জুমবাংলা ডেস্ক : ‘এই সেতু হবে না, হলেও টিকবে না’- ছিল এমন নানা মন্তব্য, মাথা কাটার মতো নানা গুজবও ছড়িয়েছিল। সব গুজব, রটনা ও চ্যালেঞ্জকে পেরিয়েই পদ্মার উপর বসলো ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে জোড়া লাগল রাজধানীর।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আসছে ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা পাড়ি দিয়ে উদ্বোধন হবে সেতুটির। সাথে রয়েছে জমকালো আয়োজন।
এর আগেই পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ও এর নানা প্রকৌশলগত তথ্য নিয়ে চলছে আলোচনা। চায়ের কাপে উঠেছে ঝড়।
এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, পদ্মা সেতু বাঁকা কেন? সোজা করলে তো দৈর্ঘ্য কমতো, ফলে যে ব্যয় নিয়ে এতো সমালোচনা সেটা কিছুটা কমতো! কারণ রড-সিমেন্ট কম লাগতো।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা কি বিষয়টি খেয়াল করেননি? নাকি অন্য কোনো সমস্যা ছিল?
প্রশ্ন যুক্তিযুক্ত, কারণ পদ্মা সেতুর নকশার দিকে তাকালে একে বাঁক দেখা যাবে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, কেবলমাত্র সৌন্দর্য রক্ষার্থে পদ্মা সেতুকে বাঁকা করে বানানো হয়। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়।
এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেতুটি সোজাও হতে পারত। কিন্তু প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ইচ্ছে করেই সেতু বাঁকা করে নকশা করেছেন।
এমনটা করার প্রধান কারণ দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন প্রয়াত বরেণ্য প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ছিলেন এই বিশেষজ্ঞ।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সেতুটি যদি আমরা আকাশ থেকে দেখি তাহলে বোঝা যায়, সেতুটি ডাবলি কার্ভড। অর্থাৎ ডানে-বাঁয়ে দুবার সামান্য বাঁকানো। এমনটা শুধু পদ্মা সেতুর বেলায় করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা জাপানে লম্বা লম্বা মহাসড়কও এভাবে বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়েছে।’
এর ব্যাখ্যায় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছিলেন, এটি মূলত করা হয় চালকদের কথা চিন্তা করে। একদম সোজা সেতু হলে চালকেরা সেতুতে উঠে একঘেয়েমিতায় ভোগেন। ক্লান্তি ও জড়তায় ড্রাইভিং থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। অনেকের তো স্টিয়ারিং একইভাবে ধরে রাখার কারণে ঝিমুনি আসে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। কিন্তু একটু বাঁকানো হলে চালকদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। এর মাধ্যমে তাদের মাথা সচল থাকে শতভাগ। এড়ানো যায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
শুধু চালকের মনোযোগ টিকিয়ে রাখার জন্যই নয়; বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইট সরাসরি যেন চালকের চোখে না পড়ে সে বিষয়টিও মাথায় রেখেছিলেন ইঞ্জিনিয়াররা। সেতু বাঁকা থাকলে আলো সরাসরি চোখে পড়বে না। তাতেও দুর্ঘটনার শঙ্কা কমে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বেশ কিছু কারণ জানিয়েছেন পদ্মা সেতু বাঁকা বানানোর।
শুধু পদ্মা সেতু নয়; যে কোনো বড় সেতুই বাঁকা বানানোই যুক্তিযুক্ত।
এর কারণ হিসেবে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা – একটি সেতুকে তিন ধরনের ওজন বহন করতে হয়- নিজস্ব ওজন; যানবাহনের ওজন; নদীর বা প্রাকৃতিক দূর্যোগের চাপ বা ওজন।
সেতুতে গাড়ি ওঠার সময় কম্পনজনিত চাপ সৃষ্টি হয়। বাঁকা করে তৈরি করা হলে এটি পুরো সেতুতে ছড়িয়ে পড়ে ফলে কম চাপ পড়ে। সোজা হলে পুরো সেতুতে ছড়ায় না। নির্দিষ্ট স্থানে ব্যাপক কম্পন ও চাপ পড়ে। ফলে সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
সেতু বাঁকা করে তৈরি হলে এতে যানবাহনের লোডগুলো সঠিকভাবে প্রতিটি পিলারে আরোপিত হয়।
এছাড়া নদীতে স্রোতের সময় পিলারে প্রচন্ড চাপ পড়ে, কিন্তু বাঁকা হলে চাপ কম পড়ে। মাটিতে সব জায়গায় সমান চাপ থাকে, তাই বাঁকা করলে ভূমিকম্পের সময় সব পিলার কাঠামো ধরে রাখতে পারে।
আরেকটি বড় কারণ বন্যার সময় পানির অধিক চাপেও পিলারগুলো সেতুর কাঠামোকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
এসব কারণে বড় সেতু যেমন পদ্মা সেতু বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির কোনো বিষয় নেই। সেতুকে বেশিদিন টিকিয়ে রাখার জন্যই এমন বুদ্ধি। তাতে খরচ বাড়লেও আপত্তি নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।