জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে তৈরি পোশাক খাতের সহকারি অপারেটরের মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বরাবর এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমান ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জাঁতাকলে শ্রমিক জীবন নিষ্পেষিত হচ্ছে। ক্রমাগত বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে শিল্প এলাকায় অস্বাভাবিক বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
একজন পোশাক শ্রমিককের পরিবার পরিচালনার সামগ্রিক মাসিক ব্যয় তুলে ধরে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে একজন শ্রমিক পরিবারকে সাধারণ হিসাবেই মাসিক জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা খাদ্য বাবদ বরাদ্দ রাখতে হয়। সুতরাং শ্রমিকদের পরিবারের ৪ জনের খাদ্য বাবদ ১৬ হাজার টাকা দরকার হয়। এছাড়া বাড়ি ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা, ২ সন্তানের পড়ালেখার ন্যূনতম খরচ ২ হাজার টাকা, চিকিৎসা খরচ ন্যূনতম ২ হাজার টাকা, যাতায়াত বাবদ ১ হাজার টাকা, বিনোদনের জন্য ২ হাজার টাকা, খাদ্য বহির্ভূত খরচ ১ হাজার টাকাসহ ন্যূনতম সঞ্চয় ১ হাজার টাকা প্রয়োজন হয় একটি শ্রমিক পরিবারের। ফলে হিসাব অনুসারে একজন শ্রমিকের মোট ৩৫ হাজার টাকার প্রয়োজন পড়ে।
গ্লোবাল লিভিং ওয়েজ কোয়ালিশন অনুসারে, পোশাক খাতের জন্য ন্যূনতম মজুরি ২১ হাজার ৬৪৮ টাকা হওয়া দরকার বলেও উল্লেখ করা হয়। শ্রমিকদের ২০১৮ সালে মজুরি ৮ হাজার টাকা; ২০১৮ সালে ১ ডলার সমান ৮২ টাকা ছিল, সে হিসেবে তখন ৯৮ ডলার বেতন ছিল।
বর্তমানে ডলারের অবমূল্যায়নের কারণে সরকারি রেট অনুযায়ী, ১ ডলার সামন ১০৬ টাকা। সে হিসেবে বর্তমানে শ্রমিকরা বেতন পান ৭৫ ডলার।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বলছে, গার্মেন্টস মালিকরা টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ২৯ শতাংশ টাকা বেশি আয় করছেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের চাপে শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে কোনোরকম জীবনযাপন করছেন। গার্মেন্টস মালিকরা ২৯ শতাংশ টাকার অবমূল্যায়নে সম্পূর্ণ সুযোগ পেলেও শ্রমিকদেরকে ন্যূনতম আপদকালীন কোনো মহাৰ্য্য ভাতা দেয়া হয়নি। যা অত্যন্ত অমানবিক।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে সংগঠনটি বলছে, এরইমধ্যে বাংলাদেশ পোশাক রফতানিতে চীনকে টপকিয়ে শীর্ষে অবস্থান নিলেও বিশ্বের সবচাইতে কম মজুরিতে এদেশের পোশাক শ্রমিকরা কাজ করেন। বিভিন্ন দেশের পোশাক শ্রমিকরা যেমন- চীনে ২৬২ ডলার, ভারতে ১২৮ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ১৩৭ ডলার, কম্বোডিয়ায় ১৯৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ থেকে ২৭৩ ডলার, ফিলিপিন্সে ২৪৪ ডলার, ভিয়েতনামে ১৬৮ ডলার, তুরস্কে ৩০৭ ডলার পান। কিন্তু বিপরীতে বর্তমান ডলারের মূল্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা পান ৭৫ দশমিক ৫ ডলার।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, শ্রম মন্ত্রণালয় দেশের পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের শ্রমিক পক্ষের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। গত ২৪ মে বোর্ড সভা করলেও আশানরূপ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
এক্ষেত্রে স্মারকলিপিতে চারটি দাবি তুলে ধরেছে সংঘঠনটি। সেগুলো হচ্ছে-
১. বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ৭ম গ্রেডের সহকারি অপারেটরের মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি ৭টি গ্রেডের মধ্যে ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গ্রেড বিলুপ্ত করা।
২. বাকি অন্যান্য গ্রেডে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবধান রেখে নতুন মজুরি কাঠামো প্রণয়ন করা।
৩. ফুরণ ভিত্তিক/পিস রেটের সোয়েটার শ্রমিকদের যে কোনো কাজের স্টাইলের কাজ করার আগে প্রতি পিস কাজের মূল্য ঘোষণাসহ নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ঘোষিত কোন গ্রেডের শ্রমিক হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে, তা নিয়োগপত্র/ পরিচয়পত্রে উল্লেখের নির্দেশ দেয়া।
৪. ফুরণ ভিত্তিক/পিস রেটের শ্রমিকদের সাধারণ কর্মঘণ্টার পর ওভারটাইম করানো হলে সেখানে পিস রেটের ডাবল রেট দেয়ার সুস্পষ্ট বিধান গেজেটে কামনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।