আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিরঙ্কুশ জয়ে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল মরেনা পার্টির প্রার্থী ক্লডিয়া শিনবাউম। আগামী ১ অক্টোবর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোরের স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি।
মেক্সিকোর নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, রবিবারের নির্বাচনে ৫৮ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র শিনবাউম।
প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডোরের আস্থাভাজন- মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র ও বিজ্ঞানী ৬১ বছর বয়সি শিনবাউম শুরু থেকেই বামপন্থি রাজনীতি করেছেন। তবে শিনবাউম বিজ্ঞানের মানুষ। শিনবাউম ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকো থেকে ১৯৮৯ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯৫ সালে জ্বালানি প্রকৌশলে (এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিজ্ঞানী শিনবাউম শক্তি, পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর ১০০টিরও বেশি নিবন্ধ এবং দুটি বই লিখেছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলে অবদান রেখেছিলেন এবং ২০১৮ সালে বিবিসির ক্ষমতাধর ১০০ নারীর একজন হিসেবে মনোনীত হন।
পুরো নাম ক্লডিয়া শিনবাউম পারডো। তিনি মেক্সিকো সিটিতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদি পরিবারে ১৯৬২ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা উভয়েই বিজ্ঞানী। তার মা অ্যানি পারডো সেমো একজন জীববিজ্ঞানী এবং মেক্সিকো ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তার বাবা কার্লোস শিনবাউম ইয়োসেলেভিটজ একজন রাসায়নিক প্রকৌশলী ছিলেন। তার ভাই জুলিও একজন পদার্থবিদ।
১৯৮৭ সালে কার্লোস ইমাজ জিসপার্টকে বিয়ে করেন শিনবাউন, তবে ২০১৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এই দম্পতির একটি মেয়ে রয়েছে। ২০২৩ সালে জেসুস মারিয়া তারিবাকে বিয়ে করেন এবং বর্তমানে তার সঙ্গেই সংসার করছেন।
এদিকে মেক্সিকো ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির ছাত্র থাকাকালীন ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিক জীবন শুরু করেন শিনবাউম। ২০০০ সালে মেক্সিকো সিটির সরকারপ্রধান আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোরের মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত হন এবং মেক্সিকো সিটির পরিবেশ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়াদকালে তিনি মেক্সিকো সিটির জন্য একটি ইলেকট্রনিক গাড়ি-নিবন্ধন কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া মেট্রোবাসের প্রবর্তন, ডেডিকেটেড লেনসহ একটি বাস দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম এবং মেক্সিকো সিটির রিং রোড অ্যানিলো পেরিফেরিকোর দ্বিতীয় পর্বের নির্মাণও তদারকি করেন।
লোপেজ ওব্রাডোর ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সচিবালয়ের জন্য তার প্রস্তাবিত মন্ত্রিসভায় শিনবাউমকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে রাজধানী মেক্সিকো সিটির মেয়র নির্বাচিত হন শিনবাউম। মেক্সিকো সিটির মেয়র থাকাকালে করোনা মহামারির কবলে পড়েছিল দেশ। তখন শহরটির ৯০ লাখ বাসিন্দাকে করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে তিনি যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা ছিল সর্বজনীন প্রশংসনীয়। মহামারি মোকাবিলার জন্য শিনবাউমকে ২০২১ সালে উত্তর আমেরিকার বিশ্ব মেয়র পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিল সিটি মেয়র ফাউন্ডেশন।
এদিকে বিবিসি বলছে, শিনবাউমের এই জয় মেক্সিকোর জন্য একটি বড় পদক্ষেপ, একটি দেশ যা তার মাচো সংস্কৃতি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রোমান ক্যাথলিক জনসংখ্যার জন্য পরিচিত, যেখানে ১৯৫৩ সালের আগে জাতীয় নির্বাচনে নারীদের ভোট দেওয়ার অনুমতিও ছিল না।
এদিকে ক্লদিয়া শিনবাউম মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্টর পাশাপাশি ইহুদি পরিবার থেকে আসা দেশটির প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানও হচ্ছেন তিনি। এর আগে মেক্সিকোর বেশির ভাগ প্রেসিডেন্টই ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান।
অন্যদিকে শুধু মেক্সিকো নয় গোটা লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়া প্রথম নারী শিনবাউম। তবে দায়িত্বগ্রহণের পর শিনবাউম যেসব বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোয় চলমান সহিংসতা। নির্বাচনি এক প্রচারণায় শেনবাউম বলেছিলেন, দেশে অপরাধ দমনে প্রেসিডেন্ট ওব্রাডোর যে নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলেছেন, তার পরিধি আরও বাড়াবেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।