জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাজার মোড়ের ফুটপাতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে। সেই ভিড় ঠেলে সামনে এগোলেই বেশকিছু মানুষের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। তাদের কেউ ইফতার সামগ্রী তৈরি করছে, কেউ ক্রেতাদের হাতে সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ টাকা-পয়সার হিসাবে সম্পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন।
বলছিলাম গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাজার মোড়ের বিখ্যাত ইফতারির দোকানের কথা। দোকানটির মালিক মাসুদ খান ফুটপাতের এই দোকান থেকেই প্রতিদিন দেড় লাখ টাকার ইফতারি বিক্রি করেন। বিশেষ করে তার দোকানের সুস্বাদু পেঁয়াজুর খ্যাতি মানুষের মুখে মুখে; গাজীপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে হাজারো মানুষ এখানে আসে কেবল তার তৈরি পেঁয়াজু ও ইফতার সামগ্রী পরখ করতে। এভাবে পেঁয়াজু বিক্রি করে মাসুদ এখন কোটিপতি।
প্রথমদিকে ছোট্ট পরিসরে শুরু হলেও, সময়ের ব্যবধানে দোকানের কার্যক্রম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে পেঁয়াজু বিক্রি। তবে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ইফতারসামগ্রী বিক্রি। আর এসব পরিচালনায় ২০-২৫ জন কর্মচারী বিরতিহীন কাজ করছেন। ৩ জন ইফতারি বিক্রি করেন। ১৫ জন দোকানের পাশেই নানা কাজ করেন; কেউ পেঁয়াজ কাটছে, কেউ-বা আলু, বেগুনী চপ বানাচ্ছেন। আবার কেউ বড় পাত্রে করে ইফতারি নিয়ে আসছে দোকানে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা মারা যাওয়ার পর ৬ বোন, ২ ভাই ও মা সহ ৯ জনের দায়িত্ব এসে পড়ে মাসুদের কাঁধে। সংসারের হাল ধরতে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে ফুটপাতেই পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন।
মাসুদের সফলতার গল্পও বেশ লম্বা। পেঁয়াজু বিক্রি করে জায়গা-জমি কিনেছেন। গড়েছেন নিজের স্থায়ী বাসভবন। পাশাপাশি বোনদেরও বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তার দোকানে কাজ করেন প্রায় ২০-২৫ জন কর্মচারী।
১০ বছর যাবত তার দোকানে পেঁয়াজু বিক্রি করছেন বাবু। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করি। এখানে কাজ করে ১৮ হাজার টাকা বেতন পাই। সেই বেতনে পরিবার নিয়ে ভালোই আছি।
দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন বলেন, ২০ বছর ধরে এই দোকানে কাজ করছি। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তবে রোজার মধ্যে দেড় লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয় দিনে। এখানে কাজ করে তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। মাসে এখান হতে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পাই।
স্থানীয় চা বাগান এলাকার বাসিন্দা সুলতানা খাতুন বলেন, এখানে তৈরি চা ও ইফতারসামগ্রী তুলনামূলক ভালো। কোন ধরনের ময়দা বা ভেজাল কিছু দেয় না। যার কারণে আমরা দূর থেকেও এখানে ইফতারি কিনতে এসেছি।
দোকানটির মালিক মাসুদ খান বলেন, ৩০ বছর ধরে ফুটপাতে পেঁয়াজু বিক্রি করি। পেঁয়াজুর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। তবে রমজানে এই বিক্রি বেড়ে যায় অনেক। প্রতিদিন ১ থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত বিক্রি হয় পেঁয়াজু ও ইফতারসামগ্রী। একটা সময় অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু হাল ছাড়িনি। এই ব্যবসা করে বোনদের বিয়ে দিয়েছি, হোটেল করেছি, বাড়িতে বিল্ডিং করেছি। এখন আমার দোকানে ২০-২৫ জন কর্মচারী কাজ করে। আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো আছি এখন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।