জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ শুরু করেছে সরকার। জুন শেষে ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। জুলাই শেষে যার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সরকার ব্যাংকঋণ পরিশোধ করেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইদানীং সরকারের বড় বড় প্রকল্পতে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে টাকার খুব বেশি প্রয়োজন হচ্ছে না সরকারের। বাজেট ঘাটতি পূরণে প্রতি বছরই সরকার একটি বড় অঙ্কের ঋণ নেয় ব্যাংক থেকে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুর মাস অর্থাৎ জুলাই শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ বেড়েছে। অপরদিকে জুলাই শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ আগের বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে যাওয়া এবং রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তারপরও সমাপ্ত অর্থবছরে এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ বাড়তি ব্যয় মেটাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আট হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। সরকারের বর্তমান ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতির চাপ ও বিনিয়োগে নানা শর্তের কারণে কমে গেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ফলে আগের কেনা সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির পর যে হারে ভাঙানো হচ্ছে, সেই হারে নতুন বিনিয়োগ বাড়েনি। যার কারণে সমাপ্ত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে; তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধে বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে নেমেছে।
সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই অর্থবছরে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কোনো ঋণ পায়নি।
উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের চাপে মূল ও মুনাফাসহ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির নেতিবাচক চিত্রের কারণে ব্যাংকঋণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের বেশি ঋণ নেওয়া দুই কারণে খারাপ। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যায়। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিলে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়ে। এর ফলে ভুক্তভোগী হন ভোক্তারা অর্থাৎ সাধারণ মানুষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।