জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় কৃষিতে আলো ছড়াচ্ছে আইপিএম প্রযুক্তি। উপজেলার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কিষান-কিষানিদের আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, পরিবেশবান্ধব কৃষি ও নিরাপদ খাদ্যের জন্য কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন কীভাবে করা যায় তা শিক্ষা দেওয়া হয় কৃষক মাঠ স্কুলে।
স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বশিক্ষিত কৃষক। তবে এই স্কুলে শেখানো কৃষিপ্রযুক্তি খেতে প্রয়োগ করে দাগনভূঞা উপজেলার কিষান-কিষানির দিনবদলে সুদিন ফিরেছে। প্রশিক্ষিত কৃষকরা ইতোমধ্যে আইপিএম পদ্ধতিতে চাষবাদ শুরু করেছেন। আবার প্রশিক্ষিত কৃষকদের কাছ থেকে শিখে আইপিএম ধারণা নিচ্ছেন অন্য কৃষকরা। এতে উৎপাদনে খরচ যেমন কমেছে, তেমনি পরিবেশও ভালো থাকছে। ফলস্বরূপ মানুষ পাচ্ছে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে নিরাপদ ফসল উৎপাদন ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (আই পি এম) প্রকল্পের আওতায় কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম শুরু করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই বছর রবি মৌসুমে দাগনভূঞার ৩টি কৃষক মাঠ স্কুলে ৭৫ জন কৃষককে সপ্তাহে এক দিন পাঠ দেওয়া হয়।
১৪ সপ্তাহ মেয়াদে প্রতিটি স্কুলে ২৫ জন কিষান-কিষানি বিনা বেতনে ভর্তি হন। তাদের সপ্তাহে এক দিন দুজন কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহায়তাকারী চার ঘণ্টা করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের শিক্ষা দেন। পরিচয় করানো হয় উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাতের সঙ্গে, পরিবেশবান্ধব কৃষি ও নিরাপদ খাদ্যের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য যান্ত্রিক উপায়ে ফসলের ক্ষতি করে এমন শত্রু পোকা দমন করার পদ্ধতি। ফলে উপকারী পোকা, মাছ, ব্যাঙ, পশু, পাখি, গুইসাপসহ নানা উপকারী জীব রক্ষা পায়। ফসলের ক্ষতিকারক পোকা মাকড় ও রোগবালাই দমনে পার্চিং, ব্যাম্বো বুস্টার পদ্ধতি, ফেরোমন ফাঁদ,আলোক ফাঁদ,বিষ টোপ, হলুদ আঠালো ফাঁদ,জৈব সার প্রয়োগ, হাত জাল,ভেষজ জৈব বালাইনাশকসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক উপায় ব্যবহার করা হয়। এতে উৎপাদন ব্যয়ও কমে যায়।
সরেজমিন উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এক দল কিষান-কিষানি বেশ মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছেন। শিখছেন কৃষির নানা উন্নত প্রযুক্তি, সবজি ফসলে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার জৈবিক পদ্ধতির মাধ্যমে উপকারী পোকামাকড় ও প্রাণী সংরক্ষণ, বালাই সহনশীল জাতের চাষ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, বালাইনাশকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার। ক্লাসের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী খেতে কৃষান-কৃষানিদের শিখানো পদ্ধতির ব্যবহার দেখানো হচ্ছে।
চন্দ্রদ্বীপ গ্রামের কৃষক মাহফুজ বলেন, ‘আইপিএম ট্রেনিংয়ে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বিষ ব্যবহার না করে কীভাবে ভালো সবজি উৎপাদন করা যায়। জৈবিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন ও সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করে তা জানতে পেরেছি। আইপিএম সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ক্ষতিকারক পোকা দমন করতে পেরেছি।’
উপজেলার বৈরাগিরহাট গ্রামের কৃষাণী শিল্পী রাণী পোদ্দার বলেন, ‘কীভাবে ভালো কীটনাশক বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায় এই স্কুলে আমরা তা শিখেছি। আমি যা শিখেছি সেটা আমার আশেপাশের আরও যে কৃষক আছে যারা প্রশিক্ষণ পায়নি তাদেরকে শিখাবো। অনেক অজানা বিষয়গুলো আমাদেরকে জানানোর জন্য কৃষি সহায়তাকারী মারুফ স্যারকে ধন্যবাদ।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আইপিএম এর মাধ্যমে কীটনাশক ব্যবহার না করে কীভাবে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় তা শেখাতে ১৪টি সেশনের মাধ্যমে ২৫ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আমি আশা করি এই ২৫ জন কৃষকের মাধ্যমে পুরো ইউনিয়নে আইপিএম পদ্ধতি পৌছে যাবে।’
আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষক ও সহয়তাকারী, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘২০২২ সালে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প থেকে ৬০ দিনব্যাপী টিওটি গ্রহণ করি এবং কীভাবে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি। আমরা কৃষি অফিসের দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক ও এই আইপিএম স্কুলের প্রশিক্ষনার্থীদের দিয়ে স্থাপন করা ফসলে প্রদর্শনী ও ট্রায়াল প্লটে সরসারি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এখানে দলীয় গতিময়তার পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে কৃষক আইপিএম এর কৌশল ও উপকারী পোকা মাকড় ও ক্ষতিকারক পোকা মাকড় এবং কৃষির উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন।’
তিনি জানান, ‘সর্বশেষ মাঠ দিবসের মাধ্যমে আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলে সদস্যদের নিয়ে আইপিএম কৃষক ক্লাব সৃষ্টি করা হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, বালাই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। চাষিরা এই পদ্ধতি সাদরে গ্রহন করছেন। বিস্তর এলাকা জুড়ে চাষিরা ওই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে যাচ্ছেন। পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ, কৃষি, কৃষক ও জনস্বার্থের উন্নতি সাধন করাই এর লক্ষ্য। আইপিএম পদ্ধতির সুফল সকল চাষির কাছে পৌঁছে দিতে সরকারের কৃষি বিভাগ নিরন্তন চেষ্টা চলাচ্ছে বলেও দাবী এই কৃষি কর্মকর্তার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।