শুরুর কথা: সে দিন সন্ধ্যায় রাব্বি, আমার কুকুরছানা, অস্বাভাবিক নিস্তব্ধ হয়ে গেল। খেলতে চায় না, খেতেও চায় না। চোখে তার অদ্ভুত এক দুর্বলতা। সেই মুহূর্তে বুঝেছিলাম, পোষা মানে শুধু আদর নয়, এক গভীর দায়িত্বের সম্পর্ক। বাংলাদেশের শহুরে ব্যস্ততায়, গ্রামীণ উঠোনে, কোটি কোটি বাঙালির জীবনে পোষা প্রাণী হয়ে উঠেছে পরিবারের অপরিহার্য সদস্য। কিন্তু পোষা প্রাণীর যত্ন কিভাবে নিতে হয় – এই প্রশ্নের উত্তর জানা কতটা জরুরি, সেটা রাব্বির সেই অসুখের রাতেই টের পেয়েছিলাম। তাদের এই নীরব ভালোবাসার বিনিময়ে প্রাপ্য সঠিক যত্নটুকুই দিতে হবে আমাদের। আজকের এই গাইড শুধু তথ্য নয়, আপনার পোষার প্রতি ভালোবাসারই আরেক রূপ। চলুন জেনে নেই, কিভাবে দিতে পারেন আপনার প্রিয় সদস্যটির জন্য সর্বোত্তম যত্ন।
পোষা প্রাণীর যত্ন কিভাবে নিতে হয়: মৌলিক চাহিদা ও নিরাপদ পরিবেশ
পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া শুরুতেই দাবি করে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর গভীর উপলব্ধি। শুধু পেট ভরানো বা ছাদে রাখাই যথেষ্ট নয়। প্রাণী বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ইসলামের মতে, “প্রতিটি প্রাণীরই রয়েছে নির্দিষ্ট শারীরিক ও মানসিক চাহিদার তালিকা। সঠিক পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া মানে সেই তালিকাটি পূরণের নিশ্চয়তা দেওয়া।” যেমন:
- খাদ্য ও পানি: বয়স, প্রজাতি, স্বাস্থ্য ও শারীরিক সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে খাবারের পরিমাণ ও গুণগত মান। একটি প্রাপ্তবয়স্ক কুকুরের পুষ্টি চাহিদা আর কুকুরছানার এক নয়। মাছি বা মশার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে খাবার ও পানির পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করুন।
- বাসস্থান: নিরাপদ, আরামদায়ক ও পরিষ্কার বাসস্থান অপরিহার্য। কুকুরের জন্য পর্যাপ্ত ছায়াযুক্ত স্থান, বিড়ালের জন্য উঁচুতে ওঠার জায়গা, পাখির জন্য যথেষ্ট বড় খাঁচা প্রয়োজন। আবহাওয়া ও প্রজাতি অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের গরমে পোষা প্রাণীর জন্য পর্যাপ্ত ছায়া ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করুন।
- নিরাপত্তা: বাড়ির ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। জানালা, বারান্দা সুরক্ষিত রাখুন, বিষাক্ত গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার, ক্ষুদ্র জিনিসপত্র (যা গিলে ফেলতে পারে) দূরে রাখুন। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ত শহরে পথচলা কুকুরের জন্য মাইক্রোচিপ লাগানো বা পরিচয় ট্যাগ ব্যবহার করা জরুরি। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (https://dls.gov.bd) পোষা প্রাণী নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত গোসল (প্রয়োজন অনুসারে), দাঁত ব্রাশ করা, নখ কাটা, কান পরিষ্কার করা ও চুল আঁচড়ানো স্বাস্থ্যবিধির অংশ। বিড়াল নিজেই পরিষ্কার রাখতে পারদর্শী, তবে লম্বা লোমের বিড়ালের নিয়মিত আঁচড়ানো প্রয়োজন। খাঁচা, বিছানা, খাবারের পাত্র নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করুন।
পোষা প্রাণীর পুষ্টি ব্যবস্থাপনা: শুধু ভরপেট নয়, সুষম খাবার
পোষা প্রাণীর যত্নের অন্যতম স্তম্ভ হলো সঠিক পুষ্টি। ভুল খাদ্যাভ্যাস মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে। বাংলাদেশ পোষা প্রাণী মালিক সমিতির (BPPOS) ২০২৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৪০% পোষা প্রাণী মালিক তাদের প্রাণীর সঠিক পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নন।
- প্রজাতি-নির্দিষ্ট খাদ্য: কুকুরের খাবার বিড়ালকে দেওয়া বিপজ্জনক। বিড়ালের প্রোটিন, টাউরিন ও ভিটামিন-এ এর চাহিদা কুকুরের চেয়ে ভিন্ন। খরগোশ, গিনিপিগ বা পাখির খাদ্যতালিকা সম্পূর্ণ আলাদা। সবসময় প্রজাতি-নির্দিষ্ট উচ্চমানের বাণিজ্যিক খাবার বেছে নিন।
- বয়স ও জীবনযাত্রা অনুযায়ী: কুকুরছানা/বিড়ালছানার খাবারে বেশি প্রোটিন ও ক্যালরি থাকে বৃদ্ধির জন্য। বয়স্ক বা কম সক্রিয় প্রাণীর খাবারে ক্যালরি কম থাকে। গর্ভবতী বা ডায়াবেটিক প্রাণীর জন্য বিশেষ ডায়েট প্রয়োজন।
- ঘরে তৈরি খাবার: সতর্কতার সাথে! শুধু ভাত-মাংস যথেষ্ট নয়। পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা কঠিন। পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া ঘরে তৈরি খাবার দীর্ঘমেয়াদে দেবেন না। কিছু মানবখাদ্য (চকোলেট, আঙুর, পেঁয়াজ, রসুন, কফি) পোষা প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপুষ্টি বিভাগের গাইডলাইন (https://bau.edu.bd) ঘরে তৈরি খাবারের সুষম ফর্মুলা দিতে সাহায্য করতে পারে।
- খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: স্থূলতা পোষা প্রাণীর অন্যতম বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্যাকেটের নির্দেশনা ও পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ নির্ধারণ করুন। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিন, সারাদিন বাটি ভরে রাখবেন না।
- পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি: সবসময় পরিষ্কার, তাজা পানি সহজলভ্য রাখুন। বিশেষ করে গরমে পানিশূন্যতা রোধ করুন।
পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা: প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা
পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া মানে অসুস্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা নয়, অসুস্থতা প্রতিরোধ করা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান অপরিহার্য।
- পশুচিকিৎসকের সাথে সম্পর্ক: আপনার পোষার জন্য একজন বিশ্বস্ত পশুচিকিৎসক (ভেটেরিনারিয়ান) বেছে নিন। শুধু অসুখে নয়, বছরে অন্তত একবার রুটিন চেকআপের জন্য নিয়ে যান। এর মাধ্যমে গোপন অসুখ (কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিস) শনাক্ত করা যায়। ঢাকা ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা স্থানীয় ভালো ক্লিনিক খুঁজে নিন।
- টিকাদান সূচী (Vaccination): এটা জীবনরক্ষাকারী। পারভো ভাইরাস, ডিস্টেম্পার, রেবিস (জলাতঙ্ক) এর মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করে। কুকুরছানা/বিড়ালছানার জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচীতে টিকা দিতে হবে এবং বুস্টার ডোজ নিতে হবে। বাংলাদেশে জলাতঙ্ক একটি বড় সমস্যা, তাই রেবিসের টিকা অত্যাবশ্যক। আপনার ভেটেরিনারিয়ান একটি কাস্টমাইজড টিকাকরণ চার্ট দেবেন।
- কৃমিনাশক ও পরজীবী নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ (ডিওয়ার্মিং) দিতে হবে। বাহ্যিক পরজীবী যেমন উকুন, আঁতুড়, মাছি নিয়ন্ত্রণে ফ্রন্টলাইন বা অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করুন। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পরজীবীর আক্রমণ বেশি হয়, তাই প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর ডিওয়ার্মিং দিতে হবে।
- বন্ধ্যাকরণ/নির্বীজন (Neutering/Spaying): শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা রোধই নয়, এটি স্তন ক্যান্সার, জরায়ুর সংক্রমণ (পাইওমেট্রা), প্রস্টেট সমস্যা এবং কিছু আচরণগত সমস্যা (আগ্রাসন, পালানো) কমাতে সাহায্য করে। উপযুক্ত বয়সে (সাধারণত ৬-৯ মাস) এই পদ্ধতি করানো উচিত। বাংলাদেশে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে।
- স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিতকরণ: আপনার পোষার স্বাভাবিক আচরণ ও শারীরিক অবস্থা জানুন। নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে ভেটেরিনারিয়ানের শরনাপন্ন হন:
- খাওয়া-দাওয়া বা পানিতে অনীহা
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা নিস্তেজ ভাব
- বমি বা ডায়রিয়া (বিশেষ করে রক্ত থাকলে)
- শ্বাসকষ্ট বা কাশি
- প্রস্রাব বা পায়খানায় অস্বাভাবিকতা (রক্ত, কষ্ট হওয়া)
- চুলকানি, চামড়ায় লাল দাগ বা চুল পড়া
- খোঁড়ানো বা চলাফেরায় অস্বস্তি
- আচরণে আকস্মিক পরিবর্তন (আগ্রাসন, ভয়)
পোষা প্রাণীর মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিকীকরণ: সুখী প্রাণী, সুস্থ প্রাণী
পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ বা একাকীত্ব অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
- ব্যায়াম ও খেলাধুলা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত ব্যায়াম প্রাণীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কুকুরের জন্য নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো বা খেলার সময় দরকার। বিড়ালের জন্য ইন্টারেক্টিভ খেলনা (দড়ি, লেজওয়ালা খেলনা), স্ক্র্যাচিং পোস্ট, ক্যাট টাওয়ার প্রয়োজন। খরগোশ বা গিনিপিগের জন্য নিরাপদে দৌড়ানোর জায়গা প্রয়োজন।
- মানসিক উদ্দীপনা: খেলনা (পাজল ফিডার, চিউ টয়), নতুন কৌশল শেখানো, লুকোচুরি খেলা (বিড়ালের জন্য) মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। বিরক্তিকর আচরণ (অতি ঘেউ ঘেউ করা, জিনিসপত্র কামড়ানো) কমাতে সাহায্য করে।
- সামাজিকীকরণ (Socialization): অল্প বয়স থেকেই (কুকুরছানা/বিড়ালছানা) বিভিন্ন মানুষ, প্রাণী, পরিবেশ ও শব্দের সাথে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করা উচিত। এতে ভবিষ্যতে ভয় বা আগ্রাসন কম হয়। ঢাকার মত শহরে পার্ক বা পোষা-বান্ধব স্থানে নিয়ে যাওয়া ভালো অভিজ্ঞতা দিতে পারে (তবে সর্বদা লিশ বা হার্নেসে রাখুন)।
- আবেগ ও বন্ধন: আপনার পোষা প্রাণীর সাথে মানসম্মত সময় কাটান। আদর করুন, কথা বলুন, একসাথে বসুন। তাদের সাথে ইতিবাচক আচরণ করুন (রিওয়ার্ড-বেজড ট্রেনিং)। শাস্তি (বিশেষ করে শারীরিক) কখনোই কার্যকর বা নৈতিক নয়, বরং ভয় ও আগ্রাসন সৃষ্টি করে। আপনার ভালোবাসা ও মনোযোগই তাদের মানসিক সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।
পোষা প্রাণীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি প্রস্তুতি
পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া মানে জরুরি অবস্থায় কী করতে হবে তা জানা। প্রস্তুত থাকাটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
- প্রাথমিক চিকিৎসা কিট: বাড়িতে একটি পোষা-বান্ধব ফার্স্ট এইড কিট রাখুন। এতে থাকা উচিত:
- গজ ব্যান্ডেজ, রোলার ব্যান্ডেজ, অ্যাডহেসিভ টেপ
- জীবাণুনাশক (বেটাডাইন/ক্লোরহেক্সিডিন সলিউশন – হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নয়)
- স্যালাইন সলিউশন (চোখ ধোয়ার জন্য)
- কাঁচি, টুইজার্স
- থার্মোমিটার (পশুদের জন্য, রেক্টাল)
- ইলেক্ট্রোলাইট পাউডার (ORS – পানিশূন্যতার জন্য)
- মুচমুচে কুকুরবিস্কুট বা প্রিয় খাবার (স্ট্রেস কমাতে)
- আপনার ভেটেরিনারিয়ান ও নিকটস্থ ইমার্জেন্সি ক্লিনিকের ফোন নম্বর
- সাধারণ সমস্যা ও করণীয়:
- ক্ষত: পরিষ্কার পানি ও জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, চেপে ধরে রক্ত পড়া বন্ধ করুন, ব্যান্ডেজ করুন (যদি সম্ভব হয় এবং প্রাণী না কামড়ায়)। দ্রুত ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিন।
- পোড়া: ঠান্ডা পানি চালান, বরফ সরাসরি লাগাবেন না। ঢেকে রাখুন, ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিন।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: শ্বাসনালী খোলা আছে কিনা দেখুন, সিপিআর (পশুদের জন্য প্রশিক্ষণ নিন) দিতে পারেন যদি শ্বাস না নেয় ও হৃদস্পন্দন না থাকে। দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নিন।
- বিষক্রিয়া: প্রাণীটিকে বিষের উৎস থেকে সরান। মুখ ধুয়ে দিতে পারেন যদি বিষ মুখে থাকে (তবে গলায় ঢোকাবেন না)। বিষের প্যাকেট বা নমুনা সাথে নিন। তৎক্ষণাৎ ভেটেরিনারিয়ানের কাছে যান। বাংলাদেশে পশু বিষক্রিয়া হেল্পলাইন নম্বর জেনে রাখুন (যদি থাকে)।
- জরুরি প্রস্তুতি: প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়) বা অন্য কোন জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন:
- একটি “গো-ব্যাগ” প্রস্তুত রাখুন: কয়েক দিনের খাবার, পানি, ওষুধ, মেডিকেল রেকর্ড, ছবি, প্রথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, বিছানা/বাহক।
- নিশ্চিত করুন আপনার পোষার পরিচয় (মাইক্রোচিপ/ট্যাগ) আছে।
- জরুরি অবস্থায় আশ্রয় নেওয়ার জায়গা আগে থেকে জেনে রাখুন।
জেনে রাখুন (FAQs)
- প্রশ্ন: আমার কুকুরছানার টিকা কখন থেকে শুরু করব এবং কোন কোন টিকা দেব?
উত্তর: সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহ বয়স থেকে কুকুরছানার টিকা শুরু হয়। প্রাথমিক সিরিজে পারভো, ডিস্টেম্পার, হেপাটাইটিস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা (DHPP) এবং রেবিস (জলাতঙ্ক) টিকা অন্তর্ভুক্ত থাকে। টিকাগুলো ৩-৪ সপ্তাহ পরপর ১৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত দেওয়া হয়। তারপর প্রতি বছর বা প্রতি তিন বছর পরপর (ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী) বুস্টার ডোজ দিতে হবে। আপনার স্থানীয় ভেটেরিনারিয়ান একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচী দেবেন। - প্রশ্ন: বিড়ালকে কোন খাবারগুলো একদম দেওয়া যাবে না?
উত্তর: বিড়ালের জন্য কিছু খাবার অত্যন্ত বিপজ্জনক: চকোলেট, কফি, ক্যাফেইন, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা (রাও/কাঁচা), আঙুর ও কিশমিশ, এলকোহল, জাইলিটল (চিনিমুক্ত গাম/মিঠাইতে থাকে), কাঁচা ডিম/মাংস/হাড়, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার। এগুলো বিষক্রিয়া, রক্তাল্পতা বা অন্যান্য গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। - প্রশ্ন: পাখির খাঁচা কিভাবে নিয়মিত পরিষ্কার করব?
উত্তর: প্রতিদিন খাবার ও পানির পাত্র পরিষ্কার করুন, পুরানো খাবার ফেলে দিন, খাঁচার নীচের ট্রে পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার সম্পূর্ণ খাঁচা পরিষ্কার করুন: পাখিকে নিরাপদ স্থানে সরান, সমস্ত খেলনা, চঞ্চ, পাত্র ইত্যাদি বের করুন। গরম সাবান পানি দিয়ে খাঁচা ও সামগ্রী ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। জীবাণুনাশক ব্যবহার করলে তা পাখির জন্য নিরাপদ কিনা নিশ্চিত হোন এবং ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। শুকনো অবস্থায় সবকিছু আবার সাজিয়ে দিন। - প্রশ্ন: আমার পোষা প্রাণী অতিরিক্ত চুল পড়ছে, কারণ কী হতে পারে?
উত্তর: ঋতু পরিবর্তনে কিছু চুল পড়া স্বাভাবিক (বিশেষ করে কুকুর-বিড়ালের)। তবে অতিরিক্ত চুল পড়ার পেছনে থাকতে পারে: পুষ্টির অভাব (ভিটামিন, মিনারেল), চর্মরোগ (ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, পরজীবী), অ্যালার্জি (খাদ্য, পরিবেশ), হরমোনের সমস্যা, মানসিক চাপ বা ভয়, অতিরিক্ত গোসল বা ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার। সঠিক কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন। - প্রশ্ন: পোষা প্রাণীকে কিভাবে ভ্রমণের সময় নিরাপদ রাখব (বাস/ট্রেন/গাড়িতে)?
উত্তর: সর্বোত্তম উপায় হল একটি সুরক্ষিত, বায়ু চলাচলযোগ্য পোষা ক্যারিয়ার বা বাহক ব্যবহার করা। ভ্রমণের আগে হালকা খাবার দিন, প্রচুর পানি দিন। বাহকের ভেতর পরিচিত খেলনা বা কম্বল রাখুন। গাড়িতে বাহকটি সিট বেল্ট দিয়ে আটকান বা ট্রাঙ্কে নয়। বিমানে ভ্রমণের নীতিমালা আগে জেনে নিন। বাংলাদেশে গণপরিবহনে পোষা প্রাণী নেওয়ার নিয়ম কঠোর, তাই ব্যক্তিগত গাড়ি বা অনুমতিপ্রাপ্ত সার্ভিস ব্যবহার করা ভালো। ভ্রমণের সময় পানি ও বিরতির ব্যবস্থা রাখুন। - প্রশ্ন: কোথায় ভালো পশুচিকিৎসক পাবো? খরচ কেমন হতে পারে?
উত্তর: বড় শহরগুলোতে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট) ভালো ভেটেরিনারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পাওয়া যায়। স্থানীয় পোষা প্রাণী মালিকদের কাছ থেকে রেফারেন্স নিন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ) ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (CVASU) হাসপাতালগুলো উৎকৃষ্ট সেবা দেয়। খরচ সমস্যা ও চিকিৎসার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয় (রুটিন চেকআপ: ৫০০-১৫০০ টাকা, টিকা: ৩০০-১০০০ টাকা/ডোজ, সার্জারি: কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা)। কিছু এনজিও বা ট্রাস্ট কম খরচে বা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়। পোষা প্রাণীর জন্য জরুরি ফান্ড গড়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার পোষা প্রাণী আপনার বিশ্বাসের প্রতীক, নিঃশর্ত ভালোবাসার উৎস। তাদের মুখের সেই হাসি, চোখের সেই উজ্জ্বলতা, লেজের সেই আনন্দিত নাচুনি পুরোটাই নির্ভর করে আপনার দেওয়া যত্নের উপর। এই গাইডে আলোচিত পোষা প্রাণীর যত্ন কিভাবে নিতে হয় তার প্রতিটি দিক – সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক উদ্দীপনা, জরুরি প্রস্তুতি – মিলেই তৈরি করে একটি সুস্থ, দীর্ঘ ও সুখী জীবনের ভিত্তি। মনে রাখবেন, আপনি তাদের সমগ্র জগৎ। তাদের সুখ-দুঃখ, স্বাস্থ্য-অসুস্থতা সম্পূর্ণভাবে আপনার হাতেই। আপনার ছোট্ট প্রচেষ্টাই পারে তাদের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে। আজই শুরু করুন আরও সচেতন, আরও যত্নশীল হওয়ার অভিযাত্রা। আপনার প্রিয় পোষার জন্য এই গাইড হোক সেই যাত্রার সঙ্গী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।