জুমবাংলা ডেস্ক :১২ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে নওশাদের। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সংসারে শুরু হয় তার আর্থিক টানাপোড়েন। এসময় দেলু হিজড়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে চম্পা ওরফে স্বপ্না হিজড়া বনে যান।
এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়েন রাকিব হাসান শাওন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। ঢাকার আশুলিয়ার এনায়েতপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। এক পর্যায়ে প্রেমের বিরোধের জেরে ২০২১ সালে রাকিবকে খুন করেন স্বপ্না। ঘটনার দুই বছর পর গত ১৭ অক্টোবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হিজড়া পল্লি থেকে স্বপ্নাকে গ্রেফতার করে পিবিআই। তিন দিনের রিমান্ডে বেরিয়ে আসে লিঙ্গ পরিবর্তনকারী একটি চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন এক গ্রাম্য পল্লি চিকিৎসক।এ ঘটনায় চক্রের সদস্য দেলু হিজড়াকেও ২৩ অক্টোবর জামালপুরের নারায়ণপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পিবিআই।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি জানান, ২০২১ সালে এনায়েতপুর গ্রামে বস্তাবন্দি ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। ২ মাস পর মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আনোয়ার হোসেন, ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের মালিকের কাছ থেকে জানতে পারেন লাশ পাওয়ার পরদিন তার বাসার নিচতলার ভাড়াটিয়া চম্পা নামে এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, বাবার অসুস্থতার কথা বলে গ্রামের বাড়ি জামালপুরে চলে যান। ওই ঠিকানায় চম্পা হিজড়া নামের একজনের বাড়ি আছে যার আগের নাম নওশাদ। প্রায় ২০ বছর আগে নওশাদের বাবা-মা মারা গেছেন এবং এরপর ঢাকায় বসবাস করেন। বাবা-মা না থাকা স্বত্ত্বেও লাশ পাওয়ার পরদিন নওশাদ ওরফে চম্পা হিজড়া বাসা ত্যাগ করে গ্রামে চলে যাওয়ায় সন্দেহ হয়। পরে এক পর্যায়ে বরগুনার বামনা থানায় রাকিব হাসান শাওন নামে একটি ঠিকানা পাওয়া যায়। তার বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার ছেলে রাকিব ঢাকার আশুলিয়ায় এক হিজড়ার সঙ্গে বসবাস করে। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ছেলের লাশ নিশ্চিত হন তিনি।
বনজ কুমার বলেন, পিবিআই ঢাকা জেলা তদন্ত টিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নওশাদ ওরফে চম্পা হিজড়াকে গ্রেফতারের জন্য তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এরপর জামালপুর, শেরপুর বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুরসহ গাইবান্ধা জেলার হিজড়া পল্লিতে অভিযান চালানো হয়। এদিকে, নওশাদ ওরফে চম্পা হিজড়া তার নাম পরিবর্তন করে স্বপ্না হিজড়া নামে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে হিজড়া পল্লিতে আত্নগোপন করেন। গত ১৭ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
হত্যার ঘটনা নিয়ে পিবিআই প্রধান আরও বলেন, খুলনার লোহাপাড়ায় একজন ডাক্তারের মাধ্যমে অপারেশন করে মেয়ে হিজড়া হন রওশাদ। এরপর রাকিবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালে ঘটনার দিন রাকিব চম্পার কাছে এক হাজার টাকা চায়। টাকা না দেওয়ায় রাকিব তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এসময় নওশাদ ওরফে চম্পা রাকিবের ফোনকল রিসিভ করে জানতে পারেন, রিপা নামে আরেকজনের সঙ্গে রাকিবের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটির জেরে চম্পা রাকিবের গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর নওশাদ তার গুরুমা রুমি হিজড়ার বাসা থেকে চটের বস্তা নিয়ে এসে রাকিবের লাশ ভরে পাশের রুমে রেখে গুম করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ঘটনার ৫ দিন পর ভারী বৃষ্টির কারণে সন্ধ্যার পরে এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় বস্তায় ভরে রাখা লাশ বাসার পাশে ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেয়।
লিঙ্গ পরিবর্তনকারীদের বিষয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, যশোরের এক গ্রাম্য ডাক্তার এমন আরও অনেককেই হিজড়া বানিয়েছেন। এটির তদন্ত চলছে। লিঙ্গ পরিবর্তন করতে তাকে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হয়। আর পুরো চিকিৎসায় ১ লাখ টাকা নিতেন ওই চিকিৎসক। আর এই পুরো চক্রটিকে ভারত থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন তাদেরই এক গুরুমা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।