাবক হিসেবে আপনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়ে তুলুন যেখানে সন্তান তার সব কথা বলতে পারে। তার অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করুন ও সমর্থন দিন। বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা রাখুন, অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। ইতিবাচক আচরণের প্রশংসা করুন। সুস্থ জীবনযাপনের (পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, শারীরিক ক্রিয়া) জন্য পরিবেশ তৈরি করুন। নিজে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানুন এবং এর গুরুত্ব বুঝুন। প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। নিজের মানসিক সুস্থতারও যত্ন নিন।
    • স্কুল-কলেজে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী করা উচিত?
      প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচিত প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর নিয়োগ দেওয়া এবং নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশন পরিচালনা করা। শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। পাঠ্যক্রমে জীবন দক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা। সহনশীল, সম্মানজনক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যেখানে কোনো রূপ হয়রানি বা বুলিং সহ্য করা হবে না। সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মশালা ও আলোচনার আয়োজন করা। অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সন্তানের সার্বিক বিকাশ নিয়ে আলোচনা করা।
    • মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং নেওয়া কি খুব ব্যয়বহুল?
      ব্যয়বহুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, বিশেষ করে বেসরকারি ক্লিনিকে। তবে বাংলাদেশে এখন কিছু সহজলভ্য ও কম খরচের বিকল্পও আছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে (জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগ) চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কিছু এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কাউন্সেলিং সেবা দেয় (যেমন: কান পেতে রই, মনেবন্ধু)। টেলিফোন হেল্পলাইনগুলো প্রায়ই বিনামূল্যে সেবা দেয়। এছাড়াও কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাশ্রয়ী মূল্যে অনলাইন কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ আছে। খোঁজ নিয়ে দেখলে সহজলভ্য সহায়তা পাওয়া সম্ভব।

    কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য শুধু একটি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় নয়; এটি আমাদের সমাজের সুস্থতা, দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলতা এবং মানবিক মূল্যবোধেরই প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি কান্না, প্রতিটি টানাপড়েনের পেছনে লুকিয়ে আছে একটি সম্ভাবনাময় প্রাণের গল্প, যে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারে। তাদের মনের যুদ্ধে আমরা যদি আজ দর্শক হয়ে থাকি, যদি তাদের আর্তনাদকে উপেক্ষা করি, যদি কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য না দেই, তবে আমরা শুধু ব্যক্তিকেই হারাই না, হারাই দেশের অমূল্য সম্পদ, হারাই আমাদেরই ভবিষ্যৎকে। সুমাইয়া, রাফি, আয়েশাদের গল্প যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য দরকার সবার সচেতন দৃষ্টি, সহানুভূতিশীল হৃদয় এবং দৃঢ় অঙ্গীকার। পরিবারকে হতে হবে প্রথম আশ্রয়স্থল, বিদ্যালয়কে হতে হবে নিরাপদ ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্র, সমাজকে হতে হবে সহায়কের ভূমিকায়, আর সরকারকে নিতে হবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। আপনার সন্তান, আপনার ছাত্র-ছাত্রী, আপনার পাশের বাড়ির কিশোরটির দিকে একটু সজাগ দৃষ্টি দিন। তার সাথে খোলামেলা কথা বলুন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন, একটি সময়োপযোগী কথোপকথন, একটু সমর্থন, একটু সাহায্যের হাতই হয়তো একটি প্রাণ বাঁচাতে পারে, একটি ভবিষ্যৎকে আলোর পথ দেখাতে পারে। আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে এই লেখাটি পড়ার পরই, আজই, আশেপাশের কোন কিশোর-কিশোরীর খোঁজ নিন। তাদের মানসিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখুন – কারণ তাদের সুস্থ ভবিষ্যতই আমাদের সকলের সুস্থ ভবিষ্যত।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    adolescent mental health in bangladesh digital addiction emotional well-being exam pressure kishor manoshik shastho kishori manobik somossa mental health awareness NIMH parenting tips school bullying school mental health program suicide helpline bangladesh teen anxiety অভিভাবক গাইড আত্মহত্যা প্রতিরোধ এত ওঠা কাউন্সেলিং বাংলাদেশ কান পেতে রই কিশোর মানসিক স্বাস্থ্য কিশোর-কিশোরীদের কিশোরী মানসিক সমস্যা কেন গুরুত্বপূর্ণ টিন ডিপ্রেশন টিনেজার মেন্টাল হেলথ দক্ষতা বুলিং সমাধান মনেবন্ধু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মানসিক লাইফ লাইফস্টাইল শিক্ষা সম্পর্ক স্কুল সাইকোলজি স্বাস্থ্য হ্যাকস
    Related Posts
    বিড়াল

    বিড়াল সম্পর্কে মজার তথ্য: অবাক করা সত্য!

    July 11, 2025
    Land

    বাবার জমি লিখে নিয়েছে অন্য কেউ? জানুন দেশের আইনি প্রতিকার

    July 11, 2025
    banana

    কলা কখন খেলে বেশি উপকার, দিনে না রাতে?

    July 11, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Khilona-web-seriesPrimeshots-Cas

    একা থাকলেই খেলনা দিয়েই সুখ মেটান যুবতী, ভুলেও কারও সামবেন দেখবেন না

    বিড়াল

    বিড়াল সম্পর্কে মজার তথ্য: অবাক করা সত্য!

    বাইরে বসে খেলা যাবে না, মাঠে আসুন : হাসনাত আব্দুল্লাহ

    ছবি

    ছবিটি জুম করে দেখুন, এটি বলে দিবে আপনি কেমন মনের মানুষ

    Land

    বাবার জমি লিখে নিয়েছে অন্য কেউ? জানুন দেশের আইনি প্রতিকার

    আবুল বারকাত

    ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি: আবুল বারকাত কারাগারে

    মাহাথির মোহাম্মদ

    গণতন্ত্র ব্যর্থ, আধুনিক সভ্যতাও ধ্বংসপ্রাপ্ত : মাহাথির মোহাম্মদ

    ওয়েব সিরিজ

    প্রেম, আবেগ ও রহস্যে মোড়া নতুন ওয়েব সিরিজ, একা দেখুন!

    Pori Moni

    পরীমণির নতুন ভিডিও ভাইরাল, নজর কেড়েছে নেটিজেনদের

    ওয়েব সিরিজ

    রোমান্স ও নাটকীয়তার গল্প নিয়ে উল্লুর নতুন ওয়েব সিরিজ, একা দেখুন!

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.