মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘবদ্ধ হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, হামলার পাশাপাশি বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে ভুক্তভোগী শেখ শহিদ হরিরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তিনি অভিযোগে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করেন।
অভিযোগে যাদের নাম রয়েছে, তারা সবাই একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। অভিযুক্তরা হলেন: কলাপাড়া গ্রামের মো. ছালেক হোসেন, তার ছেলে সাব্বির, শ্যালক সুমন মোল্লা, ভাই মালেক এবং ফরহাদ। স্থানীয়দের দাবি, এদের বিরুদ্ধে আগে থেকেও নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২২ জুলাই বিকেলে শেখ শহিদের ভাই শেখ জয়নাল ও তার স্ত্রী ছালেহা জমিতে গরুর ঘাস কাটতে গেলে অভিযুক্তরা প্রথমে তাদের গালাগালি করে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা শেখ শহিদের বাড়িতে হামলা চালায়। প্রথমে হামলার শিকার হন শহিদের ভাতিজার স্ত্রী রুমা আক্তার। অভিযোগ রয়েছে, তাকে মারধর এবং শ্লীলতাহানি করা হয়। তার চিৎকারে ছুটে আসা নাজমা আক্তারকেও কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করে আহত করা হয়।
পরে শেখ শহিদের ছেলে সাকিল এগিয়ে এলে তাকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে সাব্বির। বড় ভাই শেখ আয়নাল এগিয়ে এলে ফরহাদ তাকে দা দিয়ে কোপাতে গিয়ে ডান হাতে গুরুতর আঘাত করে। স্থানীয়রা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আহতদের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার সময় আবারও হামলার চেষ্টা করা হয়। পরে তাদের মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেই রাত ১০টার দিকে ৮-৯টি মোটরসাইকেলে করে ১৫-২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আবারও বাড়িতে হামলা চালায়। সাতটি ঘরের মধ্যে ছয়টি ঘরের দরজা-জানালা, টিনের বেড়া, আসবাবপত্র সবকিছু ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়াও নগদ ছয় লাখ টাকা এবং সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, শেখ শহিদ ও তার দুই ভাইয়ের সাতটি ঘরের মধ্যে ছয়টি ঘরের ভিতরের ও বাইরের সবকিছু ভাঙচুর করা হয়েছে। বিদ্যুতের মিটার, তিনটি ফ্রিজ, স্টিলের তিনটি সুকেজসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী শেখ জয়নালের স্ত্রী ছালেহা বলেন, “ছালেক, সাব্বির, সুমন, মালেক ও ফরহাদ আমাদের বাড়িতে এসে গালাগালি করে, পরে সবাইকে মারধর করে। সবাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম, সেই সুযোগে তারা বাড়ি ভেঙে ফেলে, টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়।”
শেখ শহিদ বলেন, “ঘটনার পর থেকে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সঠিক বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা রিজু চৌধুরী বলেন, “যাদের ওপর হামলা হয়েছে তারা নিরীহ। অভিযুক্তরা এর আগেও নানা অপকর্ম করেছে। যেভাবে বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে তা বর্ণনাতীত। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান আলী বলেন, “জমি নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীরা বৈঠক করেছিলেন এবং সিদ্ধান্ত আসে শহিদ ও তার ভাইয়েরা জমির মালিক। ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না, পরে শুনে আহতদের চিকিৎসার পরামর্শ দিই। পরে আরও জানতে পারি বাড়ি ভাঙচুর করে টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে।”
অভিযুক্ত ছালেক হোসেনের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হরিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, “বুধবার রাতে ভুক্তভোগী শেখ শহিদ ৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত শেষে মামলা রুজু করা হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।