বিনোদন ডেস্ক : কয়েক দিন আগে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন হয়েছেন। এ ঘটনার পর ফুঁসে উঠেছেন কলকাতার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। টলিউডের অভিনয়শিল্পীরাও এতে যোগ দিয়েছেন।
আরজি কর কাণ্ডের পর রাতে নারীদের নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তার মধ্যে অন্যতম হলো— রাতের শিফটে যথাসম্ভব নারীদের ডিউটি বাদ রাখা। এ বিষয় নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি রাতে নারীদের নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না? এ নিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে কথা বলেছেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য।
উদাহরণ টেনে অপরাজিতা আঢ্য বলেন, “আমাদের তো রাতে বহু শুটিং হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্র বা করপোরেটেও রাতে নারীদের কাজ করতে হয়। আমার ননদ একটা সময় চাকরি থেকে রাত ২টায় বাড়ি ফিরতেন। বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন। তাই রাতের শিফট থাকত। কিন্তু ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয়, রাত ৯টার পর বাড়ির বাইরে থাকবে না। রাত ৯টার পরে ‘ভদ্র’ বাড়ির মেয়েরা নাকি বাড়ির বাইরে থাকে না। আমার মধ্যেও এই শিক্ষার বীজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মনে মনে আমার রাতে বেরোতে ইচ্ছে করত। বিয়ের পর কলকাতায় আসার পর আমার ধারণা পরিবর্তন হয়।”
স্কুল জীবনে ব্যাগ পিঠে নয়, বুকে রাখতে শেখানো হতো অপরাজিতাকে। সেই স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলে শেখানো হতো, ব্যাগ পিঠে নয়, বুকের কাছে ধরে নিয়ে যাবে। যাতে কেউ গায়ে হাত না দিতে পারে। কিন্তু এখন তো কাজের ধারা বদলে গিয়েছে। বাবা-মায়েরা মেনে নিয়েছেন। তারা বুঝতে পারছেন, রাতেও মেয়েরা কাজ করবে। আমরা চাই, আমাদের পরের প্রজন্ম আরো সুস্থ ও সাবলীলভাবে বাঁচুক। সেখানে নারীদের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা আসছে। অর্থাৎ আমার শহরেই কোনো সমস্যা রয়েছে।”
রাত ১২টার পর অনুষ্ঠান করতে নিরাপদ বোধ করেন না অপরাজিতা। তা উল্লেখ করে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘গ্রামে অনুষ্ঠান করতে যেতে হয়। আমি রাত ১২টার পরও অনুষ্ঠান করি না। সেটা বলাই থাকে। এমন অনেক দৃশ্য দেখতে হয়, যাতে আমি নিরাপদ বোধ করি না। তাই আমি নিজে থেকে যাই না।’
ছোট পোশাক পরার কারণে নারীরা ধর্ষিত হয়, এমন ভাবনার সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করে অপরাজিতা আঢ্য বলেন, ‘লোকে বলে, ছোট পোশাক পরার জন্য নাকি ধর্ষণ হয়। আমি তো শুনিনি ছোট পোশাক পরে কেউ ধর্ষিত হয়েছেন। বরং শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরেই ধর্ষণের শিকার হওয়ার খবর শুনেছি। এমনকি দেড় বছরের শিশু বা ৭৬ বছরের বৃদ্ধাকেও ধর্ষণ করা হয়েছে। মানুষের বিকৃত মানসিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলা হয়। এই ধারণা মেয়েদেরই আন্দোলন করে ভেঙে ফেলতে হবে। অন্য কেউ করে দেবে না।’
নিজের অধিকারের জন্য মেয়েদের লড়ার আহ্বান জানিয়ে অপরাজিতা আঢ্য বলেন, “ভালোবাসা, সম্মান নিজেকে অর্জন করতে হয়। তাই রাতে মেয়েরা কাজ করবে না, এই ধারণাও ভাঙতে হবে। চৈতিদি (চৈতি ঘোষাল) ‘এক আকাশের নিচে’ ধারাবাহিক চলার সময় বলেছিলেন, ‘যে দিন হাওড়া স্টেশন থেকে রাতে হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারব, সে দিনই নিজেকে স্বাধীন বলে মনে করব।’ মেয়েরা যাদের জন্য নিরাপত্তা পাচ্ছে না, তাদের ঘরে থাকতে বলা হোক। কিন্তু নিজের অধিকারের জন্য মেয়েদের লড়তেই হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।