লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনিয়মের কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘স্লিপ ডিস্ক’ বা ‘ডিস্ক প্রোল্যান্স’ এর সৃষ্টি হয়। দিনের পর দিন কোমরের কাছে মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের মাঝে ভুল ভাবে বেশি চাপ পড়তে পড়তে এক সময় বসে থাকা নরম কুশন হড়কে গিয়ে পিছনের স্নায়ুতে চাপ দিতে শুরু করে। এর ফলে শুরু হয় কারেন্ট লাগার মতো তীব্র ব্যথা। দেখা দেয় ‘অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্স’।
অনেক সময় নীচু হয়ে হ্যাঁচকা টানে কিছু সরাতে গিয়ে বা না জেনেবুঝে ব্যায়াম করতে গিয়েও সমস্যা হতে পারে। আবার ব্যায়াম না করার অভ্যাস ও ওবেসিটি থাকলেও সমস্যা হতে পারে। ১৫-৪০ বছর বয়সে এ রোগ বেশি হয়। ৫০-৮০ বছর বয়সের মানুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয় ‘ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্স’। এই অসুখে প্রথম দিকে হালকা ব্যথা হয়। পরিমাণ কম থাকে বলে অনেকেই ব্যথাকে পাত্তা দেয় না। তাই ভিতরে ভিতরে জটিল হয়ে উঠতে থাকে এই ব্যথা। এমন একটা সময় আসে যখন দেখা যায়, হাঁটতে গেলে পায়ে যন্ত্রণা হয়, দাঁড়াতে বা বসতে গেলেও হয়।
রোগ ঠেকাতে যা যা করণীয় : চিকিৎসকদের মতে, স্লিপ ডিস্ক ঠেকাতে প্রতি দিনের জীবনে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলাটা একান্তই দরকার। যেমন :
► ওজন ও ভুঁড়ি ঠিক রাখুন। শুধু কার্ডিও-ই নয়, কোমরের পেশি সবল করার ব্যায়াম করুন নিয়মিত।
► হাঁটা বা বসার সময় কোমর ও শিরদাঁড়া সোজা রাখুন।
► আধশোয়া হয়ে বা শুয়ে বই পড়া, টিভি দেখা যত কমানো যায় ততই ভালো।
► কোমরে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ব্যাক রিল্যাক্সিং আসন করুন।
► দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে হলে কোমরের কাছে সাপোর্ট দেওয়া চেয়ারে সোজা বসুন।
► একটানা বসে না থেকে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটাচলা করে বা ব্যাক স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন। এতে সমস্যা কম হয়।
► নিয়মিত সাঁতার কাটলে খুব ভালো কাজ হয়।
► মেয়েরা ৪৫ আর ছেলেরা ৬০ বছর বয়সের পরে ডাক্তার দেখিয়ে ভিটামিন ডি খান।
► চিকিৎসকের পরামর্শ মতো হাড় মজবুত রাখার ওষুধও খেতে হবে।
► প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা ভোরের রোদে থাকুন।
► অতিরিক্ত ধূমপানে হাড় পাতলা হয়। কাজেই অভ্যেস বদলান।
► মদ্যপান ছেড়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। একান্তই তা না পারলে এক থেকে দেড় পেগের বেশি একেবারেই চলবে না।
হাড় সবল করতে কী কী খাবেন? হাড় সবল করতে আমিষ খাবারের জুড়ি নেই। বিশেষ করে ডিম, কাঁটা সমেত স্যামন, সারডিন ও চুনো মাছ রাখুন ডায়েটে। এর সঙ্গে দুধ ও দুধের খাবার, মাশরুম, কড লিভার অয়েল, মাখন, ঘি, সবুজ শাকসবজি, বাদাম, কুমড়ো পাতা, টোফু, পোস্ত ইত্যাদিও রাখতে হবে খাবাহর পাতে। এর পরেও রোগের হানা দেখা দিতে পারে। তেমনটা হলে কী কী উপায়ে তার সঙ্গে যুঝবেন তা জেনে রাখা দরকারি।
অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে বিশ্রাম, সামান্য ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, বেল্ট, ব্যায়াম ইত্যাদির সাহায্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা কমে যায়। তবে যদি তীব্র ব্যথার সঙ্গে পায়ে জোর পাওয়া যায় না। আঙুল নাড়ানো বা পায়ের পাতা উপরে তুলতে কষ্ট হয়। এমন পরিস্থিতিতে এমআরআই স্ক্যান করে অবস্থার পর্যালোচনা করা দরকার। ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে কয়েকটি নিয়ম ও সামান্য ওষুধেই প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অ্যাকিউট ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের অপারেশন বলতে যেটুকু ডিস্ক হাড়ের খাঁচার বাইরে বেরিয়ে এসেছে তাকে কেটে নার্ভকে চাপমুক্ত করা। খুব একটা কাটাছেঁড়া করতে হয় না এতে। কখনও মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে, কখনও ছোট্ট ফুটো করে এন্ডোস্কোপের সাহায্যে অপারেশন হয়। ক্রনিক ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে বড় অপারেশন লাগে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপারেশনের পর সমস্যা কমে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।