সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুপাতো ভাই মো: ইসরাফিল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব সাহা ও জেলা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষসহ মোট সাতজন প্রার্থী।
নির্বাচনী বিধি মোতাবেক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় সংসদের সদস্যদের সরাসরি প্রচারণায় নামার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেই আইন অমান্য করে নিজের আপন ফুপাতো ভাই ও পছন্দের প্রার্থী মো: ইসরাফিল হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে এমপি জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে জেলার সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকায় এমপি জাহিদ মালেকের মালিকানাধীন শুভ্র সেন্টারে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম, মোয়াজ্জিন ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্বাচনী প্রচারণা করেন এবং পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান।
পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশকে যদি এগিয়ে যেতে হয় তাহলে একটা সঠিক নেতৃত্ব দরকার। আমাদের যেসব অসুবিধা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হলে সঠিক নেতা নির্বাচন করতে হবে। একটা পরিবারে যদি ভালো নেতা থাকে তাহলে সেই পরিবারটি ভালো থাকে। একটা ওয়ার্ডে যদি ভালো মেম্বার থাকে তাহলে সেই ওয়ার্ড ভালো থাকে। একটা ইউনিয়নে যদি ভালো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে সেই ইউনিয়নও ভালো থাকে। তেমনই একটা উপজেলায় যদি একজন ভালো নেতাকে বেছে নিতে পারেন তাহলে উপজেলার মঙ্গল হবে।
তিনি আরও বলেন, যে নেতার শিক্ষা আছে, যে নেতা ধার্মিক, অন্যায় কাজ করেনা, ঠিকমত ধর্মকর্ম পালন করে, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে সেই ধরনের একজন নেতা যদি আমরা বেছে নিতে পারি তাহলে সমাজের মঙ্গল হবে। আপনারা যদি একজন ভালো এমপি বানাতে পারেন তাহলে এলাকার উন্নয়ন হয়। এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ একজন এমপি তৈরি করতে পারে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আপনাদের নেতা নির্বাচন করতে হবে।
ঈমাম-মোয়াজ্জিনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ধরেন একজন ইঞ্জিনিয়ার যদি একটা ব্রীজের কাজ করতে গিয়ে ভুল করে তাহলে শুধু সেই ব্রীজটারই ক্ষতি হয়। একজন ডাক্তার যতি চিকিৎসা দিতে গিয়ে ভুল করে তাহলে একজন মানুষেরই ক্ষতি হয়। আর একজন নেতা বেছে নিতে ভুল করলে গোটা সমাজের ক্ষতি হয়। কাজেই একজন নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে লোক আমাদের কাজ করে যে আমাদের অনুভূতি বুঝবে, আমাদের সকল বিষয়ে সহযোগিতা করবে, আমাদের রাজনৈতিক বিষয়ে, ধর্মীয় বিষয়ে, অর্থনৈতিক বিষয়ে যে আমাদের পাশে থাকবে সেই ধরনের নেতা বেছে নিতে হবে। তাই আপনারা এই দিকগুলো চিন্তা করে সামনের নির্বানে ভোট দিবেন।
তিনি আরো বলেন, আপনারা ভোট দিবেন। আপনারা, আপনাদের পরিবার-পরিজনও ভোটের মালিক। এলাকায় আপনারা এলাকার সম্মানী ব্যক্তি। আপনারা কথা বললে লোকজন শুনে। আপনারা সঠিক পথ দেখাতে পারেন, কাকে ভোট দিলে ভালো হবে সেই বিষয়টি আপনারা ভালো বুঝাতে পারবেন। ভালো কাজটি কে করেছে, পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে নেতা কি ভালো? নাকি দিনে একরকম আর রাতে আরেক রকম। আমরা অনেক সময় দেখি অনেকে মদ খায়, জুয়া খেলে, তাদেরকে কি বেছে নেয়া যায়? যায়না। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কাজেই একজন চরিত্রবান লোককে বেছে নিতে হবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন আমরা কি বলতে চাই।
এ সময় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের মো: ইসরাফিল হোসেনের ভাই শামীম হোসেনের সঞ্চালনায় গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফছার উদ্দিন সরকার, জাগীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদসহ শতাধিক মসজিদের ঈমাম-মোয়াজ্জিনরা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন ঈমামরা তাদের বক্তব্যে সংসদ সদস্য জাহিদ মালেকের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, একটি কথা আছে- ‘জ্ঞানী যারা বুঝে তারা শুধু ইশারায়’। এখানে যারা বসে আছেন সবাই অনেক জ্ঞানী-গুণি মানুষ। এমপি মহোদয় আমাদের কি বলতে চেয়েছেন তার কথার ইশারাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়ার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা যে ভুমিকা পালন করেছি, সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আমাদের এমপি মহোদয় যাকে ভালোবাসেন, যার প্রতি আস্থা রেখেছেন, ইতোপূর্বেও আস্থা রেখেছিলেন আমরা সবাই জানি তিনি কে। তিনি আমাদের সকলের প্রিয় মো: ইসরাফিল হোসেন ভাই। তিনি দীর্ঘদিন এই উপজেলার দায়িত্ব পালন করেছেন। যিনি আমাদের এমপি মহোদয়ের মনোনীত। ইসরাফিল হোসেন ভাইয়ের জন্য আমরা আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
বিষয়টি নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমিনুর রহমান মিঞা বলেন, এমপি, মন্ত্রী ও সরকারি চাকুরীজীবি অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
অন্যদিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা রির্টার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বিষয়ে কোন প্রার্থী বা অন্য কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করে তখন আমরা সেটা তদন্ত সাপেক্ষে কি অপরাধ করেছেন সে বিষয়ে বলতে পারবো। আমরা আগেই মন্তব্য করতে পারবো না কোন আইন লঙ্ঘন হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কি শাস্তির বিধান আছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা সেটা তদন্ত সাপেক্ষে হয়তো বলতে পারবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।