জুমবাংলা ডেস্ক : নিবন্ধন ফি, বিমান ভাড়াসহ হজের প্যাকেজ মূল্য বেশি হওয়ায় হজের প্রাথমিক নিবন্ধনে কোটা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক কোটা পূরণ হবে কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই।
আগামী ৩০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য বারবার তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) পর্যন্ত ২২ হাজার ৫০০ জনের মতো হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। যা কোটার মাত্র ১৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে।আর বাকি রয়েছে মাত্র পাঁচদিন। এ সময় মোট কোটার ২০শতাংশ পূরণ হবে কিনা নিশ্চয়তা নেই। আগামী বছর হজের খরচ এক লাখ টাকা কমানো হলেও এখনও ৮২ শতাংশ হজযাত্রীর কোটা খালি রয়ে গেছে।
এ অবস্থায় আগামী ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত হজের নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়োনোর জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এজেন্সি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা একইসঙ্গে হজের নিবন্ধন, বিমান ভাড়াসহ প্যাকেজমূল্য সমন্বয় করারও দাবি জানিয়েছেন।
এজেন্সি মালিক ও বাংলাদেশ ইসলামী দলের আমির ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, ২০২৪ হজযাত্রীদের ২ লাখ ৫ হাজার করে নিবন্ধনের সময় জমা দিতে হয়েছিল। ২০২৫ সনের হজযাত্রীদের ৩ লাখ টাকা করে জমা দিতে বলা হয়েছে। এত বড় অংকের টাকা হজযাত্রীরা কোনক্রমেরই সংগ্রহ করতে পারছে না। তাছাড়া এবারও বিমান ভাড়া বেশি। সরকার চাইলেই বিমান ভাড়া আরও কমিয়ে হজ প্যাকেজ সমন্বয় করতে পারেন। তাহলে হয়তো নিবন্ধন কোটা পূরণ হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৮০ ভাগ হজযাত্রী কৃষক তারা তাদের খেতের ধান, গম, রবিশস্য যেমন, আলু, বেগুন, শরিষা, পেঁয়াজ বিক্রি করে হজ পালন করেন। কিন্তু ধান, গম, আলু, শরিষাসহ অন্যান্য রবিশস্য ওঠতে পুরো ডিসেম্বর মাস লেগে যাবে। তাই অনতিবিলম্বে ৩০ নভেম্বর এর পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজ নিবন্ধনের টাকা জমাদানের সময় বৃদ্ধি করার জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জানা যায়, চলতি বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। শুরুর পর দু-একজন করে নিবন্ধন করছিলেন। তখন এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, হজের খরচ কত হচ্ছে সেটা না জানলে মানুষ নিবন্ধন করবে না, প্যাকেজ ঘোষণা হলে নিবন্ধনের হার বাড়বে। আগামী বছর হজের খরচ এক লাখ টাকা কমছে। কিন্তু প্যাকেজ ঘোষণার এক মাস হলেও নিবন্ধনে সাড়া মেলেনি। আর পাঁচদিন বাকি থাকলেও কোটার মাত্র ১৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জন হজে যাননি অর্থাৎ কোটার প্রায় ৩৩ শতাংশ খালি ছিল। আগামী বছর কোটার প্রায় অর্ধেক খালি থাকতে পারে বলে মনে করছেন।
প্রাথমিক নিবন্ধনের ফি বেশি হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মানুষ হজের প্রাথমিক নিবন্ধনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানিয়েছেন হজ এজেন্সির মালিকরা।
এ বিষয়ে হাবের সাবেক মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘‘প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা এবার ধরা হয়েছে, সেটা বেশি। প্রাথমিকভাবে এমন প্রস্তুতি মানুষের থাকে না। অনেকেই টাকা রেখেছেন ব্যাংকে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা ওঠানো যাচ্ছে না। ফলে তাদের ইচ্ছা থাকলেও নিবন্ধন করতে পারছেন না। একইভাবে কারও সন্তান হয়তো বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবে। কেউ সম্পত্তি বিক্রি করে, গরু-ছাগল বিক্রি করে হজের খরচ জোগাড় করবেন। অন্য বছর তো শুরুতে বিমান ভাড়ার টাকা দিয়েই প্রাথমিক নিবন্ধন করা যেত। এবার এটা তিন লাখ টাকা করায় নিবন্ধনের জন্য বাধা হয়েছে মনে হচ্ছে।’’
এজেন্সি মালিকদের অন্য গ্রুপ ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দ’-এর সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম যে দুই লাখ টাকা নিয়ে যাতে প্রাথমিক নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। এটা করলেও নিবন্ধনে কিছুটা গতি আসতো।’’
নিবন্ধনের সময় বাড়বে কিনা এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘‘নিবন্ধনের সবশেষ অবস্থা দেখে, উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিবন্ধনের সময় বাড়াবো কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবো।’’
তিনি বলেন, ‘‘হজ হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এটি পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। প্রাথমিক নিবন্ধনের জমা নেওয়া টাকা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেটা শুধু বাংলাদেশ প্রান্তের খরচের জন্য নেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের জন্য সৌদি আরবে খরচের একটা অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। ওই টাকাটা সময়মতো পাঠাতে না পারলে ওখানকার কাজগুলো পিছিয়ে যাবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘গত বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটা তহবিল ছিল, সেখান থেকে সেই টাকাটা পরিশোধ করে পরে সমন্বয় করা হয়েছিল। এবার সেই তহবিলটা নেই। তাই মিনিমাম এ টাকাটা প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে।’’
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৫ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি একলাখ ১৭ হাজার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ হজযাত্রী যাওয়ার কথা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।