জুমবাংলা ডেস্ক: প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের ধারক ও বাহক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। এটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে পৌরসভায় অবস্থিত। এই মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও এটি ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন। এই মসজিদ অন্য একটি কারণে বিখ্যাত এবং কৌতূহল-উদ্দীপক। সেটি হলো, ৯৫ বছর ধরে একটানা কোরআন তিলাওয়াত চলছে এই মসজিদে।
জনশ্রুতিতে রয়েছে, সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ নামে দুই ভাই ষোড়শ শতাব্দীতে ধনবাড়ির অত্যাচারী জমিদারকে পরাজিত করার পর টাঙ্গাইলের এই অঞ্চলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাংলাভাষার প্রথম প্রস্তাবক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যুক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ধনবাড়ির বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রায় ১১৫ বছর আগে এ মসজিদটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন।
পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নওয়াব শাহী জামে মসজিদের সংস্কার হয়েছে অনেক। অনেক কিছুই বদলেছে। তবে ৯৫ বছরেও বদলায়নি একটি রীতি। তা হলো— নামাজের সময় ছাড়া এক মিনিটের জন্যও এ মসজিদে বন্ধ হয়নি কোরআন তিলাওয়াত। পালাক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত হাফেজরা এ মসজিদে কোরআন তিলাওয়াত করে চলেছেন। বর্তমানে কোরআন তিলাওয়াত ও খতিবের দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচ জন। ১৯২৭ সালে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এ মসজিদে সার্বক্ষণিক কোরআন তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করেন। ১৯২৯ সালে তিনি মারা গেলেও চলমান রয়েছে তিলাওয়াত।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নওয়াব শাহী জামে মসজিদটি প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপরে অবস্থিত। সংস্কারের আগে মসজিদটি ছিল আয়তাকার। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার (৪৫ ফুট) এবং প্রস্থ ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট) কিন্তু সংস্কারের পর মসজিদটির আকার রীতিমতো পরিবর্তিত হয়ে যায়।বর্তমানে এটি একটি বর্গাকৃতির মসজিদ এবং সাধারণ তিনগম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোঘল মসজিদের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর মসজিদের প্রাচীনত্ব কিছুটা লোপ পেলেও এর চাকচিক্য ও সৌন্দর্য অনেক বেড়েছে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ, এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে।মসজদিটির চর্তুদিক থেকে ৪টি প্রবেশ পথ এবং ৯টি জানালা রয়েছে। ৩৪টি ছোট ও বড় গম্বুজ রয়েছে। বড় ১০টি মিনারের প্রত্যেকটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট সুউচ্চ। মসজিদের দোতলার মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। মসজিদটির ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট প্রস্থের মেহরাব দেখতে আকর্ষণীয় এবং সুপ্রাচীন। এখানে বসে ইমাম খুতবা পাঠ মসজিদটির অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো সুউচ্চ ৩০ ফুট উচ্চতার মিনারের চূড়ায় ১০টি তামার চাঁদ মিনারের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।মসজিদের সংরক্ষিত কক্ষে শোভা পাচ্ছে ১৮টি হাড়িবাতি। যা নারিকের তৈল দ্বারা আলোর কাজে ব্যবহৃত হতো। রয়েছে মোঘল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড়বাতিও।
মসজিদের ভেতরের দেয়ালে কড়ি পাথরের লতাপাতা আঁকা অসংখ্য রঙিন নকশা ও কড়ি পাথরের মোজাইক করা প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। মসজিদের দেয়ালের বাইরের অংশে রয়েছে সিমেন্ট আর কড়ি পাথরের টোরাকাটা নকশা। মসজিদ নির্মাণে চুন, সুরকি, সাদা সিমেন্ট, কড়ি পাথর, লোহার খাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। এ মসজিদের পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। যেখানে দাফন করা হয়েছে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। মসজিদর পাশে রয়েছে ৭ বিঘা আয়তনের এক বিশাল দীঘি। নবাব নওয়াব আলী মৃত্যুর আগে তার এ স্টেট ওয়াকফ করে যান। ওয়াকফকৃত সম্পদেই মসজিদ ও পাশে অবস্থিত মাদ্রাসা, ঈদগাহ ইত্যাদি পরিচালিত হয়ে আসছে।সুপ্রাচীন এ মসজিদটিতে একসঙ্গে ২০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাচীন আমলের মানুষের ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামি ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন ধারণকারী ধনবাড়ি নওয়াব শাহী মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী এবং সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নওয়াব শাহী জামে মসজিদে একসঙ্গে দুইশ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর বিশাল এক দীঘি মসজিদটির পাশে। মুসল্লিরা অজু করেন সেখানে। আশপাশে সুপ্রশস্থ ও খোলামেলা জায়গাও অনেক। ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় এ মসজিদ, পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসা ও ঈদগাহ। নওয়াব শাহী জামে মসজিদের স্থাপনা বৈচিত্র্য দেখতে ও নিত্যদিনের নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত শুনতে প্রতিদিনই এখানে আসে দর্শনার্থীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।