জুমবাংলা ডেস্ক : পার্বত্য জেলা রাঙামাটির আম, কাঁঠাল, লিচু এবং আনারসসহ অন্যান্য দেশীয় ফলের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। রাঙামাটির পাহাড়গুলোতে এক সময় জুম চাষের আধিক্য থাকলেও আজকাল জুমের পাশাপাশি নানা রকম ফলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে পাহাড়গুলোতে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারসসহ অসংখ্য ফলের চাষ হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে উৎপাদিত মৌসুমি ফলে ভরে গেছে পাহাড়ের বিভিন্না বাজার। রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় সারাদেশে রাঙামাটির ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বোঝাই করে রাঙামাটি শহরের সমতাঘাট, তবলছড়ি, পৌর ট্রাক টার্মিনাল এবং রির্জাভ বাজারে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। সেখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে ট্রাকে করে জেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন।
ফলচাষি এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আম, কাঁঠাল, আনারস এবং লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে চিন্তা রয়েছে।
ফলচাষি কৃপা শার্য চাকমা বলেন, নানিয়ারচর উপজেলা থেকে রাঙামাটি সমতা ঘাটে নিজের বাগানের ১২ হাজার লিচু নৌকায় করে নিয়ে এসেছি। এখানে ১০০ লিচু ৭০ টাকা করে বিক্রি করেছি। গতবারের তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি।
লংগদু উপজেলা থেকে আসা মিন্টু চাকমা বলেন, পাঁচ হাজার কেজি আম নিয়ে এসেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। বেপারিরা ২০ টাকা করে কেজি চাচ্ছেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বোট ভাড়া, ঝুঁড়ি কেনা, শ্রমিক খরচ যা পড়েছে, সব যোগ করলে কেজি প্রতি আমে খরচ পড়ে ৭০ টাকা। এবার কেজি প্রতি ৯০ টাকা করে বিক্রি করতে না পারলে কীভাবে চলবে?
চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির সমতা ঘাটে আসা ফল ব্যবসায়ী গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি ১০০ লিচু ৭০, ৮০ এবং ৯০ টাকা করে নিয়েছি। চট্টগ্রামে গিয়ে এসব বিক্রি করব। অর্থাৎ ফল বুঝে দাম নির্ণয় হয়। আশা করছি, লাভ করতে পারব।
চট্টগ্রামের বটতলী থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, আমি পাঁচ হাজার আম কিনেছি। প্রতি কেজি আম ৪০ টাকা করে পড়েছে। চট্টগ্রামে নিয়ে শ্রমিক খরচ এবং গাড়ি ভাড়াসহ সব খরচ মিলে একটা লাভ ধরে বিক্রি করা হবে।
রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় ২৩ হাজার ৮০০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। ফলন পাওয়া যাবে প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। তিন হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ করা হয়েছে। ফলন পাওয়া যাবে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। এক হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। ফলন পাওয়া যাবে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন। দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। ফলন পাওয়া যাবে প্রায় ৫৮ হাজার মেট্রিক টন।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে হিমাগার থাকলে উদ্বৃত্ত ফল সংরক্ষণ এবং ফলের পচন রোধ করা সম্ভব হতো বলে জানিয়েছেন কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় পাহাড়ে সব ফলেরই ফলন ভালো হয়েছে। যে কারণে এবার আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জেলার বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া জেলায় পেঁপে, কলাসহ আরও অনেক ধরনের ফলের উৎপাদনও হয়েছে ভালো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।